ভিডিও মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্রে যেভাবে নির্বাচিত হবেন প্রেসিডেন্ট

যুক্তরাষ্ট্রে যেভাবে নির্বাচিত হবেন প্রেসিডেন্ট, ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। এই নির্বাচনকে ঘিরে দুই প্রার্থী বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিস ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উভয়ই শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। দেশটির ভোটাররা স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) তাদের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে ভোট দিচ্ছেন।

কিন্তু যে প্রার্থী সবথেকে বেশি ভোট পাবেন, তিনিই যে জয়ী হবেন, এমন নিশ্চয়তা নেই। এর কারণ হলো ভোটাররা সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন না। ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ নামে এক পদ্ধতিতে হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। মূলত যুক্তরাষ্ট্রে ভোটদাতারা সরাসরি প্রেসিডেন্ট বা ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে পারেন না, ভোট হয় ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ নামের একটি পদ্ধতির মাধ্যমে। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্য মিলিয়ে মোট ৫৩৮ জন ইলেক্টর রয়েছেন।

‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ কী?
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা যখন নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেবেন, বেশিরভাগই হয় ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমালা হ্যারিস অথবা রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দেবেন। তবে এদের দু’জনের মধ্যে কে জয়ী হবেন, সেটা ভোটারদের দেওয়া ভোটে সরাসরি নির্ধারিত হবে না। জাতীয় স্তরের নির্বাচনী লড়াইয়ের বদলে জয়ী-পরাজিত নির্ধারিত হবে একেকটি অঙ্গরাজ্যের নির্বাচনী লড়াইয়ের মাধ্যমে। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের একটিতে জয়ী হওয়ার অর্থ একজন প্রার্থী সেই অঙ্গরাজ্যের সবকটি ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ ভোট পেয়ে যাবেন। ইলেক্টোরাল কলেজের মোট ভোটের সংখ্যা ৫৩৮। মাইন ও নেব্রাসকা এই দুটো অঙ্গরাজ্য বাদে বাকি সবগুলো রাজ্যের ইলেক্টোরাল ভোট যোগ দিলে যে প্রার্থী ২৭০টি বা তারও বেশি ভোট পাবেন তিনিই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন। সেই প্রার্থীর রানিং মেট হয়ে যাবেন ভাইস-প্রেসিডেন্ট।

কীভাবে কাজ করে ইলেক্টোরাল কলেজ?
প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের বেশ কয়েকটি করে ইলেক্টোরাল ভোট থাকে, যা ওই অঙ্গরাজ্যের জনসংখ্যার মোটামুটিভাবে সমানুপাতিক হয়। ক্যালিফোর্নিয়ার হাতে সর্বাধিক ৫৪টি এবং ভায়োমিং, আলাস্কা এবং নর্থ ডাকোটা (এবং ওয়াশিংটন ডিসি)-র মতো যেসব অঙ্গরাজ্যের জনসংখ্যা খুবই কম, তাদের হাতে অন্তত তিনটি ইলেক্টোরাল ভোট আছে। সাধারণত অঙ্গরাজ্যগুলো তাদের হাতে থাকা ইলেক্টোরাল ভোট সেই প্রার্থীকেই দেয়, যিনি ওই অঙ্গরাজ্যের ভোটারদের সরাসরি ভোটে জয়ী হয়েছেন। 

