কৃষকের বুদ্ধি

কানিজ ফাতেমা খুশী

প্রকাশিত: মার্চ ১৯, ২০২৩, ০৪:২৩ দুপুর
আপডেট: মার্চ ১৯, ২০২৩, ০৪:২৩ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

এক গ্রামে থাকে এক কৃষক। তার অনেকগুলো কৃষিক্ষেত। বহু বছর ধরে কৃষিকাজে কঠোর পরিশ্রম করছেন তিনি, আর প্রচুর পরিমাণে শস্য উৎপাদন করছেন। কৃষক কেবল ধনীই না, সন্তুষ্ট আর সুখীও। কারণ কৃষক বিশ্বাস করেন কঠোর পরিশ্রমেই সুখ অর্জন করা যায়।

কৃষকের তিন ছেলে। সবাই তার সাথে সুখে সংসার করছে। ছেলেরা কৃষিকাজে কঠোর পরিশ্রম করে এবং বাবাকে কৃষিকাজে সাহায্য করে। যখন কৃষকের ছেলেরা বড় হলো, কৃষক তাদের সবার জন্য উপযুক্ত মেয়ে খুঁজে বিয়ের ব্যবস্থা করলেন। সব ছেলেই নিজেদের সংসারে সুখী। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে বড় ও মেজ ছেলে কৃষকের সম্পদের প্রতি লোভী হয়ে ওঠে। সম্পদ বণ্টন নিয়ে তাদের বাড়িতে প্রায়ই মারামারি চলতে থাকে। এসব দেখে কৃষকের ছোট ছেলে খুবই দুঃখ পায়। একদিন সে তার বাবাকে এ ব্যাপারে কিছু করার অনুরোধ করে। এর সমাধান হওয়া উচিত, অন্য দুই সন্তানের মনে পরিশ্রমী জীবনের প্রতি শ্রদ্ধা জাগাতে হবে। কয়েকদিন পর কৃষক একটা কৌশল বের করলেন। রাতে সবাই খাওয়া দাওয়ার পর তিন ছেলেকে নিজের ঘরে ডাকলেন। টাকা ভাগাভাগি করার জন্য বাবা তাদের সবাইকে একা দেখা করার কথা জানিয়েছেন ভেবে সব ছেলে বাবার ঘরে চলে গেল। কৃষক তাদের জানাল, ক্ষেতে তিনটি ভিন্ন গাছের নিচে তিন ছেলের নামে গুপ্তধন লুকিয়ে রেখেছেন। এটাই সম্পদের বন্টন আর প্রত্যেককে ক্ষেতের মধ্যে তাদের নামের গাছ খুঁজে বের করতে হবে, আর গুপ্তধন জব্দ করতে হবে।

পরদিন সকালে তিন ছেলে ক্ষেতে যায়। বড় ছেলে কৃষকের বলা আম গাছের কাছে গেল। গাছের নিচে খুঁড়ে কিছু সোনার ইট পেল। এটা দেখে সে খুশি হলো। স্ত্রীর সহায়তায় সে সব ইট তুলে বাড়ির গোপন স্থানে লুকিয়ে রাখল।

মেজ ছেলেটা গেল ক্ষেতের নিম গাছে। এই গাছের নীচে জায়গা খনন করতে গিয়ে সে কিছু রূপার বাসন খুঁজে পায়। কাউকে কিছু না জানিয়ে ঘরের সব বাসনপত্র লুকিয়ে রাখল।

ছোট ছেলে স্ত্রীকে নিয়ে ক্ষেতের বড়ই গাছের কাছে গেল। সেখানে খননের সময়, তারা একটি লোহার লাঙ্গল আর বিভিন্ন লোহার সরঞ্জাম পেল যা কৃষিকাজে ব্যবহার করতে পারবে। এই সমস্ত সরঞ্জামগুলো দেখে, ছেলেটি বুঝতে পারল বাবা তাকে কী করতে বলছেন।

বড় ছেলে ও মেজ ছেলে সোনার ইট ও রূপার পাত্র বিক্রি করে তাদের কোষাগার থেকে প্রচুর অর্থ উপার্জন করল। কিন্তু আচমকা টাকা হজম করতে পারল না। বিভিন্ন অপব্যয়ে আসক্ত হয়ে পড়ল আর কয়েক মাসের মধ্যেই তাদের সংসার তছনছ হয়ে যায়।

ছোট ছেলে এসব দেখে খুব দুঃখ পেল। সে লোহার লাঙ্গল ও অন্যান্য যন্ত্রপাতির সাহায্যে ভালো চাষ শুরু করে। পরের বছর প্রচুর লাভবান হলো। লোহার লাঙ্গল তার জন্য সোনার লাঙ্গলে পরিণত হলো।
অবশেষে অন্য দুই ছেলে তাদের ভুলের জন্য অনুশোচনা করে আর কৃষকের কাছে ক্ষমা চাইল। কিন্তু এখন সময় কেটে গেছে। কারণ তারা এই নীতি ভুলে গেছে যে, কষ্টার্জিত অর্থ সর্বদা নিরাপদ আর সুখ নিয়ে আসে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়