ভিডিও বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

গর্ভাবস্থায় গর্ভের পানি বেড়ে গেলে যেসব সমস্যা হয়

গর্ভাবস্থায় গর্ভের পানি বেড়ে গেলে যেসব সমস্যা হয়

স্বাস্থ্যকথা ডেস্ক : গর্ভাবস্থায় গর্ভের ভেতরে শিশুর চারপাশে যে তরল ঘিরে থাকে তাকে অ্যামনিওটিক তরল বলে। শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশে এ তরল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে গর্ভে স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত অ্যামনিওটিক তরল থাকলে তাকে মেডিকেলের ভাষায় ‘পলিহাইড্রামনিওস’ বলে। 
সাধারণত গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় অর্ধাংশে এ সমস্যা দেখা যায়। কখনো কখনো আরও আগে, যেমন ১৬ সপ্তাহের দিকেও এ সমস্যা দেখা যেতে পারে। সাধারণত গর্ভকালীন চেক আপে গেলে এ সমস্যা নির্ণয় করা হয়। অ্যামনিওটিক তরল অল্প পরিমাণ বাড়লে সাধারণত তেমন কোনো সমস্যা হয়না। 
পলিহাইড্রামনিওস খুব জটিল কোনো বিষয় না হলেও এক্ষেত্রে অতিরিক্ত চেক আপ ও হাসপাতালে ডেলিভারির প্রয়োজন হতে পারে। চেক আপে গেলে চিকিৎসক আপনাকে মনিটর করে আপনার সমস্যা অনুযায়ী চিকিৎসাও দিতে পারবেন।

গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত অ্যামনিওটিক তরল হবার কারণ সবসময় জানা না গেলেও নিচের কারণগুলো এর পেছনে দায়ী হতে পারে বলে ধারণা করা হয়:

মায়ের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কারণ: জমজ বা একাধিক গর্ভধারণ করলে। মায়ের আগে থেকে ডায়াবেটিস থাকলে বা গর্ভকালীন ডায়াবেটিস দেখা দিলে (বিশেষ করে ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকলে। গর্ভকালীন ইনফেকশন হলে।

সন্তানের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কারণ : শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশ সংক্রান্ত কিছু জটিলতার কারণেও পলিহাইড্রামনিওস হতে পারে। সাধারণত গর্ভের ভিতরে শিশু অ্যামনিওটিক তরল গিলে ফেলে এবং প্রস্রাব হিসেবে বের করে দেয়ার মাধ্যমে এর পরিমাণের ভারসাম্য রক্ষা করে। শিশুর কোনো কারণে গিলতে অসুবিধা হলে অ্যামনিওটিক তরল বেড়ে গিয়ে পলিহাইড্রামনিওস হতে পারে। যেমন-শিশুর পরিপাকনালীতে ব্লক হয়ে যাওয়া যাকে ‘গাট এটরেশিয়া’ বলে। শিশুর গিলতে অসুবিধা হয় এমন কোনো সমস্যা যেমন- কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র বা ক্রোমোজোমের সমস্যা। শিশুর রক্তের গ্রুপ বা ফ্যাক্টরজনিত জটিলতা। টুইন টু টুইন ট্রান্সফিউশন সিনড্রোম, এক্ষেত্রে যমজ শিশুরা একই গর্ভফুল ভাগাভাগি করে। শিশুর হৃদরোগ, শিশুর ইনফেকশন।

জটিলতা: অধিকাংশ পলিহাইড্রামনিওসের মায়েরা গর্ভাবস্থায় সুস্থ থাকেন এবং সুস্থ, স্বাভাবিক শিশু জন্ম দেন। তবে এসময় কিছু জটিলতা হবার ঝুঁকিও বেড়ে যায়। পলিহাইড্রামনিওসের ফলে জরায়ু আকারে অতিরিক্ত বেড়ে গেলে এসব সমস্যা হবার সম্ভাবনা থাকে। এ সময় জরায়ু আশেপাশের অঙ্গে চাপ দিয়ে এসব সমস্যা করতে পারে। যেমন-মায়ের শ্বাসকষ্ট, অকাল প্রসব বা ৩৭ সপ্তাহের আগেই প্রসব, নির্ধারিত সময়ের আগে পানি ভাঙা, মায়ের উচ্চ রক্তচাপ, মায়ের প্রস্রাবের নালীর ইনফেকশন, ম্যাল পজিশন বা প্রেজেন্টেশন অর্থাৎ গর্ভের শিশুর স্বাভাবিকের চেয়ে ভিন্ন পজিশনে থাকা, প্রসবের আগেই জরায়ুমুখ দিয়ে নাড়ি বেরিয়ে আসা (কর্ড প্রলাপ্স), ডেলিভারির পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, শিশুর শারীরিক সমস্যা, মায়ের ডায়াবেটিসের কারণে শিশুর মাথা বড় হয়ে যাওয়া যাকে ম্যাক্রোসোমিয়া বলে।