আরও পড়ুন

ধরা যাক, টেক্সাসে একজন প্রার্থী ভোটারদের সরাসরি ভোটের ৫০.১% পেয়েছেন, তাকে ওই অঙ্গরাজ্যের হাতে থাকা ৪০টি ইলেক্টোরাল ভোটের সবগুলোই সেই প্রার্থী পেয়ে যাবেন। একটি অঙ্গরাজ্যে জয়ের ব্যবধান যদি বিরাট হয়ও, তাহলেও জয়ী প্রার্থী অতগুলো ইলেক্টোরাল ভোটই পাবেন। মূলত ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ হচ্ছে কর্মকর্তাদের একটি প্যানেল, যাদের ‘ইলেকটরস্’ বলা হয়, এরা এক কথায় নির্বাচকমণ্ডলী। প্রতি চার বছর পর পর এটি গঠন করা হয় এবং এরাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্টকে বাছাই করেন। ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতি অনুযায়ী, যেসব রাজ্যে জনসংখ্যা বেশি, সেসব রাজ্যে ইলেক্টোরাল ভোটও বেশি। এই প্রথা শুধুমাত্র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্যই ব্যবহৃত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের অন্য সব নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয় সরাসরি মানুষের ভোটেই।

লাখ লাখ ভোট বেশি পেয়েও পরাজিত হতে পারেন কোনও প্রার্থী
লাখ লাখ ভোট বেশি পেয়েও অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেয়েও মার্কিন নির্বাচনে পরাজিত হতে পারেন যেকোনও প্রার্থী। একজন প্রার্থী সারা দেশে হয়ত কম ভোট পেয়েছেন, কিন্তু বেশ কতগুলো কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়ে একজন প্রেসিডেন্ট হয়ে যেতে পারেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৬ সালে হিলারি ক্লিনটনের থেকে প্রায় ৩০ লাখ কম ভোট পেয়েও জয়ী হয়েছিলেন। জর্জ ডব্লিউ বুশ ২০০০ সালে আল গোরকে পরাজিত করেছিলেন, যদিও সাধারণ ভোটে তার জয়ের ব্যবধান ছিল পাঁচ লাখেরও বেশি। 

মূলত ২০১৬ সালে জনগণের ভোটের নিরিখে ডেমোক্র্যাট দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টন পেয়েছিলেন ৪৮.২ শতাংশ ভোট, আর রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছিলেন ৪৬.১ শতাংশ ভোট। অর্থাৎ, ট্রাম্পের থেকে ২.১ শতাংশ ভোট বেশি পেয়েছিলেন হিলারি। তবে বেশি ভোট পেয়েও ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটাভুটিতে হেরে যান হিলারি। তিনি পেয়েছিলেন ২২৭টি ইলেক্টোরাল ভোট, কিন্তু ট্রাম্প পেয়েছিলেন ৩০৪টি ভোট। টেক্সাসের মতো রিপাবলিকানদের শক্ত ঘাঁটি তো বটেই, পেনসিলভেনিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনার মতো ‘সুইং স্টেট’ তাদের বড় অংকের ইলেক্টোরাল ভোট নিয়ে ট্রাম্পের ঝুলিতে চলে যাওয়ার ফলেই হোয়াইট হাউস দখল করা সম্ভব হয়েছিল ট্রাম্পের। ২০০০ সালে জর্জ ডব্লিউ বুশ ও ২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগে আর মাত্র তিনজন সাধারণ ভোটে না জিতেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। তবে সেগুলো উনবিংশ শতাব্দীর ঘটনা। একেক অঙ্গরাজ্যের হাতে একেক সংখ্যক ভোট থাকার কারণে প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনী প্রচারণার ব্যাপারে এমনভাবে ছক তৈরি করেন যেখানে তারা বেশি ভোট আছে এমন রাজ্যগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পাবনার সুজানগর-কাজীরহাট আঞ্চলিক মহাসড়কের বেহালদশা

‌ছলচাতুরির প্রয়োজন নেই, সুস্পষ্ট জানান কবে নির্বাচন দিতে চান - মির্জা আব্বাস 

গাংনীতে ৩ কেজি গাঁজাসহ মাদক কারবারি আটক

নওগাঁর বদলগাছীতে জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে সন্ত্রাসীদের ককটেল বিস্ফোরণ

ভারতীয়দের থাইল্যান্ডে যেতে লাগবে না ভিসা

ভেড়ামারায় ট্রাকের পেছনে মোটরসাইকেলের ধাক্কা; নিহত ১