মহালয়া আসলে কী?
ধর্ম ডেস্ক : মহালয়া ' শব্দটির অর্থ- মহান যে আলয় বা আশ্রয়। ‘মহালয়া' শব্দটিকে স্ত্রীলিঙ্গবাচক শব্দ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কারণ এই দিনেই পিতৃপক্ষের অবসান হয় এবং অমাবস্যার অন্ধকার দূর হয়ে আলোকময় দেবীপক্ষের শুভারম্ভ হয়। এখানে দেবী দুর্গাই হলেন সেই মহান আলয় বা আশ্রয় ।
ত্রেতা যুগে ভগবান শ্রীরামচন্দ্র অকালে দেবীকে আরাধনা করেছিলেন লঙ্কা জয় করে সীতাকে উদ্ধারের জন্য । আসল দুর্গা পূজা হলো বসন্তে, সেটাকে বাসন্তী পূজা বলা হয়। শ্রীরামচন্দ্র অকালে-অসময়ে পূজা করেছিলেন বলে এই শরতের পূজাকে শারদীয় পূজা ও দেবীর অকাল-বোধন বলা হয়।
বাঙালির সবচেয়ে বড় পার্বণ দুর্গাপুজোর আমেজ শুরু হয়ে যায় মহালয়া থেকেই। ভোর চারটেয় রেডিওতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের উদাত্ত কণ্ঠে ‘মহিষসুরমর্দিনী’ এবং আগমনীর গানে যার সূত্রপাত।
পিতৃপক্ষের শেষ লগ্নে পুর্বসূরিদের উদ্দেশ্যে অনেকেই তর্পণ করে থাকেন মহালয়ায়। ‘তর্পণ’ কথাটির অর্থ হল তৃপ্তির উদ্দেশ্যে জলদান। অর্থাৎ মৃত পুর্বপুরুষদের অতৃপ্ত আত্মাকে এই জলদানের মাধ্যমে তৃপ্ত করা হয়। হিন্দু শাস্ত্র মতে মনে করা হয়, এ দিন পূর্বজদের অতৃপ্ত আত্মা মনুষ্য লোকের কাছাকাছি আসে।
আরও পড়ুনশাস্ত্রে পঞ্চমহাযজ্ঞের বিধানও দেওয়া হয়েছে। তবে এই জলদান শুধু পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যেই নয়, সর্বভূতের উদ্দেশ্যেই করা হয়। প্রয়াত পুর্বপুরুষদের প্রতি জলদান করার কারণেই এই রীতিকে শ্রাদ্ধের সঙ্গে তুলনা করে অনেকেই মহালয়াকে শোকের দিন মনে করেন। ফলে তা কখনওই শুভেচ্ছা জানানোর দিন হতে পারে না বলে তাঁদের বিশ্বাস।
আবার অন্য দিকে, এই দিনটিই দেবীপক্ষের সূচনালগ্ন। মনে করা হয়, এই দিনে দেবতাদের বর লাভ করে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধে জেতেন দেবী দুর্গা। একে শুভক্ষণ হিসেবেই চণ্ডীপাঠ করার নিয়ম প্রচলিত। এই দিন থেকে অনেক জায়গাতেই দুর্গাপুজোর আচার শুরু হয়ে যায়। সে কথা মাথায় রেখে একাংশের মত, মহালয়া শুভদিন।
তবে শাস্ত্রমতে এই জলদান এক মহামিলনক্ষেত্র রচনা করে, যা একেবারেই অশুভ নয়। ফলে এই শুভ-অশুভের ধারণা ব্যক্তিগত দর্শনের উপরেই নির্ভর করে। এতে মহালয়ার তাৎপর্য একই রকম থাকে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের একাংশের।
মন্তব্য করুন