তিস্তা সেচ প্রকল্পের ৩৯ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমি এবারও সেচের সুবিধার বাইরে
রংপুর প্রতিনিধি : পানির অভাবে এবারও তিস্তা সেচ প্রকল্প এলাকায় ৩৯ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমি সেচের সুবিধার আওতার বাইরে রয়েছে। নদীতে পানির নিশ্চয়তা না থাকলেও প্রায় ১৫শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে তিস্তা সেচ প্রকল্প সংস্কার ও সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। তবে পানির ন্যায্যতা নিশ্চিত ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ছাড়া বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করাকে কেবল অপচয় বলে মনে করেন নদী নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিরা।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, ১ হাজার ৪শ’ ৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে তিস্তা সেচ প্রকল্প সম্প্রসারণ ও সংস্কার কাজ শেষ হলে ৭০৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেকেন্ডারি ও টারসিয়ারি সেচ ক্যানেলের মাধ্যমে ১ লাখ হেক্টর কৃষি জমিতে পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে। এতে করে প্রতিবছর অতিরিক্ত ১০ লাখ মেট্রিকটন খাদ্য শস্য উৎপাদন করা যাবে।
তিস্তার পানির ওপর নির্ভর করেই ১৯৯০ সালে প্রথম দফায় কাজ শেষ হবার পর ৮৪ হাজার ৩৭৮ হেক্টর কৃষি জমিতে সেচ দেয়ার কথা ছিলো। কিন্তু কাঙ্খিত সে লক্ষ্যমাত্রা এখন পর্যন্ত পূরণ হয়নি। যার মূল কারণ শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা নদী থাকে পানিশূন্য।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৪ সালে ১৮ হাজার হেক্টর, ২০১৫ সালে ১০ হাজার হেক্টর, ২০১৭ সালে ৮ হাজার হেক্টর, ২০২০-২১ সালে ৪০ হাজার হেক্টর, ২০২৩ সালে ৪৫ হাজার হেক্টর ও ২০২৪-৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া হয়েছে।
এই অঞ্চলের ২ কোটি মানুষের জীবন-জীবিকার অন্যতম অবলম্বন প্রমত্তা তিস্তা। বর্ষা মৌসুমে পানি প্রবাহ গড়ে ২ লাখ কিউসেক থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে গড়ে থাকে ২ হাজার কিউসেক। তবে কোনো কোনো সময় তা নেমে আসে ৫শ’ কিউসেকে। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে তিস্তা পাড়ের জনজীবন, হুমকিতে জীববৈচিত্র্য, পরিবেশ ও প্রতিবেশ।
তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী জানান, তিস্তা নদীকে বাঁচাতে হলে সঠিক পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। তিনি জানান, নদী ড্রেজিং করে চ্যানালে সংযুক্ত, গভীর ও জলাধারা নির্মাণ করতে হবে। এছাড়া তিস্তার শাখা নদীগুলোর সাথে সংযোগ ফেরাতে হবে।
আরও পড়ুনতিস্তায় পানি না থাকলে এ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ কী এমন প্রশ্নে উত্তরাঞ্চল পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মো. মাহবুবর রহমান জানান, পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই এ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ওভারকাম করার জন্য যতোটুকু পারা যায় আমরা তা করবো।
মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ড্রেজিংয়ের টার্গেট নিয়েছি। যেখানে নদী ৪-৫ কিলোমিটার বিস্তৃত আছে সেখানে আমরা সেটা ১৬শ’ মিটারে নিয়ে আসবো। এ পরিকল্পনার প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে কিছুটা হয়তো ফিরে পাবো।
রিভারাইন পিপলসের রংপুরের পরিচালক অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, তিস্তার পানি নিশ্চিত করা না হলে তিস্তা সেচ প্রকল্পের পিছনে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে, তা কোন কাজে আসবে না। তিস্তা সেচ প্রকল্প সম্প্রসারণ ও সংস্কার প্রকল্পের কাজ এখন পর্যন্ত ৪০ শতাংশ শেষ হলেও পানির অভাবে বাড়াতে পারেনি প্রকল্পের পরিধি।
সে কারণেই প্রশ্ন ওঠছে, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন কিংবা পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত না করে এ প্রকল্পে এতো টাকা কী কাজে আসবে।
মন্তব্য করুন