ঈদ যাত্রা শুভ হোক
রোদেলা ইডেন কলেজে অনার্সে পড়ে। তার পরীক্ষা চলছে। আজ শনিবার (১৫ জুন) রোদেলা ঢাকা কল্যানপুর বাস ষ্ট্যান্ডে এ কাউন্টার থেকে ও কাউন্টারে একটি টিকিটের জন্য তন্ন তন্ন করে সান্তাহারে বাড়ি আসার জন্য একটি টিকিট খুঁজছে। পাওয়া যাচ্ছে না। ঢাকা শহরে একাই একটি মেয়ের পক্ষে এই জাতীয় কাজ করা দুরহ। তার কান্না পাচ্ছে। এর আগে ট্রেনে টিকিট কাটার জন্য অনলাইনে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে সে। ঈদে তাহলে কি তার বাড়ি যাওয়া হবে না?
মুঠোফোনে আমাকে সে এই ঘটনা জানায় এবং পেপারে এই দুর্দশা লিখতে অনুরোধ করেছে। রেদেলার মতো আরো প্রায় ১ কোটি মানুষ ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঈদে যাত্রা করবেন। সেটা ঘটবে মাত্র ৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যে। এত বিশাল সংখ্যক মানুষের পরিবহন করার মত গণপরিবহন দেশে নাই। রেলওয়ের নেই সেই সক্ষমতা। নৌ পরিবহন ব্যবস্থাও পারবে না।
তাই এই খানেই মানুষের ঝুঁকির বিষয়টা চলে আসে। বাধ্য হয়ে কাউকে কাউকে অধিক ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে অথবা সাধারণ বাসে বাড়ি আসতে হবে। আর এসব দুর্ভোগে পড়বে দেশের সাধারণ মানুষ। রেলওয়ে জংসন শহরে বসবাস করি। প্রতিবার ঈদে ট্রেনের যে দৃশ্য দেখা যায়, পৃথিবীর অন্য কোন দেশে তা মনে হয় দেখা যায় না। অসংখ্য মানুষ সারারাত, দিন ট্রেনের ছাদে করে প্রচন্ড ঝুঁকি নিয়ে ঈদে বাড়ি আসে।
আর যুগের পর যুগ ধরে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গুলি এসি রুমের ভেতরে বসে নির্বিকারভাবে এসব দেখতে থাকে। প্্রায় ঈদে বাসের বাড়তি ভাড়া গুনতে হয় শ্রমজীবী মানুষের ঈদ যাত্রায়। রেলওয়ের বর্তমান নিয়মানুয়ায়ী ১০ দিন আগে নির্দিষ্ট তারিখের অন লাইনের টিকিট সকাল ৮ টায় কাটতে হয়। যাত্রীরা সকাল ৮টায় মোবাইলে অনলাইনে ঠিক ৮ টায় ঢুকে দেখে ঐ দিনের সব টিকিট শেষ।
সব টিকিট কোথায় গেল ? চুরি হয়ে যায় আমাদের সব অর্জন দুর্বৃত্তদের কাছে। মানুষ অভিমানী হয়, ক্ষুদ্ধ হয়, কিন্তু এসব অভিমান কে দেখবে ? কোথাও কেউ নেই মনে হয় আলো দিতে। আধাঁরে ঢেকে যাচ্ছে চারিদেকে। তবে কোন কোন বছর আবহাওয়া ও সড়ক ভাল থাকার সাপেক্ষে ও পুলিশ সদস্যদের আন্তরিকতায় কিছুটা যানজটমুক্তভাবে মানুষ ঈদ যাত্রা করতে পারেন।
