ফারিহার পথচলার গল্প
সাজেদুর আবেদীন শান্ত: নারীর ক্ষমতায়ন এবং উদ্যোক্তা হিসেবে সাফল্য অর্জন করা শুধু নিজের জন্য নয়, সমাজ ও দেশের জন্য একটি বিশাল অবদান। ফারিহা বিনতে আহসান সেই সকল নারীদের মধ্যে অন্যতম, যিনি সমাজের প্রচলিত ধ্যান-ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন একজন সফল উদ্যোক্তা এবং পেশাজীবী হিসেবে। তার গল্প শুধু একজন উদ্যোক্তার নয়, এটি একজন নারীর সাহসী যাত্রার গল্প, যিনি নিজের সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য বেছে নিয়েছেন উদ্যোক্তা জীবন।
ফারিহার উদ্যোক্তা জীবনের শুরু হয়েছিল তার অসুস্থতার মধ্য দিয়ে। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে যখন তিনি সুস্থতার জন্য লড়াই করছিলেন, তখন সেখানে তাকে খাবারের স্বাদহীনতা ভাবিয়ে তোলে। তিনি অনুভব করেন, স্বাস্থ্যকর খাবারও হতে পারে সুস্বাদু এবং উপভোগ্য। এ চিন্তা থেকেই শুরু হয় তার নতুন স্বপ্ন গার্নিশ অ্যান্ড স্পাইস ক্যাটারিং সার্ভিস। ২০১৯ সালে তিনি উদ্যোগটি শুরু করেন। যেখানে তিনি স্বাস্থ্যকর খাবারকে মজাদার ও মুখরোচক করে পরিবেশন করার লক্ষ্য স্থির করেন।
২০২০ সালে কোভিড-১৯ এর সময় ফারিহার উদ্যোগ একটি নতুন মাত্রা পায়। মহামারীর সময়ে আক্রান্ত পরিবারগুলোর জন্য স্বাস্থ্যসম্মত ও সহজলভ্য মূল্যে খাবার সরবরাহ করেন তিনি। শুধু তাই নয়, হাসপাতালগুলিতে তিনি স্বাস্থ্যসম্মত খাবার সরবরাহ করে সবার আস্থা অর্জন করেন এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এতে সফল হোন।
ফারিহার আরেকটি উদ্যোগ হল দেশের বেকার যুবক এবং নারীদের জন্য প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে তাদের কর্মক্ষম করে তোলা। এ জন্য তিনি শেফ কোর্সও পরিচালনা করে থাকেন। এ পর্যন্ত তিনি ৫শ’রও অধিক বেকার যুবক ও নারীকে প্রশিক্ষন দিয়েছেন। যার মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন, আবার কেউ কেউ নিজ উদ্যোগেই ব্যবসা পরিচালনা করছেন।
ফারিহা বলেন, ‘দেশের বেকারত্ব ঘোচানোর একমাত্র মাধ্যম হল স্বল্প আয়ে ক্ষুদ্র ব্যাবসা পরিচালনা করা এবং ধীরে ধীরে এই ব্যাবসাগুলোর একটা চেইনে আনা। যখন তা চেইনে আসবে তখন আর বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা নিয়ে চিন্তা করতে হবেনা।
ফারিহা আরও বলেন, ‘আর এই ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনা করতে দরকার প্রশিক্ষণ। তাই হাতে কলমে শেখার জন্য ছোট ছোট এ ব্যবসাগুলোর জন্য প্রশিক্ষন নিতে হয়’।
ফারিহা তার জীবনকে শুধু নিজের জন্য সীমাবদ্ধ রাখতে চাননি। তার উদ্যোক্তা হওয়ার প্রধান কারণ হল, তিনি অনেকের মৌলিক চাহিদার যোগান দিতে চান, যা চাকরির মাধ্যমে সম্ভব ছিল না। আর ফারিহার এই যাত্রার সবচেয়ে বড় প্রেরণা তার বাবা-মা।
তার মা তাকে শিখিয়েছেন ধৈর্য্য এবং একতা, আর তার বাবা তাকে শিখিয়েছেন সবার মুখে খাবার তুলে দেওয়ার মহান আদর্শ। ফারিহা বিশ্বাস করেন, একা ভালো থাকা সম্ভব নয়, ভালো থাকতে এবং ভালো কিছু করতে হলে দরকার একতা ও সম্মিলিত প্রচেষ্টা।
আরও পড়ুনফারিহার জন্ম ও বেড়ে উঠা বগুড়ায়। তিনি বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও একটি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ফুড এন্ড বেভারেজ প্রোডাকশনে স্নাতক করছেন।
বর্তমানে ফারিহা উদ্যোক্তার পাশাপাশি প্রফেশনাল শেফ হিসেবে কাজ করছেন। এছাড়াও রেস্টুরেন্ট কাউন্সিলর, ফুড এন্ড সেফটি ট্রেইনার এবং এসেসর হিসেবেও পরিচিত।
ফারিহা বিনতে আহসানের সংগ্রামী যাত্রা প্রতিটি নারীর জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। তার সাহস, ধৈর্য এবং সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ তাকে একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
মন্তব্য করুন