গরমে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি
প্রকৃতির মাঝে চলছে চরম বৈরি অবস্থা। এর ফলে দেশজুড়ে চলছে তাপপ্রবাহ। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগজনক। যা আমলে নেওয়ার কোন বিকল্প থাকতে পারে না। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশের প্রকৃতি ও মানুষ।
গ্রীষ্মে বাংলাদেশে প্রচন্ড গরম দিনের সংখ্যা বাড়ছে। যদি কোন এলাকার তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি এবং বাতাসের আর্দ্রতা ৭০ থেকে ৯০ শতাংশের মধ্যে থাকে, তা হলে দিনটি কষ্টের দিন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এদিকে দেশের দুটি জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তীব্র তাপপ্রবাহ অতি তীব্র তাপপ্রবাহে রূপ নিয়েছে। আর শুক্রবার তাপমাত্রার বিষয়ে আবহাওয়া বিভাগ সতর্কতা জারির পর জাতীয় একটি দৈনিকের প্রধান শিরোনাম ‘হিটস্ট্রোকে আরো ১১ জনের মৃত্যু’।
খবরে বলা হয়, গত ২৪ ঘন্টায় ১১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে গাজীপুর, নরসিংদী, রংপুর, সিলেট, মেহেরপুর ও ঝালকাটিতে একজন করে, চট্টগ্রামের পটিয়ায় তিনজন এবং দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে দুইজন মারা গেছেন।
এদিকে শনিবার বিকাল ৩টায় যশোরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি এবং পাবনায় রেকর্ড করা হয়েছে ’৪১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রাও আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে। শনিবার রেকর্ড হয়েছে ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা শুক্রবার ছিল ৩৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এমন তাপপ্রবাহ আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ এবং কোন কোন অঞ্চলে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। মানুষের পাশাপাশি প্রাণিকুলেও হাঁসফাঁস অবস্থা। বেশি সমস্যায় পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষ। প্রচন্ড গরমে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না কেউ। একই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়েছে ডায়রিয়াসহ নানা রোগ। ভিড় বাড়ছে হাসপাতালগুলোতে।
আরও পড়ুনচিকিৎসকরা বলছেন, স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আবহাওয়াবিদদের মতে, তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তা মৃদু তাপদাহ, ৩৮ ডিগ্রি থেকে ৩৯.৯ ডিগ্রি হলে মাঝারি তাপপ্রবাহ, ৪০ ডিগ্রি থেকে ৪১.৯ পর্যন্ত তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তা অতিতীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে গণ্য হয়। সেই হিসেবে যশোর এবং চুয়াডাঙ্গা জেলায় বইছে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।
সারাদেশে বেড়েই চলছে তাপপ্রবাহ। গরমে জনজীবনে নেমে এসেছে চরম স্থবিরতা। বাড়ছে রোগব্যাধি। অতি তীব্র তাপপ্রবাহে যশোরে বিটুমিন গলে গেছে। এদিকে স্বাস্থ্য বিভাগের সতর্কবার্তা জারির দ্বিতীয় দিন রোববার নরসিংদী, সিলেট ও মেহেরপুরে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তীব্র তাপদাহের মধ্যে প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলায় সারাদেশের হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। গতকাল রোববার সকালে এক ভার্চুয়াল বৈঠকে তিনি এই নির্দেশ দেন।
শিশুদের প্রতি অধিক যত্নবান হতে হবে। শিশুদের স্বাভাবিক খাবার দিতে হবে। কোন ধরনের গুরুপাক খাবার দেয়া যাবে না। শিশু যদি বুকের দুধ পান করে, তাহলে মায়েদের আরও বেশি পানি পান করতে হবে। আমরা মনে করি, প্রচন্ড গরমে সাবধান ও সচেতন থাকার বিকল্প নেই। বিশেষ করে চলাফেরা ও খাবারের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে হলে এই গরমে সবার বেশি করে পানি পান করা উচিত। এ ক্ষেত্রে ডাবের পানি, লেবুর শরবত উত্তম। জরুরি কোন কাজ ছাড়া ঘরের বাহির না হওয়াই ভাল। জনজীবনে স্বস্তি ও প্রশান্তি পেতে আমরা রুক্ষ ও রুদ্র আবহাওয়ার দ্রুত পরিবর্তন প্রত্যাশা করছি।
মন্তব্য করুন