নদ-নদীর বন্যা পরিস্থিতি
নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকায় উত্তরের কুড়িগ্রাম ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ফেনী জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। কুড়িগ্রামে তিনটি পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় প্লাবিত হয়েছে সাতটি উপজেলার দেড় শতাধিক চর ও দ্বীপচর, পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত ৬০ হাজার মানুষ।
ফেনীর মুহুরি, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে প্রবাহিত হলেও ফুলগাজী ও পরশুরামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। সিলোনিয়া নদীর বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় দুই উপজেলার অন্তত চার হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে। তলিয়ে গেছে ফসলি জমিসহ রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি।
এদিকে যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করে ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে চরাঞ্চলের নিম্নভূমি তলিয়ে গেছে। গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্য অনুযায়ী গত চব্বিশ ঘন্টায় ৭০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুড়িগ্রামে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
জেলার ১৬টি নদ-নদীর পানি হ্রাস বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্লাবিত হয়ে পড়ছে নতুন নতুন এলাকা। এতে করে পানিবন্দি হয়ে নানা দুর্ভোগে পড়েছে অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ। সিরাজগঞ্জের কাজিপুর পয়েন্টে যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে কাজিপুরের খাসরাজবাড়ী, তেকানি, চরগিরিশসহ নানা স্থানে দেখা দিয়েছে ভাঙন। আর বন্যার পানি প্রবেশ করেছে অন্তত ২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।
শুক্রবার যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিভিন্ন স্থানে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তিস্তা, করতোয়া, ঘাঘট, বাঙালীসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানিও বাড়ছে হু হু করে। যে কোনো সময় এসব নদ-নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নদী তীরবর্তী চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লক্ষাধিক মানুষ।
দফায় দফায় বন্যায় খাদ্য, সুপেয় পানিসহ নানা সংকটে ভুগছেন বানভাসি মানুষ। অনেক এলাকায় স্কুল, কলেজে পানি উঠে বন্ধ হয়ে গেছে শিক্ষা কার্যক্রম। এ ছাড়াও বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে আমন বীজতলা, পাট ও মৌসুমি ফসলের ক্ষেত। কাঁচা পাকা সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। বন্যার মধ্যেই মড়ার ওপর খাড়ার ঘা বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়েছে তীব্র নদীভাঙন। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন এসব অঞ্চলের লোকজন।
আরও পড়ুনএদিকে সিলেটের কোথাও কোথাও বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলেও পানি বেড়েছে কয়েকটি স্থানে। বৃষ্টি কম হলেও ভারতের বরাক নদের শাখা কুশিয়ারার পানিপ্রবাহ বেড়েছে। জকিগঞ্জ উপজেলায় চারটি স্থানে কুশিয়ারা নদীর বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। শুক্রবার পর্যন্ত জেলার প্রধান দুই নদী সুরমা ও কুশিয়ারার সব পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
আমরা মনে করি, যখন ফের বন্যার আশঙ্কার বিষয়টি সামনে আসছে, তখন তা এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। কাজেই বন্যা মোকাবিলার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। যে কোনো দুর্যোগ সামনে রেখে এর মানবিক বিপর্যয়ের দিকগুলোর প্রতি এখনই গুরুত্ব দিতে হবে। বন্যা কবলিত এলাকায় অসহায় মানুষ যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য ও পানীয় পায়, এ ব্যাপারে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলার বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে। বন্যা পরবর্তী সংস্কার ও পুনর্বাসনের ব্যাপারেও একই কথা প্রযোজ্য। এটা ঠিক, দেশে প্রতিবছরই কম বেশি বন্যা দেখা দেয়।
বাংলাদেশ ভাটির দেশ। উল্লেখযোগ্য নদীর দেশের ভূ-সীমানার বাইরে। অভিন্ন নদীগুলোর গতিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখার ব্যাপারে প্রতিবেশী দেশ বিশেষ করে ভারত ও নেপালের সঙ্গে এমন গঠনমূলক উদ্যোগ নেওয়া উচিত, যাতে তা ফলপ্রসূ হয়। বন্যার সঙ্গে সহাবস্থান করে জীবনধারণের কৌশলও বের করা দরকার।
একইসঙ্গে দেশের নদীগুলোর নাব্যতা হ্রাস পেয়েছে এবং এর ফলে প্লাবন ভূমির ব্যাপক বিস্তার ঘটছে। এতে কম পানিতেই বেশি বন্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এ অবস্থায় নদী খননের মাধ্যমে উজান থেকে বেয়ে আসা পলি নিয়মিতভাবে ও দ্রুত অপসারণ করা না হলে ভবিষ্যতে দেশে বন্যার প্রকোপ ও ব্যাপ্তি ক্রমেই বাড়তে পারে। এ বিষয়েও দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।
মন্তব্য করুন