বগুড়ায় তাপমাত্রা ৩৭.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস
হাফিজা বিনা : তপ্ত রোদের দখলে প্রকৃতি। বৃষ্টিপাতের আকাল দেখা দিয়েছে! বৃষ্টিহীন আবহাওয়ায় ভ্যাপসা গরমে রীতিমতো নাজেহাল সাধারণ মানুষ। বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্য এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে নাভিশ্বাস উঠেছে মানুষের। ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই।
মধ্যরাত পর্যন্ত তেতে থাকছে বিছানা-পত্তরও দেয়াল-মেঝে। তার ওপর দফায় দফায় বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ জনজীবন। কৃষিতে দেখা দিয়েছে সেচ সংকট। পানির অভাবে আমনের ক্ষেত শুকিয়ে যাচ্ছে। অতিরিক্ত সেচ দিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় বৃহস্পতিবারের চেয়ে আজ শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) তাপমাত্রা আরও বেড়েছে। আগামীকালও বৃষ্টিপাতের কোন সম্ভাবনা নেই বলেছে আবহাওয়া অফিস।
প্রকৃতিতে চলছে আশ্বিন মাস। তবুুও বাতাসে অতিরিক্ত জলীয়বাস্প ও অব্যাহত তাপদাহে বিপর্যস্ত জনজীবন। দিনের আলো ফোটার পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সূর্যের আলো যেন ঠিকরে পড়ছে। দীর্ঘক্ষণ রোদের মধ্যে থাকলে ফোস্কা পড়ে যাচ্ছে গায়ে। বাতাসও যেন আগুনের হলকা।
হঠাৎ নাকেমুখে লাগলে মনে হচ্ছে পুড়ে গেল। দুপুরের দিকে রোদের উত্তাপ এত বেশি উঠে যাচ্ছে যে, শরীর থেকে ফোটায় ফোটায় ঝরে পড়ছে ঘাম। ভিজে যাচ্ছে পরনের কাপড়। আজ শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সাপ্তাহিক ছুটির দিন দুপুরে শহরে মানুষের আনাগোনা কম ছিল।
একান্ত প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না। এরই মধ্যে দর দর করে ঘেমে পানি শূন্যতায় তপ্ত বাতাস সহ্য করতে না পেরে গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন শিশু ও বয়স্করা। এছাড়া, হৃদরোগে আক্রান্তের রোগি, জ্বর-সর্দি, চোখ ওঠা, অ্যাজমার মত ঘটনা বেশি চোখে পড়ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনে বৈরি হয়ে পড়েছে আবহাওয়া। এ কারণে গত এপ্রিল মাস থেকেই কারণে বাংলাদেশে শুরু হয় প্রচণ্ড গরম ও তাপদাহ। তা এখনও চলছে । উচ্চ তাপমাত্রার সাথে বাতাসে বেশি মাত্রার আর্দ্রতার কারণে গরমের অনুভূতি বেড়েছে। বেশি আর্দ্রতার কারণে ঘাম শুকাতে পারছে না বলে মানুষের মধ্যে অস্বস্তি বেশি হচ্ছে।
এ দিকে বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং মানুষের বিরক্তির মাত্রা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। যারা রোদে বেশিক্ষণ চলাফেরা করে অথবা উত্তপ্ত পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে তাদের গায়ের খালি অংশে ফোস্কা পড়ে যাচ্ছে। হাতের যে পিঠে রোদ লাগে সেখানে ফোস্কা পড়ে কালো হয়ে যাচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, রোদে কাজ করতে যারা বাধ্য হচ্ছেন তাদের উচিৎ প্রচুর পানি পান করা এবং কিছুক্ষণ পরপর ছায়ায় বিশ্রাম নিয়ে আবার কাজ করা।
আরও পড়ুনএদিকে আবহাওয়ার এমন বৈরিতার জন্য উত্তরাঞ্চল জুড়ে রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছে প্রকৃতি। এবছর আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে দেখা মেলেনি কাক্ষিত বৃষ্টির। সেই একই ধারাবাহিকতায় ভাদ্র মাসও পার করেছে তপ্ত ৩০ দিন। হাঁসফাঁস করছে মানুষ ও ছটফট করছে পশুপাখিরা। ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই। একটু-আধটু ঝিরিঝিরি বৃষ্টির দেখা মিললেও পরক্ষণেই রোদ উঠছে প্রচন্ড তাপ নিয়ে।
বাতাসে প্রচুর জলীয় বাষ্প থাকায় আঁচটা খুব বেশি। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় প্রতিদিনই বাড়ছে তাপমাত্রা। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে কর্মজীবী মানুষের জীবন। তারা বাইরে বের হলেই অতিরিক্ত ঘামে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। ক্লান্তি দূর করতে কেউ কেউ রাস্তার পাশে সস্তার পানীয় পান করছেন।
প্রচন্ড রোদ ও বৃষ্টিহীনতায় আমন মৌসুমে সবচেয়ে বেশি বিপাকে রয়েছে কৃষক। বৃষ্টি নেই। সেচ খরচ বেড়ে উৎপাদন খরচও বাড়ছে। বগুড়ার সদরের শাজাহানপুর এলাকার কৃষক ছামছুল শেখ জানান, আমন মৌসুমে তারা অনেকটাই প্রকৃতির ওপর নির্ভর করেন। কিন্তু এবার প্রকৃতি বিপক্ষে গেছে। উৎপাদন খরচ দিয়ে চাষ করা মনে হয় বৃথা হবে।
বগুড়া আবহাওয়া অফিস জানায়, আজ এবং আগামীকাল বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই বগুড়ায়। বৃষ্টিপাত হলে তাপমাত্রা কমবে। আজ শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) বগুড়ার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৮ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
গতকাল বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা ছিল ৩৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস। বাতাসে সকাল ৬টায় আদ্রতা ছিল ৯০ শতাংশ, ৯টায় ৭২ শতাংশ এবং ৩টায় আর্দ্রতা ছিল ৫৮ শতাংশ।
মন্তব্য করুন