গৃহবধূ রেহেনা খাতুন সোমবার আড়াই মাস বয়সী ছেলে সন্তানকে নিয়ে বাবা মোহন মন্ডলের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। রাতে শিশু ইসরাফিলকে নিয়ে মা ও নানী রেনু খাতুন দরজা বন্ধ না করেই ঘুমিয়ে পড়েন। ১০টার দিকে ঘুম ভেঙে মা দেখেন, তাঁর পাশে সন্তান নেই। এ সময় তিনি চিৎকার করে উঠলে স্বজন ও প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। সম্ভাব্য স্থানে খোঁজাখুঁজিও শুরু করেন। মঙ্গলবার মাইকিং করা হয়েছে। তবে শিশুটির হদিস মেলেনি।

সোমবার রাতে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বাগুলাট ইউনিয়নের আদাবাড়িয়া গ্রামে নানা মোহন মন্ডলের ঘর থেকে হারিয়ে যায় শিশু ইসরাফিল। তার বাবা উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের আনন্দনগর গ্রামের কৃষক জিয়াউর রহমান। নানাবাড়ি বেড়াতে এসে শিশুটি হারিয়ে যাওয়ার পর থেকে শোকে নির্বাক বাবা-মা। মাঝেমধ্যে কেঁদে উঠছিলেন তারা। পাশে মাটিতে বিছানো পাটিতে বসে আহাজারি করছিলেন নানা-নানী। স্বজনরা তাঁদের সান্ত¡না দেওয়া চেষ্টা করছিলেন।

মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, শিশুটির সন্ধান চেয়ে মাইকে প্রচার চালানো হচ্ছে। তারা নানাবাড়ি গেলে মা রেহেনা খাতুন ভাঙা কণ্ঠে বলেন, ‘শরীরে খুব জ্বর। রাত ১০টার দিকে ঘুম ভেঙে ছেলেকে না পেয়ে চিৎকার দিয়ে উঠি। এরপর সবাই এসে খোঁজাখুঁজি করেও পেল না। আমার আদরের ছেলেকে এনে দেন।’

বাবা জিয়াউর রহমানের ভাষ্য, ‘খুব আদরের ছেলে আমার। আমি আমার ছেলেকে ফেরত চাই।’

জানা গেছে, তিন মেয়ের পর একমাত্র ছেলে সন্তান পেয়ে খুশি হয়েছিলেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা। তবে হারিয়ে যাওয়ায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে সবার মধ্যে। এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্কও ছড়িয়েছে। এতে জড়িত সন্দেহে শিশুর মামা নয়ন মন্ডলকে (৩৫) আটক করেছে পুলিশ।

শিশুটির নানী রেনু খাতুন বলেন, ‘গরমের মধ্যে শুয়ে ছিলাম। ওর মা চেঁচায় উঠেছে। কিডা যে নিয়ে গেল মুনি, কিছু জানিনে।’

এ ঘটনায় আটক নয়নের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসের ভাষ্য, তারা সবাই মিলে রাত থেকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেছেন। পুলিশ অযথা তাঁর স্বামীকে নিয়ে গেছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এলাকায় শিশু চুরির ঘটনা এবারই প্রথম। এতে আতঙ্কিত এলাকাবাসী। তারা শিশুটিকে উদ্ধার ও নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানিয়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা রাজিনা খাতুন বলেন, এমন ঘটনা কোনোদিন ঘটেনি। খবর শোনার পর থেকেই উদ্বেগে আছেন তিনি।

যেকোনো মূল্যে শিশুটিকে উদ্ধার করে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি কলেজছাত্র হৃদয় হোসেনের।

শিশুটি হারিয়ে যাওয়ার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কুমারখালী থানার ওসি মো. আকিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনকে আটক করা হয়েছে। তবে এখনও লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি।