বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলে নজিরবিহীন লোডশেডিং, ভাদ্রের ভ্যাপসা গরমে জীবন ওষ্ঠাগত
স্টাফ রিপোর্টার : নজিরবিহীন লোডশেডিংয়ের কবলে বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চল। ভাদ্রের চরম গরমে এই অঞ্চলের মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। দিন কী রাত ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এই অঞ্চলের কোটি কোটি গ্রাহক। নির্বিঘ্নে বিদ্যুৎ সরবরাহ না মেলায় ক্ষতি হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্যেরও।
বিদ্যুৎ বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলায় নেসকো ও পল্লী বিদ্যুৎ মিলিয়ে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে দুই হাজার ৬শ’ থেকে দুই হাজার ৭শ’ মেগাওয়াট। চাহিদার বিপরীতে এই অঞ্চলে সরবরাহ মিলছে মাত্র এক হাজার ৭শ’ থেকে এক হাজার ৮শ’ মেগাওয়াট। ৯শ’ থেকে হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি থাকছে।
নেসকো বগুড়া সূত্রে জানা যায়, গ্রাহকসেবার সুবিধার্থে বগুড়া শহরকে বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১, ২, ৩ ও ৪ অঞ্চলে ভাগ করে সেবা দেওয়া হচ্ছে। শহর ছাড়াও দুপচাঁচিয়া, শেরপুর ও শিবগঞ্জ উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে নেসকো। এই চার অঞ্চলে গড়ে মোট বিদ্যুতের চাহিদা ১০৫ মেগাওয়াট। চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ মিলছে ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ।
বিদ্যুতের লোডশেডিং কমছে না, বরং বেড়েই চলেছে। সূত্রটি আরও বলছে, দিনাজপুরের পার্বতীপুরে ৫২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ আছে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির তিনটি ইউনিটের সবগুলো ইউনিট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই সংকট আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। গত সোমবার সকাল ৯টার দিকে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিটের উৎপাদনও বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে থেকেই অন্য দুই ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ ছিল।
নেসকো বগুড়ার একটি সূত্র বলছে, তারা জানতে পেরেছেন বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিটের অয়েল পাম্প (টারবাইন জেনারেল) নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিটটি আবার বন্ধ হয়ে যায়। মাত্র চার দিন আগে ২৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এই ইউনিটের উৎপাদন শুরু হয়েছিল।
ইউনিটটি দীর্ঘ ৩৬ দিন পর গত ৬ সেপ্টেম্বর যান্ত্রিক সমস্যা সমাধান করে উৎপাদন শুরু করেছিল। বেসরকারিভাবে বগুড়া, রংপুর ও ঠাকুরগাঁওয়ে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।
আরও পড়ুনবড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন চালু থাকলে লোডশেডিং হতো না। এই ইউনিট চালু হতে আরও দুই সপ্তাহ লাগতে পারে। এদিকে নেসকো বগুড়ার আরেকটি সূত্র জানায়, গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষেত্রগুলোতে গ্যাসের চাপ কম রয়েছে গ্যাসের চাপ কম থাকাটাও বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতিবন্ধকতা।
বগুড়ার শাজাহানপুরের আড়িয়া বাজার এলাকার নিরবান আলী জানান, গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে পল্লী বিদ্যুতের বেহাল দশা। দিনের বেশিভাগ সময় বিদ্যুৎ থাকে না। বিদ্যুৎ না থাকায় সাধারণ মানুষের জীবনমানের অবনতি হয়েছে। সারাদিন মানুষ পরিশ্রম শেষে ঘুমাতে যাবে সেই সময় বিদ্যুৎ থাকে না। ফলে এই ভ্যাপসা গরমে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
আমাদের সারিয়াকান্দি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, এ উপজেলায় ভাদ্রের ভ্যাপসা গরমেও ২৪ ঘন্টায় মধ্যে ৬ ঘন্টাও বিদ্যুৎ মিলছে না। চাহিদামতো যোগান না থাকায় লোডশেডিং দিতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ অফিস। পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকেরা অভিযোগ করে বলছেন, তারা ২৪ ঘন্টার মধ্য ৬ ঘন্টাও বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না।
ফলে প্রচন্ড গরমে তাদের জীবনযাপন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এদিকে বিদ্যুদের অভাবে সারারাত ঘুমাতে না পেরে এলাকাবাসী উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সামনে এসে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। বিদ্যুৎ নির্ভর ব্যবসায়ীরা বিদ্যুৎ না থাকায় নানা ধরনের ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ঘন ঘন বিদ্যুৎ যাতায়াত করায় বিপাকে রয়েছেন আউশ ধানে পানি দেওয়ার পাম্প মালিকেরা।
বগুড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সারিয়াকান্দি জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার শফি আহম্মেদ বলেন, সারিয়াকান্দিতে দিনের বেলায় যেখানে চাহিদা ১৩ মেগাওয়াট সেখানে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে ৫ মেগাওয়াট এবং রাতের বেলায় যেখানে চাহিদা ৮ মেগাওয়াট সেখানে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে ৩ মেগাওয়াট। তাই নিরুপায় হয়েই আমাদের লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।
মন্তব্য করুন