যমুনা চরের নারীদের জীবনযুদ্ধ

প্রকাশিত: মে ২৬, ২০২৩, ০৩:১৮ দুপুর
আপডেট: মে ২৬, ২০২৩, ০৩:১৮ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতা : সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার ৬ টি ইউনিয়ন যমুনা নদীর চরাঞ্চলে অবস্থিত। নিত্য নতুন ভাঙন, বন্যা, বর্ষা, অতিবৃষ্টি আর অনাবৃষ্টি, যাতায়াত সমস্যার মতো বিরূপ প্রকৃতিকে জয় করে এই তল্লাটের নারীরা পুরুষের পাশাপাশি নিরন্তর পরিশ্রম করে চলেছেন। ভাঙন কবলিত যমুনা চরের পাঁচ সহস্রাধিক  নারীর বেঁচে থাকার সংগ্রাম চলে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এই সংগ্রাম পূর্বে শুধুমাত্র স্বামীর কাজের সহায়তার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন তার পরিধি অনেক বেড়েছে। পারিবারিক শিক্ষার পাশাপাশি সরকারের তরফ থেকে তাদের দেয়া হয়েছে নানা প্রশিক্ষণ। তৈরি করা হয়েছে তাদের কাজের নানাক্ষেত্র। শুধু সন্তান জন্মদান আর লালন পালনের মধ্যে তাদের দায়িত্ব শেষ নয়। নানামুখী প্রশিক্ষণে তারা যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে সংসারে নিজেদের একটি স্থান করে নিতে পেরেছেন।

ইউনিয়ন গভর্ন্যান্স প্রকল্পের মাধ্যমে ঠোঙ্গা ব্যাগ তৈরি, নকশী কাঁথা সেলাই, ধাত্রী প্রশিক্ষণ, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের অধীনে সেলাই প্রশিক্ষণ, বিউটিশিয়ান প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে গবাদি পশু পালনসহ আয় বর্ধক নানা প্রশিক্ষণও তারা নিয়েছেন।  প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যাসহ নানা প্রশিক্ষণে এখন তাদের হাত কর্মের হাতে পরিণত হয়েছে। সেইসাথে সরকারের নানামুখি কর্মসূচিতে তারা পুরুষের পাশাপাশি কাজ করে যাচ্ছেন। হাজেরা ,তফুরা, খোদেজা, চানভানু, করিমন বেগমদের মতো হাজারো নারীর জীবনের সংগ্রামী ইনিংস এখন অনেকটাই সমৃদ্ধ। নাটুয়ারপাড়া চরের পঁয়ত্রিশ বছরের তফুরা খাতুনের স্বামী রাজধানীতে রিকশা চালায়। তাদের ঘরের তিন সন্তান এখন স্থানীয় স্কুলে পড়ালেখা করছে। স্বামীর রোজগারে কোনমতে দু’বেলা পেটের ভাত জুটলেও সন্তানদের ভরণ পোষণসহ অন্যান্য ব্যয় মেটানোর জন্য ধাত্রী প্রশিক্ষণ নিয়ে নিরাপদ প্রসব ঘটানোর কাজ করছেন তিনি। সপ্তাহে তিন থেকে চারটি প্রসূতির নিরাপদ সন্তান প্রসব করান তিনি। চাইতে হয় না, ভালোবেসে তাকে যে টাকা ও অন্যান্য উপঢৌকন দেন তাতেই তার মাসে বেশকিছু টাকা রোজগার হয়।

তফুরা জানান, ‘বাপের ঘরে অনেক কষ্টে আছিলাম। ছোটবেলাতেই বিয়া হইছে। অভাব আর ক্ষিদা কি তা ভালো হইরাই জানি। ছলপলের বাপ রিকশা চালিয়ে যা আয় হরেন তা দিয়া সংসার খরচ চলে না। আমি দাই(ধাত্রী) টেরনিং (প্রশিক্ষণ) নিচি। এহন মানুষ আমায় ডাকে। আমি কাজ করি। তারা খুশি হয়্যা যা দেয় তাতেই আমার ছলপলের পড়ালেহার খরচ হয়্যা যায়। এহন ভালোই আচি। ফুলজোড় চরের রমিচা খাতুন জানান, ‘এইট পর্যন্ত পড়ার পরে বাপে বিয়া দিছে। স্বামী একটি অটোভ্যান চালান। তাতে করে শ্বশুর শাশুড়ি আর তিন সন্তান নিয়া চলা কঠিন। আমি উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার  অফিসের মাধ্যমে পার্লারের প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন এলাকায় বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে কনে সাজানোর কাজ করি। এছাড়া অনেকেই সখ করে সাজতে আমাকে ডাকে। আমি গিয়ে তাদের সাজিয়ে দেই। নিজের টাকা নাই । তাই দোকান করতে পারছি না। তবে এভাবে কাজ করেও আমি মাসে প্রায় আট থেকে নয় হাজার টাকা ইনকাম করি।

এতে করে আমাদের ভালোই চলে যাচ্ছে দিন। এছাড়া বেকার নারীরা কাজ পেয়েছেন রাস্তায় মাটি কাটার। দল বেঁধে তারা পুরুষের পাশাপাশি মাটি কাটার কাজ করছে। এতে করে মাসে তারা যা পায় তাতে করে অভাব আর তাদের ছুতে পারে না। কাজিপুর উপজেলা চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান সিরাজী জানান, আমি নিজেও চরাঞ্চলের মানুষ। তাই এই অঞ্চলের মানুষের কষ্টটা বেশি করেই বুঝি। আমরা উপজেলা পরিষদ থেকে তাদের উন্নয়নে নানা প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। সহজ শর্তে তাদের জন্যে ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে করে চরাঞ্চলের অনেক পরিবারেই এখন সমৃদ্ধির নতুন নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে। কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুখময় সরকার জানান, বর্তমান সরকার একটি পরিবারের প্রতিটি সদস্যের কথা চিন্তা করে নারীদেরও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কাজ করছে। 

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়