লক্ষণ: অ্যামনিওটিক তরল খুব অল্প পরিমাণ বাড়লে তেমন কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায়না। তবে খুব বেশি পরিমাণ অ্যামনিওটিক তরল হয়ে গেলে নিচের লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে পারে। পেট ব্যথা বা পেট টাইট হয়ে আসা, শ্বাসকষ্ট, বুক জ্বালা পোড়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি প্রস্রাব ত্যাগ করা, পা, পায়ের পাতা ও যোনিমুখ (যৌনাঙ্গের বাইরের অংশ) ফুলে যাওয়া। অতিরিক্ত অ্যামনিওটিক তরলের ফলে জরায়ু অতিরিক্ত বড় হয়ে আশেপাশের অঙ্গ যেমন পাকস্থলী, ফুসফুস, মুত্রথলি, মলাশয়ে চাপ দেয়। বাড়তি চাপ থেকেই মূলত এসব লক্ষণ দেখা যায়। এই প্রত্যেকটি লক্ষণই স্বাভাবিক গর্ভাবস্থায়ও হতে পারে। তাই এসব লক্ষণ দেখা গেলে দুশ্চিন্তা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

আপনার চিকিৎসক মূলত তিনটি লক্ষণ থেকে আপনার পলিহাইড্রামনিওস হবার কথা চিন্তা করতে পারেন। আপনার পেট আপনার গর্ভাবস্থার সময়কালের তুলনায় অতিরিক্ত বড় হলে, আপনার শিশুর হার্টবিট শুনতে না পেলে, গর্ভে আপনার শিশুর অবস্থান বের করা না গেলে।

পলিহাইড্রামনিওস নির্ণয়ের উপায়

অ্যামনিওটিক ফ্লুইড ইনডেক্স: রুটিন আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যানের মাধ্যমে গর্ভের অ্যামনিওটিক তরলের পরিমাণ নির্ণয় করা যায়। একে অ্যামনিওটিক তরল ইনডেক্স বা অঋও বলা হয়। একটি স্বাভাবিক গর্ভাবস্থার জন্য অ্যামনিওটিক ফ্লুইড ইনডেক্সের পরিমাণ ৫ সেমি থেকে ২৫ সেমি। অ্যামনিওটিক তরলের পরিমাণ ৫ সেমির কম হলে ‘অলিগোহাইড্রামনিওস’ ও ২৫ সেমির বেশি হলে ‘পলিহাইড্রামনিওনস’ বলা হয়। গর্ভাবস্থার ২৪ সপ্তাহের পর থেকে এ পরীক্ষা করা হয়।

অন্যান্য পরীক্ষা: আপনার লক্ষণ এবং আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা থেকে চিকিৎসক যদি মনে করেন আপনার পলিহাইড্রামনিওস হয়েছে, সময় ও অবস্থার উপর ভিত্তি করে তিনি কারণ নির্ণয়ের জন্য আরো পরীক্ষার পরামর্শ দিতে পারেন। যেমন রক্ত পরীক্ষা: পলিহাইড্রামনিওসের সাথে কোনো সংক্রামক রোগের সম্পর্ক আছে কিনা সেটি যাচাই করা হবে।

গ্লুকোজ চ্যালেঞ্জ টেস্ট: এটি থেকে আপনার ডায়াবেটিস আছে কিনা যাচাই করা হবে

অ্যামনিওসেনটেসিস: আপনার জরায়ু থেকে অ্যামনিওটিক তরল নিয়ে পরীক্ষা করা হবে। অ্যামনিওটিক তরলে ফিটাস বা আপনার শিশুর বিভিন্ন কোষ এবং রাসায়নিক পদার্থ থাকে। এসব থেকে আপনার শিশুর কোনো জেনেটিক সমস্যা আছে কিনা সেটি যাচাই করা হবে

আরও পড়ুন

নন স্ট্রেস টেস্ট: এসময় বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করে আপনার শিশুর নড়াচড়ার সাথে হার্টরেটের সম্পর্ক দেখা হয়। এর মাধ্যমে শিশুর হার্টরেটে কোনো অস্বাভাবিকতা আছে কিনা সেটি যাচাই করা হবে
ডপলার আল্ট্রাসাউন্ড: আরো গভীর আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষার মাধ্যমে আপনার শিশুর শরীরের রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থা ঠিক আছে কিনা যাচাই করা হবে

চিকিৎসা: অ্যামনিওটিক তরল অল্প পরিমাণ বাড়লে তেমন চিকিৎসার প্রয়োজন হয়না। আপনাআপনিই সেরে যায়। কোনো অসুখের কারণে পলিহাইড্রামনিওস হলে যেমন ডায়াবেটিসের কারণে পলিহাইড্রামনিওস হলে সেটির চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। তবে আপনার যদি অতিরিক্ত তরল বেড়ে যায় এবং নিচের লক্ষণগুলো দেখা যায় সেক্ষেত্রে হাসপাতালে চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।

চিকিৎসক পলিহাইড্রামনিওসের চিকিৎসা হিসেবে নিচের পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করতে পারেন।

