নওগাঁর গ্রামীণ নারীর হাতে তৈরি তালপাখা যাচ্ছে বিভিন্ন স্থানে

প্রকাশিত: মে ২৬, ২০২৩, ০৩:২০ দুপুর
আপডেট: মে ২৬, ২০২৩, ১১:৪৬ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

নবির উদ্দিন, নওগাঁ: নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে উত্তরগ্রাম ইউনিয়নের ভালাইন গ্রাম। প্রায় ৩০ বছর যাবত ওই গ্রামে তালপাখা বানানোর কাজ চলছে। সংসারের কাজের পাশাপাশি গ্রামের দরিদ্র নারীরা তালপাখা তৈরিকে এখন পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। সময়ের পরিক্রমায় গ্রামটি এখন ‘পাখা গ্রাম’ হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। গ্রীষ্মকালে বিশেষ করে বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আশ্বিন, কার্তিক ও চৈত্রসহ কয়েকটি মাসে প্রচন্ড তাপদাহ এবং ভ্যাপসা গরম পড়ে।

এসময় তালপাতা দিয়ে তৈরি হাত পাখার চাহিদা বহুগুণ বেড়ে যায়। তালপাখা তৈরি করে অনেকের সংসারে ফিরেছে স্বচ্ছলতা। পুরুষরা পাতা রোদে শুকিয়ে পানিতে ভেজানোর পর পরিষ্কার করে পাখার রূপ দেয় এরপর রং মিশ্রিত বাঁশের কাঠি, সুই ও সুতা দিয়ে পাখা বাঁধার কাজটা করেন গ্রামের নারীরা। এরপর সাংসারিক কাজের পাশাপাশি গৃহবধূরা পাখাকে সুই-সুতা দিয়ে সেলাই ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করে। একজন নারী প্রতিদিন ৮০ থেকে ১০০ পিচ পর্যন্ত পাখা তৈরি করতে পারে। ১০০টি হাত পাখার সুই-সুতা দিয়ে সেলাই ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজের বিনিময়ে ৭০ টাকা করে প্রদান করা হয়। বর্তমানে এ গ্রামের প্রায় ৭৫টি পরিবারের শতাধিক নারীরা তালপাখা তৈরির সাথে যুক্ত। তবে কাজের তুলনায় মুজরী খুবই কম বলে জানান এসব গ্রামীন নারী কারিগররা। অন্যদিকে পাখা তৈরীর সাথে যুক্ত স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন বিভিন্ন এনজিও (বেসরকারি সংস্থা) থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিতে গিয়ে লাভের একটি অংশ চলে যায় সেখানে। স্বল্প সুদে ঋণ ও সরকারি সহযোগিতার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় পাখা ব্যবসায়ীরা। স্বল্প সুদে ঋণ এবং সরকারি সুযোগ সুবিধা পেলে আরও এগিয়ে যাবেন বলে মনে করছেন পাখা তৈরীর সাথে যুক্তরা। তালপাখার কারিগর ভালাইন গ্রামের গৃহবধু শিউলি বেগম জানান গত ৬ বছর ধরে এ পেশার সাথে যুক্ত আছেন। পুরুষরা (পাখা ব্যবসায়ী ) পাখা তৈরীর উপকরণ তাল পাতা জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করেন। তাল পাখায় তৈরিতে মূলত কি ধরনের কাজ করা হয় এবং কেমন পারশ্রমিক পেয়ে থাকেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাখাকে সুই-সুতা দিয়ে সেলাই  করে পাখা বাঁধা ও  সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য পাখাতে রং করা হয়। একজন নারী প্রতিদিন ৮০ থেকে ১০০ পিচ পর্যন্ত পাখা তৈরি করতে পারে। ১০০টি হাত পাখার সুই-সুতা দিয়ে সেলাই ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজের বিনিময়ে ৭০-৮০ টাকা করে প্রদান করা হয়। ভালাইন গ্রামের নারীদের নিপুন এসব তালপাখার কাজ করে নেয় গ্রামের ৫-৭ জন স্থানীয় ব্যবসায়ী।

 তালপাখা দেশের বিভিন্ন স্থানে পাইকারি দরে বিক্রি করে থাকেন। তালপাখা ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি বলেন এসব তালপাখা চলে যায় রাজশাহী, ঢাকা, চট্রগাম, বরিশাল, সিলেট, রংপুরসহ কয়েকটি জেলায়। অনেক সময় পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসে নিয়ে যায়। অথবা তারা গাড়ি পাঠালে আমরা দিয়ে দেই। তবে পাখা তৈরীতে যে পরিশ্রম ও খরচ হয় সে তুলনায় দাম কম বলে জানিয়ে এ ব্যবসায়ী বলেন, প্রতিটি তালপাতা, বাঁশের কাঠি, সুতা,মোম,রং কারিগর খরচসহ প্রতি পিচ পাখায় খরচ পড়ে ৮-৯টাকা। এসব পাখা পাইকারী ব্যবসায়ীর ১০-১২টাকা পিচ হিসেবে কিনে নেয়। খুবই সীমিত লাভ আমাদের। বাপ-দাদার রেখে যাওয়া ব্যবসা করছি আজও কোন রকমে। প্রতিবছর প্রায় আমাদের এখান থেকে প্রায় ৪-৫ লাখ তালপাখা দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হয়ে থাকে।

সরকারিভাবে যদি একটু সহযোগিতা করা হতো তবে আমরা কাজগুলো আরও বৃহৎ পরিসরে ভালো ভাবে করতে পারতাম। স্থানীয় উত্তরগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হাসান মন্ডল বলেন ভালাইন গ্রামের শতাধিক নারী তালপাখা তৈরির সাথে যুক্ত। প্রায় ৩০-৩৫বছর যাবৎ এ গ্রামে পাখা তৈরি করা হচ্ছে। তেমন কোন সরকারি সহয়তা পায়নি পাখা তৈরির কারিগর ও ব্যবসায়ীরা। সহজ শর্তে ঝণসহ সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হলে এ ক্ষুদ্র কুঠির শিল্পে আরো প্রসার ঘটবে বলে মনে করি। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন নওগাঁর উপ-ব্যবস্থাপক শামীম আক্তার মামুন জানান দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি নিজেদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন করে চলেছেন তালপাখা তৈরীর কারিগর ও ব্যবসায়ীরা। ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্পের সাথে যারা যুক্ত তাদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করা হয়ে থাকে। 

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়