দেশের বৃহত্তম সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় লোকবল সংকট চরমে
সৈয়দপর (নীলফামারী) প্রতিনিধি: দেশের বৃহত্তম সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় লোকবল সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। তীব্র জনবল সংকটের পাশাপাশি বিশাল এ কারখানাটিতে বাজেট স্বল্পতাও রয়েছে। তবে নানা সীমাবদ্ধার পরও কারখানাটিতে দৈনন্দিন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা স্বাভাবিক রয়েছে। আর এ অবস্থায় আজ শনিবার কারখানাটি পরিদর্শন করবের রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম।
কারখানা সূত্র জানায়, সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানাটি বিগত ১৮৭০ সালে ১১০ একর জমির ওপর গড়ে ওঠে। এখানে মঞ্জুরিকৃত পদের সংখ্যা দুই হাজার ৮৫৯ জন। তন্মধ্যে কর্মরত রয়েছে মাত্র ৮২০ জন। যা মঞ্জুরিকৃত পদে মাত্র ২৮ শতাংশ। ফলে কারখানার সীমিত সংখ্যক লোকবল নিয়ে ২৮টি উপকারখানায় (শপ) উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
এ অবস্থার নানা সীমাবদ্ধতা সত্বেও দেশের বৃহত্তম সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় বেড়েছে উৎপাদন কার্যক্রম। কারখানাটিতে কর্মদিবসে ৩ ইউনিট মেরামত লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ৪ ইউনিট কোচ মেরামত ছাড়িয়েছে।
অন্যদিকে বিশাল এ কারখানাটিতে বাজেট স্বল্পতাও রয়েছে। চলতি বছর মাত্র ২০ কোটি টাকা বাজেট মিলেছে। বাজেটের টাকায় মেরামত কাজে ব্যবহৃত উপকরণ সংগ্রহ ও উৎপাদন করা হয়ে থাকে। তবে কারখানায় কর্মরত কর্মকর্তা, শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন ভাতা রাজস্ব খাত থেকে হয়ে থাকে। রেলের সূত্র জানায়, বর্তমান সরকার রেলবান্ধব। ফলে সারাদেশে রেলপথ বাড়ানো হচ্ছে। নতুন নতুন রেলওয়ে রুট চালু ও পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ চালুর পর কোচের চাহিদা বেড়েছে। নতুন ট্রেন চালু করতে অনেক কোচ প্রয়োজন পড়ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চলছে। ক্যারেজ শপে চলছিল ভারি মেরামত কাজ। একটি ক্যারেজের বগির ওপর (আন্ডারফ্রেম) ক্রেনের মাধ্যমে স্থাপন করা হচ্ছে সুপার স্ট্রাকচার। পাশেই বগি শপে চলছিল চ্যাচিজ মেরামতের কাজ।
আরও পড়ুনএছাড়া ক্যারেজ শপে চলছে রেলকোচে রঙের কাজ। একটি শপে ট্রেনের ব্রেক তৈরি হচ্ছিল। একটিতে তৈরি হচ্ছিল একটি কোচের সঙ্গে অপর কোচ জুড়ে দেওয়ার কাপলিং যন্ত্র। ১২ হাজার রকম যন্ত্রাংশ তৈরি হয় মেশিনসহ কয়েকটি শপে। যা রেলওয়ে কোচ, ওয়াগন ও ইঞ্জিনে ব্যবহার করা হয়।
সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার ক্যারেজ শপের (উপকারখানা) ইনচার্জ উর্ধ্বতন উপ-সহকারী (এসএসএই) প্রকৌশলী মোমিনুল ইসলাম বলেন, এখানে প্রতিদিন ৩ ইউনিট কোচ মেরামতের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। প্রতিদিন দুই ইউনিটে একটি পূর্ণাঙ্গ কোচ বোঝানো হয়। সে ক্ষেত্রে আমরা চলতি অর্থবছরে গত জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসে ৩১৭টি কোচ মেরামত করেছি। অর্থাৎ প্রতিদিন ৪ ইউনিট মেরামত কাজ হয়েছে এখানে
সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএস) মো. সাদেকুর রহমানের সঙ্গে কথা হলো তিনি জানান, এখন কাজের চাপ অনেক বেশি। দেশের রেলপথ ও ট্রেনের সংখ্যা বেড়েছে। ফলে বাড়ছে আমাদের ওপর কাজের চাপও। তিনি কারখানাটিতে লোকবল সংকট নিরসনের ওপর গুরুত্ব দেন। তবে সীমাবদ্ধতার মাঝেও শ্রমিক কর্মচারীরা কারখানার গতি নজিরবিহীনভাবে ধরে রেখেছে। এ জন্য সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান তিনি।
নীলফামারী- ৪ (সৈয়দপুর-কিশোরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিক বলেন, সীমাবদ্ধতার মাঝে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় ভাল কাজ হচ্ছে বলে জেনেছি। এখন কারখানাটিতে লোকবল নিয়োগ ও আধুনিকায়ন জরুরি হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে আমি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করবো।
মন্তব্য করুন