আমরা শেষ মুহূর্তে সব উদ্ধার করতে চাই। ঈদের ৭দিন বা এক মাস আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে মিটিংয়ে বসেন। এই ভাবে ভাল ফল আসবে না। এই জন্য আপনাকে দীর্ঘমেয়াদি বা ১০ বছরের জন্য একটি টেকসই ও সমন্বিত পরিকল্পনা নিতে হবে। ঈদযাত্রা সহ অনান্য সময়ের জন্যও রেলওয়ের বগি সংখ্যা বাড়াতে হবে। সড়ক পথে যদি ৩ বা ৪ লেন হয়, তাহলে রেলওয়ে তা হচ্ছে না কেন? আর রেলওয়েসহ সব ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা থাকতে হবে। তেমনিভাবে নৌপথকে সংস্কার ও আরো আধুনিক মানের করতে হবে। সড়ক পথে টিকিটের নৈরাজ্য বন্ধ করতে হবে এবং বিআরটিসিসহ উন্নত পাবিলিক বাসের সংখ্যা বাড়াতে হবে। আর কাঠোরভাবে সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে।
আরও পড়ুনঈদের সময় দুটি শ্রেণী বেতন, বোনাস নিয়ে কষ্ট পায়। বেসরকারি শিক্ষকদের এবং পোষাক শিল্পের সবাইকে ঈদের অন্তত ১০/১৫ দিন আগে বোনাস, বেতন পরিশোধ করতে হবে। এটি করতেই হবে। যে বেতন, বোনস দিতেই হবে, তা একটু আগে দিলে সমস্যা কি ? এ ক্ষেত্রে এসব কাজে কারো গাফলতি থাকলে শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে। আমি বেসরকারি কলেজে চাকুরী করি। চাকুরী জীবনে অনেকবার ঈদ উৎসব ভাতা ঈদের পর ব্যাংক থেকে তুলেছি। সব ক্ষেত্রে সমতা আনতে হবে। যা ঘটবে সাবার জন্য যেন তা ঘটে।
কেন মহাসড়কে স্বল্পগতির নশিমন, করিমন, ভটভটি, সিএনজি, অটোরিকসা চলবে? দ্রুতগামী বড় যানবাহনের সাথে এসব হালকা যানবাহনের সংঘর্ষ ঘটছেই। ফলে প্রতিবার ঈদযাত্রায় অসংখ্য প্রাণহানী ঘটে। আমরা তা চেয়ে চেয়ে দেখি।
এমনও হয়েছে, সড়কে সংঘর্ষে পুরো পরিবার শেষ হয়ে গেছে। এ জন্য সরকারকে ধীরগতির ছোট যানরবাহন চলাচল মহাসড়কে বন্ধ করতে হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আমাদের গ্রামীণ সড়কগুলো মহাসড়কে সঙ্গে সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। আর প্রতিটি মহাসড়কে ডিভাইডার থাকতে হবে। আর যদি সম্ভব হয়, সড়কে মোটরসাইলের জন্য লেন করতে হবে। সবচেয়ে সড়কে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনা ঘটছে বেশি।
কর্মঘন্টা ঠিক নেই, বেতনসহ আর্থিক সুযোগ পর্যাপ্ত না থাকায় অধিকাংশ চালক মানসিকভাবে ও শারীরিকভাবে অস্থির ও অসুস্থ থাকে। ফলে দুরপাল্লার গাড়ি চালানোর সময় অনেক চালক আইন মেনে চলেন না। যেহেতু কর্মঘন্টা ঠিক নেই, ফলে দীর্ঘসময় গাড়ি চালাতে গিয়ে তার ভেতর ক্লান্তি আসে। তাই সড়ক নিরাপদ করতে হলে ’সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’ পুরোপুরি চালু করতে হবে। আর চলকের পেশাগত সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে।
এ দেশে সাধারণ মানুষের চাওয়া কোনদিনই ব্যাপক ছিল না। মোটা ভাত, মোটা কাপড় আর নিরাপদ জীবন- এই তো চায় আমজনতা। এই চাওয়া তার অধিকারের মধ্যে পড়ে। দেশটা তো গড়ে আমজনতা। তারা সঠিক ট্রা´ দেয়, ট্রেনে টিকিট কাটে, করও দেয় ষোলআনা। তাই সব ক্ষেত্রে নিরাপদ ক্ষেত্র করে গড়ে তুলতে হবে এ দেশ। পবিত্র ঈদযাত্রা সাবার নিরাপদ হোক। ঈদ মোবারক।
মন্তব্য করুন