আতঙ্কের নাম সড়ক
সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মতো ভয়ানক পরিস্থিতি যখন কোনোভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না, তখন তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক বাস্তবতাকেই নির্দেশ করে। বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিনই অকালে ঝরে যাচ্ছে একের পর এক মূল্যবান প্রাণ। ২০২২ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৭১৩ জন নিহত হয়েছে।
গতকাল শনিবার সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ২২ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন অর্ধ শতাধিক লোক। তাদেরকে স্থানীয় চিকিৎসা কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে।
এদের মধ্যে বরগুনায় সেতু ভেঙে খালে বরযাত্রী বাহী গাড়ি পড়ে ১০ জন, মুন্সিগঞ্জে বাস-সিএনজি সংঘর্ষে ২ জন, বাগেরহাটে বাস চাপায় বাবা-ছেলে, বান্দরবানে ট্রাক খাদে পড়ে চালক, ঝিনাইদহে ট্রাক চাপায় নারী-ইজিবাইকের ধাক্কায় বৃদ্ধ, গোপালগঞ্জে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ জন ও মির্জাপুরে বাসের ধাক্কায় লেগুনাচালকসহ মোট ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর পৌর এলাকায় কাদাযুক্ত পিচ্ছিল সড়কে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটর সাইকেল নিয়ে পড়ে গিয়ে আরেক তরুণের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়াও কিশোরগঞ্জে মাইক্রোবাস-লরির মুখোমুখি সংঘর্ষে ৪ হাজি আহত হয়েছেন।
সম্প্রতি পত্র পত্রিকার প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, এবারের রোজার ঈদের আগে-পরে মিলিয়ে সড়কে ৩৯৯টি দুর্ঘটনায় ৪০৭জন নিহত ও আহত হয়েছেন ১ হাজার ৩৯৮ জন। উল্লেখ্য, এই দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৯৮টি মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় ১৬৫ জন নিহত ও ২৪০ জন আহত হয়েছেন- যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৪৯.৬২ শতাংশ, নিহতের ৪০.৫৪ শতাংশ এবং আহতের ৩০.৩৭ শতাংশ।
মূলত দেশের জাতীয় ও আঞ্চলিক সংবাদপত্র এবং জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের তথ্যে এই পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। আমরা মনে করি, এই পরিসংখ্যান এবং সামগ্রিকভাবে সড়ক দুর্ঘটনার চিত্র আমলে নিতে হবে।
সংগঠনটির হিসেবে এবারের ঈদুল ফিতরের আগে-পরে ১৫ দিনে সড়ক, রেল ও নৌপথ মিলিয়ে মোট ৪১৯টি দুর্ঘটনায় ৪৩৮ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ১ হাজার ৪২৪ জন। আলাদাভাবে রেলপথে ১৮টি দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত ও ২১ জন আহত হয়েছেন। নৌপথের দুটি দুর্ঘটনায় সাতজন নিহত ও পাঁচজন আহত হয়েছেন।
রাজধানী থেকে শুরু করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোথাও সড়ক চলাচলে কোনো শৃঙ্খলা আছে বলে মনে হয় না। বেপরোয়া গাড়ি নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা নেই। চলছে ফিটনেসবিহীন অবৈধ যানবাহন। মূল্যবান প্রাণ যাচ্ছে সড়ক-মহাসড়কে। দেশের সড়ক পথ যেন মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে।
আরও পড়ুনআমাদের সড়ক-মহাসড়কগুলোকে যেন ইচ্ছা করেই মৃত্যুপুরীতে পরিণত করা হচ্ছে। এখানে কারো কোনো কর্তৃত্ব আছে বলে মনে হয় না। কারো যেন কোনো দায়িত্বও নেই। মানা হয়না ট্রাফিক আইন। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি যাত্রী বহন, গতিসীমা মেনে না চলার পাশাপাশি সড়ক পারাপারে পথচারীদেরও নিয়ম মেনে না চলার প্রবণতা আছে।
মহাসড়কে ধীরগতির যানবাহন চলাচল করছে। পুরো সড়ক পথেই বিশৃঙ্খলা বিদ্যমান। কিন্তু এসব দেখার যেন কেউ নেই। দেশে প্রতি বছর দুর্ঘটনায় ১৮ হাজারেরও বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। আহত হচ্ছে প্রায় সমান সংখ্যক মানুষ। অনেকেই চিরতরে পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে।
অনেক পরিবার সর্বস্বান্ত হচ্ছে। কিন্তু সড়কে শৃঙ্খলা ফিরছে না। বিভিন্ন গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, অধিকাংশ দুর্ঘটনার জন্য বাস-ট্রাক দায়ী হলেও এসব যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। দেশের সড়ক পথে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নেই। সড়ক-মহাসড়কে সিসি ক্যামেরা বসানো সম্ভব হয়নি। গতিসীমা অতিক্রমকারী যানবাহনের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো সুযোগও নেই।
ফলে রাস্তায় উঠেই চালকরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। অনেক বাস-ট্রাকে কারসাজি করে নির্ধারিত আয়তনের চেয়ে বড় করে বডি তৈরি করা হয়। এসব অনিয়ম ঘটছে চোখের সামনে। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো গেলে দুর্ঘটনা অনেক কমে যেত। সবাই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিলে রক্ষা পেত অনেক প্রাণ।
দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সড়ক-মহাসড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর বিকল্প নেই। জনসাধারণকেও পথ চলার নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে। তাদেরও ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে। হঠাৎ পথের মধ্যে চলে এলে অনেক সময় গাড়ি চাপা পড়ছে তারা।
যানবাহনের মালিক-শ্রমিকদের পাশাপাশি পথচারীদেরও দুর্ঘটনা প্রতিরোধে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। শৃঙ্খলা ফেরাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতার কোনো বিকল্প নেই।
মন্তব্য করুন