ঘূর্ণিঝড় রিমালের তান্ডব
ঘূর্ণিঝড় রিমালের তান্ডবে লন্ড ভন্ড হয়েছে দেশের দক্ষিণ উপকূলীয় ছয় জেলা। সব মিলিয়ে মোট ১৯ জেলার ৩৭ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। প্রাণহানি হয়েছে অন্তত ১৪ জনের। এর মধ্যে ভোলায় তিনজন, পটুয়াখালীতে তিনজন, বরিশালে দুজন, চট্টগ্রামে দুজন এবং সাতক্ষীরা, খুলনা, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লায় একজন করে প্রাণ হারিয়েছেন।
গতকাল সোমবার বিকেলে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিবুর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ২ লাখ ৫০ হাজার ৪৭৫ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৩৬ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। নিচু এলাকাগুলোতে পানি জমে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র জলাবদ্ধতা।
তীব্রগতির বাতাস আর ভারী বর্ষণের কারণে উপকূলীয় এলাকার পোনে তিন কোটিরও বেশি গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া প্রায় গোটা দেশই ১৬ ঘন্টা বিদ্যুৎহীন অবস্থায় ছিল। উপকূলীয় এলাকায় লবণ পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলের মাঠ। গাছপালা ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এসব এলাকা। ৮-১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস ও উপকূলীয় রক্ষা বাঁধ ভেঙে পানি বন্দি হয়ে পড়েছেন বিভিন্ন জেলার লাখ লাখ মানুষ।
সুন্দরবন প্লাবিত হওয়ায় জীববৈচিত্র্যের ব্যাপক ক্ষতির আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা। রোববার গভীর রাত পর্যন্ত উপকূলে তান্ডব চালাতে সোমবার সকালের দিকে স্থলভাগে উঠে আসার পর বৃষ্টি ঝরিয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছিল প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল পরিণত হয় গভীর স্থল নিম্ন চাপে।
পত্র-পত্রিকার খবরে প্রকাশ ঘূর্ণিঝড় রিমালে দেশের অর্ধেকেরও বেশি গ্রাহক বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। সোমবার দিবাগত রাতের প্রায় পুরোটাই অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল দেশের অধিকাংশ এলাকা। দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মোবাইল নেটওয়ার্ক অচল হয়ে গেছে, নেই ইন্টারনেটও। ফলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার জনসাধারণ।
ঘূর্ণিঝড়টি অতিক্রমের সময়ে উপকূল জুড়ে ঝড়ো হাওয়া ও প্রচুর বৃষ্টি হয়। ঘূর্ণিঝড়ের বিস্তৃতির কারণে গত সোমবার উপকূলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। কোনো কোনো জায়গায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলের বিভিন্ন জেলায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে গেছে। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘন্টায় ৯০ থেকে ১২০ কিলোমিটার।
আরও পড়ুনএর প্রভাবে বিভিন্ন এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়। এবার রিমালের আঘাতেও ভেঙে গেছে অনেক বাঁধ। ফলে বিপুল এলাকা প্লাবিত হয়েছে। দেশের বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকায় উন্নত মানের বাঁধ না থাকাই এর কারণ।
উল্লেখ্য, গত ২২মে পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছিল- যা ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চয় করে সুস্পষ্ট লঘুচাপ, নিম্নচাপ, গভীর নিম্নচাপ দশা পেরিয়ে ঘূর্ণিঝড় পরিণত হয় শনিবার সন্ধ্যায়।
তখন এর নাম দেওয়া হয় ‘রিমাল’ রোববার সকালে ঘূর্ণিঝড়টি পরিণত হয় প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে। আমরা বলতে চাই, যে কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগকে এড়ানোর কোনো উপায় নেই। কিন্তু দুর্যোগকে মোকাবিলা করতে হলে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও যথাযথ প্রস্তুতি জরুরি। যার ফলে, ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই কমানো সম্ভব। সঙ্গত কারণেই রেমালের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি আমলে নিতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
ঝড়ের সঙ্গে জলোচ্ছ্বাসে অনেক এলাকার মানুষ বাড়িতে আটকা পড়েছে। জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত জনপদগুলোতে আটকা পড়া মানুষের কাছে যাওয়া জরুরি। শুকনো খাবার ও পানীয় জল সরবরাহ একান্ত জরুরি।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ঘূর্ণি উপদ্রুত এলাকার ক্ষয়ক্ষতি হিসাব করে প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী সংশ্লিষ্ট সবার কাছে দ্রুত পৌঁছানোর উদ্যোগ নেবে। অন্যদিকে প্রচুর গাছপালা ভেঙে পড়েছে, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়েছে এই বিষয়গুলো আমলে নিয়েও কাজ করতে হবে। দুর্ভোগে পড়া মানুষকে সংকট থেকে উদ্ধারের বিকল্প নেই।
যত দ্রুত সম্ভব ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে সহায়তা করতে হবে।
মন্তব্য করুন