মোঃ কাজী আব্দুল্লা হিল আল কাফী
গ্রামের নাম ঝালপুর। গ্রামটি দেখতে খুবই সুন্দর ছিল। গ্রামে অনেক লোক বসবাস করতেন। গ্রামের রাস্তার পাশে একটি তেঁতুল গাছ ছিল। সেই তেঁতুল গাছে কয়েকটি ভূত বসবাস করতেন। ঐ রাস্তা দিয়ে সকল পথচারীদের ভয় দেখাতেন তেঁতুল গাছের ভূত। সবাই ভয়ে আতঙ্ক হয়ে থাকতেন।
একদিন পাশের গ্রামের এক বুড়ি ঐ রাস্তা দিয়ে হেঁটে হেঁটে তাঁর মেয়ের বাড়ি যাচ্ছিলেন। হঠাৎ করে ভূত দুটি গাছের আড়ালে বসে বুড়িকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে। বুড়ি ছিলেন বেশ চালাক চতুর সাহসী কোনো কিছুতেই সহজে ভয় পায় না। ভূত যতই চেষ্টা করলো ভয় দেখানোর জন্য ততই যেন বৃথা হয়ে গেল।
কিছুক্ষণ পরে বুড়ির সামনে চলে আসলেন দুটি ভূত। বুড়ি তাতেও ভয় করলেন না। বিভিন্নভাবে ভয় দেখানোর চেষ্টা করলো। শেষ পর্যন্ত ভয় দেখাতে পারলো না। সেদিনের জন্য বুড়িকে ছেড়ে দিলো।
সেদিন বুড়ির পিছনে গিয়ে বুড়ির মেয়ের বাড়ি ও বুড়ির বাড়ি দেখে আসলো ভূত। মেয়ের বাড়িতে বুড়ি বললেন কিছুদিন পর আমি আসবো তাতে তোর জন্য নানান রকম বাহারী পিঠা তৈরি করে নিয়ে আসবো। এ কথা ভূত শুনলো। এবং বুড়ির পিছন পিছন থাকলো কোনদিন পিঠা বানাবেন। আর কোনদিন মেয়ের বাড়ি নিয়ে যাবেন।
ভুতদের খাবারের খুবই অভাব ছিল। একদিন হঠাৎ করে বুড়ি পিঠা তৈরি করতে শুরু করলেন। একটি ভ’ত খবর পেয়ে বাকি ভূতদের সংবাদ দিলেন। সবাই মিলে একসাথে হয়ে বুদ্ধি করলেন। বুড়ির মেয়ে জামাই ও মেয়ের বাড়ির আত্বীয় হয়ে বুড়ির বাড়ি যাবেন
শেষে তাই হলো বুড়ির বাড়ি যাওয়ার জন্য সবাই প্রস্তুত হলো। সবাই নিজেদের রুপ পরিবর্তন করলেন। এবং বুড়ির বাড়ির দিকে রওনা হলো। কয়েক মিনিটের মধ্যে বুড়ির বাড়ি পৌঁছে গেলো। বুড়ি তাদের ডেকে বললেন আমি তোমাদের জন্য পিঠা বানিয়ে নিয়ে যাবো বলে পিঠা তৈরি করছি। তাতে তোমরা এসে হাজির হলে, যাই হোক ভালো হয়েছে।
অনেক পিঠা পুলি তৈরি করলেন সবাই মিলে খেতে শুরু করলেন। ভূতেরা যেভাবে পিঠা খেতে শুরু করলেভ। তখনই বুড়ির সন্দেহ হইলো এভাবে তো কোনো মানুষ খাবার খায় না।
এভাবেই একদিন বুড়ি মাছ এনেছেন এই মাছ দেখে ভুতরা তো অনেক খুশি । বুড়ি মাছ রাণ্ণা করে ঘরে রেখে একটু বাইরে গেলেন অল্প সময়ের মধ্যে দুই ভূত কাড়াকাড়ি করে মাছগুলো খেয়ে নিলো। একটু পর বুড়ি এসে দেখলেন মাছ নেই । তাদের জিজ্ঞাসা করলে বলে তারা জানে না।
বুড়ি আরও লক্ষ করলেন যে ভূতের আচার আচরণ একদম তার মেয়ের মতো না। সবসময়ই অন্য ভাবে থাকেন। বুড়ি ছিলেন অনেক চালাক। কয়েকদিন পরে বুড়ি চোর ধরার জন্য আবারও মাছ কিনলেন। তবে এবার মাছের সাথে প্রচুর পরিমাণ লঙ্কা যোগ করলেন। আজকেও মাছ দেখে ভূতরা মহাখুশি লঙ্কা মাখা মাছগুলো আবারও রাণ্ণা ঘরে রেখে দিয়ে বুড়ি বাইরে চলে গেলেন। দুই ভূত কাড়াকাড়ি করে মাছগুলো খেতে শুরু করলো। খেতে খেতে তাদের প্রচুর ঝাল লেগে যায়। দুই ভূতেই লাফালাফি শুরু করলেন। ঐ সময় বুড়ি ঘরে উপস্থিত এসে দেখে মাছ খেয়ে দুজনেই ঝালে লাফাচ্ছে
বুড়ি জিঙ্গাসা করলেন তোমরা লাফাচ্ছ কেন? ভূত বলে এমনিতেই, জামাই বললো অনেক দিন থেকে নাচ করি না তাই একটু নাচ করতেছি। তখন বুড়ি বললেন বাকি মাছগুলো কি হলো একজন তো ঝালের মুখে মুখ ফসকে বলে দিলেন আমরা খেয়েছি।
বুড়ি বললেন তোমরা আমার মেয়ের বাড়ির আত্বীয় স্বজন তোমরা কিভাবে কাঁচা মাছ খাচ্ছো । না তোমরা আমার অন্য কেউ । এর মধ্যে থেকে এক ভূত বললো আমরা হইলাম ভূত, পাশের গায়ের তেঁতুল গাছে থাকি। আমরা খাবারের অভাবে এখানে এসেছিলাম । বুড়ি সাহসের সাথে বললেন আমি আগেই বুঝতে পেরেছিলাম। যে তোমরা আমার মেয়ের বাড়ির আত্বীয় স্বজন না। তখনই ভূত লঙ্কাগুড়ার ভয়ে বুড়ির বাড়ি থেকে চলে গেলো । সেখানে গিয়ে তেতুল গাছের উপরে বসে দুই ভূতে ভাবছে বুড়িকে বোকা বানাবেন কিভাবে?
ভাবতে ভাবতে কয়েকদিন কেটে গেলো। তবুও কোনো বুদ্ধি বের করতে পারলো না। একদিন বুড়ি ঐ রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলো। ভূত গাছের ডালে বসে বসে চিন্তা করছে কিভাবে বোকা বানানো যাবে বুড়িকে। বুড়িকে ভয় দেখানোর জন্য পশুপাখি ও ভয়ঙ্কর ছদ্দবেশে ভয় দেখিয়েও বুড়িকে বোকা বানাতে পারেনি। শেষে ভূত হার মেনে সেই গ্রাম থেকে চলে যায়। তাই আমাদের বুড়ির মতো সাহসী হতে হবে। ভয় পেলে চলবে না বরং ভয়কে জয় করতে হবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।