অ্যামনিওসেনটেসিস:  চিকিৎসক গর্ভের ভেতর থেকে অতিরিক্ত অ্যামনিওটিক তরল বের করে ফেলতে পারেন, এ পদ্ধতিকে মেডিকেলের ভাষায় ‘অ্যামনিওসেনটেসিস’ বলে। তবে এই পদ্ধতির কিছু ঝুঁকি থাকতে পারে। যেমন-অকাল প্রসব, নির্ধারিত সময়ের আগে পানি ভাঙা, নির্ধারিত সময়ের আগে গর্ভফুল আলাদা হয়ে যাওয়া।

ঔষধ: চিকিৎসক প্রয়োজনে আপনাকে মুখে খাওয়ার ‘এন্ডোমিথাসিন’ নামের ঔষধ দিতে পারেন। এটি ৪৮ ঘন্টা পর্যন্ত ব্যবহার হয়, যেটি জরায়ু সংকোচন ও অ্যামনিওটিক তরলের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। তবে এটি অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করতে হবে এবং ব্যবহারের পূর্বে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জেনে নিতে হবে।

পলিহাইড্রামনিওসের চিকিৎসার পর প্রতি ১ থেকে ৩ সপ্তাহ পরপর আপনার অ্যামনিওটিক তরলের পরিমাণ পরিমাপ করা হবে। যদি আপনার মৃদু পলিহাইড্রামনিওস থাকে সেক্ষেত্রে গর্ভাবস্থার ৩৯ থেকে ৪০ সপ্তাহের মধ্যে আপনার ডেলিভারি করানো হতে পারে। তবে পলিহাইড্রামনিওসের অবস্থা গুরুতর হলে আপনার ও আপনার শিশুর স্বাস্থ্যের দিক বিবেচনায় ডেলিভারি সময় আরও এগিয়ে আনার প্রয়োজন হতে পারে।

সম্ভাব্য পরিস্থিতির জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকুন: আপনার গর্ভের শিশুর অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য অতিরিক্ত চেক আপ ও অতিরিক্ত আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যান করানোর প্রয়োজন হতে পারে। পলিহাইড্রামনিওসের কারণ খোঁজার জন্য অতিরিক্ত পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে যেমন- আপনার ডায়াবেটিস বা রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণের পরীক্ষা, অ্যামনেওসেনটেসিস বা আপনার অ্যামনিওটিক তরল বের করে পরীক্ষা করা হতে পারে। পরীক্ষা নিরিক্ষার পর কোনো কারণ পাওয়া গেলে সেটির চিকিৎসা নিতে হতে পারে। যেমন- মাতৃত্বকালীন ডায়াবেটিস হলে আপনার ডায়াবেটিসের চিকিৎসা শুরু করতে হবে।

আপনার অতিরিক্ত বেশি অ্যামনিওটিক তরল হয়ে গেলে কখনো কখনো চিকিৎসক সুই দিয়ে অতিরিক্ত তরল বের করে ফেলতে পারেন বা অতিরিক্ত তরল তৈরি না হবার চিকিৎসা দিতে পারেন।
প্রসব পরিকল্পনা ঃ আপনার পলিহাইড্রামনিওস হলে আপনাকে হাসপাতালে সন্তান প্রসবের পরামর্শ দেওয়া হবে। এতে করে ডেলিভারিতে আপনার কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হলে সেটির ব্যবস্থা করা যাবে। সাধারণত প্রসবের আগে প্রাকৃতিকভাবে প্রসব বেদনা উঠা পর্যন্ত আপনাকে অপেক্ষা করতে বলা হবে। তবে আপনার ও আপনার গর্ভের সন্তানের কোনো ঝুঁকি থাকলে আগেই কৃত্রিমভাবে প্রসব বেদনা উঠানো হতে পারে কিংবা সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে ডেলিভারি করা হতে পারে।

স্বাভাবিক প্রসবের চেয়ে পলিহাইড্রামনিওসের ক্ষেত্রে পানি ভাঙার পর অতিরিক্ত তরল যেতে পারে। এটি একেবারেই স্বাভাবিক, ভয়ের কিছু নেই। তবে এসময় আপনার শিশুর হার্টরেট গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন হবে। ডেলিভারির পর আপনার শিশুকে বিশেষ কিছু পরীক্ষা করা হতে পারে। যেমন শিশুর গলা দিয়ে চিকন নল ঢুকিয়ে পেটে বা পরিপাকনালিতে কোনো সমস্যা আছে কিনা সেটা পরীক্ষা করতে হতে পারে।

 

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সিইসি হলেন এ এম এম নাসির উদ্দীন

সব রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখব : প্রধান উপদেষ্টা

মহাখালী থেকে রিকশাচালকদের সেনাবাহিনীর ধাওয়া 

জামিন পেয়েছেন সাংবাদিক শফিক রেহমান

ডক্টর হলেন ক্রিকেটার মঈন আলী

মেসিদের কোচের তালিকায় জিদান-জাভি-মাসচেরানোর নাম