শনাক্তের পরও ছাড় পায় নিষিদ্ধ ১৪ হাজার কেজি ঘনচিনি
শনাক্তের পরও আমদানি নিষিদ্ধ ১৪ হাজার কেজি ঘনচিনি (সোডিয়াম সাইক্লোমেট) খালাসের অনুমতি দেয় চট্টগ্রাম কাস্টমস। কাস্টমস কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলেও অদৃশ্য কারণে পার পেয়ে গেছে। এবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযানেও অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয় হতে ওই অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদক উপপরিচালক (জনংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কতিপয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আমদানি-নিষিদ্ধ ঘনচিনি শনাক্ত করার পরও খালাস করার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানকালে এনফোর্সমেন্ট টিম কর্তৃক ওই অফিসের এআইআর শাখা হতে অভিযোগের বিষয়ে প্রয়োজনীয় রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়। রেকর্ডপত্র পর্যালোচনান্তে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা রয়েছে বলে এনফোর্সমেন্ট টিমের নিকট প্রতীয়মান হয়েছে। অভিযানে প্রাপ্ত তথ্যাবলি বিস্তারিতভাবে যাচাই করে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন কমিশনের দাখিল করা হবে।
আরও পড়ুন
অন্যদিকে এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের কমিশনার ফাইজুর রহমান বলেন, দুদকের একটি টিম এসেছিল তারা আমাদের প্রতিবেদন চেয়েছে, আমরা তাদের একটি কপি দিয়েছি। এর বাইরে আমার কিছু জানা নেই।
ঘনচিনি মানব স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আমদানি নীতিতে নিষিদ্ধ। ২০০৬ সালে ঘনচিনির ব্যবহার ও আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়। ঘনচিনি চিনির চেয়ে ৩০ থেকে ৫০ গুণ বেশি মিষ্টি; দামও কম, স্বাদ প্রায় চিনির মতোই। ঘনচিনির ব্যবহার ক্যানসার ঝুঁকি বাড়ায়।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালে ঢাকার মিটফোর্ডের একটি বাণিজ্যিক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান চীন থেকে ২০ হাজার ১৬০ কেজি ক্যালসিয়াম কার্বোনেট পাউডার (চুনাপাথর) আমদানি করে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কাস্টমসের এআইআর (গোয়েন্দা) শাখা পণ্যের রাসায়নিক পরীক্ষা করে দেখতে পায়, চালানে ১৪ হাজার কেজি ঘনচিনি এবং ৬ হাজার কেজি ক্যালসিয়াম কার্বোনেট পাউডার রয়েছে। শনাক্তের পরও আমদানি নিষিদ্ধ ১৪ হাজার কেজি ঘনচিনি (সোডিয়াম সাইক্লোমেট) খালাসের অনুমতি দিয়েছিল চট্টগ্রাম কাস্টমস। এ ঘটনায় এআইআর শাখা থেকে আমদানিকারক, সিএন্ডএফ এজেন্ট ও জেটি সরকারের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে মামলার সুপারিশ করা হলেও পণ্য পরে ছাড় করা হয়।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, ফৌজদারি মামলার সুপারিশের প্রায় ৩ মাস পর কাস্টমসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহায়তায় ও পরামর্শে আমদানিকারকের সিএন্ডএফ এজেন্ট কৌশলে পণ্য খালাস নিতে এআইআর শাখায় ২০২৩ সালের ১৮ জানুয়ারি বি/এল আনলক করার আবেদন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে এআইআর শাখা নতুন আরেকটি ফাইল খুলে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ক্যালসিয়াম কার্বোনেট পাউডার ঘোষণায় ২০২৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারিতে পণ্য খালাস হয়। পণ্য খালাস নেওয়ার পর ২০২৩ সালের ৩১ মে প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটনে এআইআর শাখা তৎকালীন উপকমিশনার সাইফুল হককে দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রাথমিক তদন্তে সিএন্ডএফ এজেন্ট লাইসেন্স বাতিল, আমদানিকারককে নজরদারিতে রাখা এবং এআইআর শাখার তৎকালীন শাখা সহকারীকে বরখাস্তের সুপারিশ করা হয়েছিল। তাকে প্রাথমিকভাবে বরখাস্ত করা হলেও পরে তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয়। পরে ওই বছরের ১৩ জুলাই উপকমিশনার এইচএম কবিরকে আহ্বায়ক করে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে জালিয়াতির সঙ্গে কাস্টমসের কোনো পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। দোষ চাপানো হয় বন্দর কর্তৃপক্ষের ওপর।
মন্তব্য করুন