ওষুধের দাম বৃদ্ধি
ওষুধের দাম এখন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। বাংলাদেশ সরকারের পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, প্রায় ১৩ শতাংশ বা আড়াই কোটি মানুষ খরচের ভয়ে চিকিৎসা থেকে দূরে থাকেন। ওষুধের দাম এখন ক্ষণে ক্ষণে বাড়ছে, যা মানুষকে আরও অস্থির করে তুলছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওষুধ সেক্টরে দামের ক্ষেত্রে যে অস্থিরতা চলছে তা নিয়ন্ত্রণে সরকারের আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
কারণ ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। পত্র-পত্রিকার তথ্য মতে, রোগী বা ওষুধের ভোক্তাদের অভিযোগের সূত্র ধরে ওষুধের দোকান ঘুরে দেখা যায় অনেক ক্ষেত্রে একই ওষুধের একেক কোম্পানির একেক দামের চিত্র।
অভিযোগ রয়েছে, প্রায় আড়াইশ ওষুধ কোম্পানির মধ্যে মাত্র তিন চারটি ওষুধ কোম্পানি নিজেদের মতো দাম আকাশচুম্বী করে বাজারে অস্থিরতা বাড়িয়েছে। ওষুধ প্রশাসন কেন তাদের এত বেশি দাম বাড়ানোর সুযোগ দেয় সেটা খতিয়ে দেখা দরকার।
দেশে জীবন রক্ষাকারী বিভিন্ন ওষুধের দাম দফায় দফায় বাড়ছে। সরবরাহ নেই, এমন অজুহাতে ওষুধের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা। বিভিন্ন ওষুধের দাম বেড়েছে ৩০ শতাংশ। চাহিদা থাকা সত্ত্বেও সবাইকে প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া যাচ্ছে না। চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দুই শতাধিক ওষুধের দাম বেড়েছে বাজারে।
এতে অন্যান্য খরচের পাশাপাশি চিকিৎসা ব্যয়ও বাড়ছে মানুষের। কিছু অসংক্রামক রোগ আছে সেগুলোর জন্য রোগীকে সারা বছরই ওষুধ সেবন করতে হয়। বিশেষ করে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও কিডনি রোগীদের সারা বছরই ওষুধের ওপর চলতে হয়। ওষুধের মূল্যবৃদ্ধিতে এসব রোগীর ওপর খরচের চাপ বেড়েছে আরেকদফা।
আরও পড়ুনডলারের দাম বাড়ার প্রভাবে ওষুধের কাঁচামাল আমদানির ব্যয় বেড়েছে। তবে ওষুধের দাম বাড়ার পেছনে আগ্রাসী বাণিজ্য দায়ী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ওষুধের মোট বাজারের ২৯ শতাংশ ব্যয় হচ্ছে প্রমোশনাল খাতে। এই ব্যয় মানুষের ঘাড়ে চাপছে। আমরা মনে করি, ওষুধের বাজার শতভাগ সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিতে হবে এবং প্রতি বছর যৌক্তিকভাবে দাম সমন্বয় করতে হবে। এটি করা গেলে আগ্রাসী বাণিজ্য বন্ধ হবে এবং প্রমোশনাল ব্যয় অনেক কমবে।
পরিবর্তিত বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি আমাদের দেশেও মূল্যস্ফীতির উল্লম্ফন ঘটেছে। বস্তুত নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির প্রভাব নিম্ন আয়ের মানুষকে চরম দুরবস্থায় নিপতিত করেছে। বেকার ও আয়-রোজগার কমে যাওয়া জনগোষ্ঠী দৈনন্দিন খরচের টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছেন।
এর মধ্যে মূল্যস্ফীতির চাপে বড় ধরনের ভোগান্তিতে পড়েছে অনেক পরিবার। এ অবস্থায় এক সঙ্গে এতগুলো ওষুধের দাম বৃদ্ধি তাদের জীবনে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। দু:খজনক হলেও সত্য, দেশীয় কোম্পানিগুলো উৎপাদিত ওষুধের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে এক ধরনের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত রয়েছে; অথচ এ ক্ষেত্রে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ভূমিকা মোটেই সন্তোষজনক নয়, বিষয়টি নি:সন্দেহে দু:খজনক।
বস্তুত ১৯৮২ সালের ওষুধ নীতি কঠোরভাবে অনুসরণ করা হলে রোগী ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান উভয়ের স্বার্থই রক্ষা হবে। এ ব্যাপারে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
মন্তব্য করুন