স্টাফ রিপোর্টার : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর আজ সোমবার (৫ আগস্ট) বিকেলে কারফিউ চলাকালে শহরের কালিতলায় বগুড়া সদর আসন (৬) এর সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান রিপুর বাসভবন, জেলা আওয়ামী লীগ, ছাত্র ইউনিয়ন ও জেলা জাসদ অফিসে ফের আগুন লাগানো হয়। এছাড়া উদীচী ও বগুড়া থিয়েটার, ময়না হোটেলে ভাঙ্চুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
কবি নজরুল ইসলাম সড়কে সদর থানা ও নবাববাড়ি সড়কের সদর পুলিশ ফাঁড়িতে ব্যাপক ভাঙ্চুর করে আগুন লাগানো হয়। সেই সাথে শহরের জলেশ্বরীতলা এলাকায় পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু ওবায়দুল হাসান ববি, সদর উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন কক্ষ এবং সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সভাপতি শুভাশীষ পোদ্দার লিটনের ব্যক্তিগত অফিস, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আবু সুফিয়ান সফিকের বাড়িতেও ভাঙ্চুর এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
বিক্ষুব্ধ জনতা এসব বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও আগুন লাগায়। নবাববাড়ি সড়কেও পুলিশ প্লাজায় ব্যাপক ভাঙ্চুর করে মালামাল লুট করা হয়েছে। পুলিশ প্লাজা থেকে দামি ঘড়ি, দামি মোবাইল ফোনসহ লাখ লাখ টাকার মালামাল লুট করা হয়েছে। সেই সাথে শহরের সাতমাথায় বাটা শোরুমের কাছে একটি বিদেশি মদের দোকান ও এমএ. খান লেনে বসন্ত নামে আরও একটি মদের দোকানেও হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুট করা হয়।
এদিকে সদর থানার নিয়ন্ত্রণ নেয়াকে কেন্দ্র করে হাজারো জনতার সাথে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। জনতা থানায় ঢিল ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ টিয়ার সেল ও গুলি ছোঁড়ে। বিকেল ৫ টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দুই ঘন্টাব্যাপী এই সংঘর্ষ চলে। সদর থানার ছাদে অবস্থান নিয়ে পুলিশ জনতার দিকে মূহুর্মূহু টিয়ার সেল ও গুলি ছোঁড়ে। এতে অন্তত: একশ’ মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়।
এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ ৫০ জনকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে হাসপাতালের উপ-পরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ জানিয়েছেন। আহত অন্যদের বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল ও বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে সদর থানায় অবস্থানরত ২০ জনের অধিক পুলিশকে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে থানা থেকে বের হয়ে এসে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়। তাদের বগুড়া পুলিশ লাইন্সে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর জনতা থানার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে থানার বিভিন্ন কক্ষে আগুন লাগিয়ে দেয়। ঘন্টাকাল ধরে সদর থানার নিয়ন্ত্রণ নেয় জনতা। পরে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা এসে আগুন নিভিয়ে ফেলে। হামলার সময় থানায় অস্ত্রাগার থেকে বেশ কিছু অস্ত্র লুট হয়েছে বলে পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান।
তবে এ ব্যাপারে বগুড়ার পুলিশ সুপার জাকির হাসান জানিয়েছেন, হামলকারীরা সদর থানার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য হামলা চালায়। থানায় আটকে পড়া সব পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নেয়া হয়েছে। বর্তমানে থানায় কোন পুলিশ নেই। থানার কার্যক্রম বন্ধ রাখা রয়েছে। তবে থানা থেকে অস্ত্র লুট করা হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।