বেশি দাম, মাঠ থেকে আলু বিক্রি করছেন চাষিরা হিমাগার ফাঁকা থাকার শঙ্কায় মালিকরা
শাহারুল আলম, কালাই (জয়পুরহাট) : মৌসুমের শুরু থেকেই এবার আলুর দাম বেশি। তাই বেশি দাম পেয়ে মাঠ থেকেই আলু বিক্রি করছেন চাষিরা।
এবার আলুর দাম বেশি হওয়ায় এবং হিমাগারে সংরক্ষণের পর তা বিক্রির সময় প্রশাসনিক হয়রানির আশঙ্কায় হিমাগারে আলু সংরক্ষণে আগ্রহ নেই ব্যবসায়ীদের। বেশি দাম পেয়ে মাঠ থেকেই আলু বিক্রি করে দিচ্ছেন চাষিরা। মৌসুম শেষে এ বছর আলুর সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা হিমাগার মালিকদের।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জয়পুরহাট জেলায় এবার ৩৮ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আলু রোপন করেছেন কৃষকরা। এরমধ্যে আগাম জাতের আলু চাষ হয়েছে সাড়ে সাত হাজার হেক্টর জমিতে।
উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৮ লাখ ৯৫ হাজার ৮৫০ মে.টন। তবে আগে থেকে অপরিপক্ক আলু বিক্রি করায় এবার উৎপাদন হয়েছে ৮ লাখ ২৩ হাজার ১৩ টন।
এছাড়া রোপন মৌসুমে বাজারে আলুর দাম বেশি থাকায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী খাবার আলু বীজ হিসেবে বিক্রি করায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদন কম হয়েছে। বেশি দাম পেয়ে আগাম জাতের আলুর সাথে মৌসুমের আলুও বিক্রি করছেন চাষিরা। বর্তমানে আলু উত্তোলনের ভরা মৌসুম চলছে।
ইতোমধ্যে ৫০-৬০ ভাগ জমির আলু উত্তোলন হয়েছে। জয়পুরহাটের পাঁচটি উপজেলায় ১৯টি হিমাগারে আলুর ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৮০ হাজার ৫০০ মে. টন। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে আলু সংরক্ষণ শুরু হয়েছে। ১১ মার্চ পর্যন্ত হিমাগারগুলোতে ধারনক্ষমতার অর্ধেক আলু সংরক্ষন হয়েছে।
আরও পড়ুনহিমাগার মালিকরা বলছেন, বিগত বছরের মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে যে পরিমাণ আলু সংরক্ষণ হয়েছিল, এ বছর তার অর্ধেক আলু সংরক্ষণ হয়েছে। এর কারণ গত বছর বেশি আলু সংরক্ষণের অভিযোগে অনেক ব্যবসায়ীর জেল-জরিমানা হয়েছে। আবার কোন কোন হিমাগার মালিককেও ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। সে কারণে তারা এ বছর আলু সংরক্ষণের সাহস পাচ্ছেন না।
সড়াইল এলাকার কৃষক রেজাউল হক এক একর জমিতে স্টিক জাতের আলু চাষ করেছেন। ২৫ টাকা কেজি দরে সব আলু স্থানীয় পাইকার সাইদুর রহমানের কাছে বিক্রি করেছেন। তিনি জানান, এ বছর বীজ, সার, কীটনাশক শ্রমিক মিলে তিন বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা। উৎপাদন হয়েছে ৩’শ ৬০ মণ আলু। ১হাজার ২০ টাকা দরে সব আলু বিক্রি করেছেন।
তাতে লাভ টিকেছে ২ লাখ ৬২ হাজার টাকা। গত বছরের মতো এবার মৌসুমের শুরুতে যদি আলুর দাম কম হত তাহলে অনেক বেশি লোকসান গুনতে হত। তাছাড়া হিমাগারে সংরক্ষণেও গুনতে হত বাড়তি খরচ। বেশি দাম পেয়ে সব আলু বিক্রি করে দিয়েছি। অন্তত ঝামেলামুক্ত হয়েছি। গত কয়েক বছরের লোকশানও এবার পুষে ওঠেছে।
বৃহত্তর বগুড়া কোল্ড স্টোরেজ অর্নাস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও নর্দান হিমাগারের মালিক আবুল কালাম বলেন, চাহিদার কারণে আলু ক্ষেতেই বিক্রি হয়ে হচ্ছে। ভরা মৌসুমেও আলু পাওয়া যাচ্ছে না। বিগত সময়ে মার্চের প্রথম সপ্তাহেই পরিপূর্ণ হত হিমাগার। অথচ গতকাল ১১ মার্চ পার হয়েছে। এখন পর্যন্ত অধিকাংশ হিমাগারেই অর্ধেক আলুও সংরক্ষণ হয়নি।
এ বছর হিমাগারগুলো খালি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এমন অবস্থা হলে বছরজুড়ে আলুর সংকট দেখা দিতে পারে বলে তিনি মনে করেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রাহেলা পারভিন জানান, আলু উৎপাদনে যে পরিমান লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, আগাম ও অপরিপক্ক আলু উত্তোলণের কারনেই তা অর্জিত হয়নি। হিমাগারে সংরক্ষণ না হলে মৌসুমের পর আলুর সংকট হতেই পারে।
মন্তব্য করুন