ভাঙা দাঁত-কতটুকু ক্ষতিকর
“না ডাক্তার সাহেব, ৩/৪ বৎসর যাবৎ আমি এই ভাঙা দাঁত নিয়েই আছি, আমার কোন ব্যথা নেই, এই দাঁত ফেলব না।” বেশির ভাগ বয়স্ক রোগীর মুখ থেকে এ ধরনের কথা শুনতে হয় দন্ত চিকিৎসকের। চিকিৎসক তখন বিভিন্নভাবে ভাঙা দাঁত মুখে রাখার ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরেন। কোন রোগী চিকিৎসকের পরামর্শ শুনেন ও পালন করেন। আবার অনেকে শুধু শুনেন। ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হয়ে নিজেকে নিজেই হয়তো বলেন, “এতকাল পার হলো কিছুই হয়নি, নতুন নতুন ডাক্তার নতুন নতুন কথা শুনায়।” এবার আসা যাক সাধারণতঃ কখন একটি ভাঙা দাঁত ব্যথা মুক্ত অবস্থায় থাকতে পারেঃ
দীর্ঘদিন যাবৎ দাঁতে ক্যারিজ বা গর্ত থাকলে, যা প্রথম প্রথম শির শির অনুভূতি, ঠান্ডা-গরম মুখে নিলে ব্যথা, প্রচন্ড ব্যথা হতে পারে। এক সময় দাঁতের অভ্যন্তরস্থ দন্তমজ্জা তার স্বাভাবিক অনুভূতি হারিয়ে ফেলে। এই অবস্থায় দাঁত ভেঙ্গে গেলেও কোন ব্যথা হয় না।
দাঁতের অধিকাংশ ক্ষয় হওয়ার কারণে রুট ক্যানাল চিকিৎসা করার পর উক্ত দাঁতে ক্রাউন বা ক্যাপ করা না হলে এক সময় ভেঙ্গে যেতে পারে। এই ভাঙা দাঁতেও অনেক সময় কোন ব্যথা থাকে না।
হাতুড়ে ডাক্তারদের কাছে দাঁত তোলার সময় দাঁত ভেঙে গেলে দাঁতের ভাঙা অংশ সম্পূর্ণ তুলতে পারে না। এই ধরনের ভাঙা অংশও ব্যথাবিহীন থাকতে পারে।
ভাঙা দাঁত মুখে রাখলে যে সমস্যা সমূহ হতে পারেঃ
ভাঙা দাঁতের মূলে ধীরে ধীরে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। যার ফলে পার্শ্বের দাঁতও আক্রান্ত হতে পারে। এই প্রক্রিয়াটি ব্যথা মুক্ত অবস্থায় চলতে থাকে।
ইনফেকশন বৃদ্ধি পেয়ে মুখের হাঁড়ে, অসটিওমাইলাইটিস জাতীয় জটিল রোগ সৃষ্টি হতে পারে। এই অবস্থায় শুধু ভাঙা দাঁত তুলে ফেলেই সমস্যার সমাধান হয় না। মুখের হাঁড়ে ও অন্যান্য টিতে বিভিন্ন ধরনের জটিল অস্ত্রোপচারে যেতে হয়।
ভাঙা দাঁতের গর্তে বা ফাঁকে ঢুকে থাকা খাদ্যকণা মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে।
ভাঙা দাঁতের ধারালো অংশের ঘর্ষণে জিহ্বায় বা গালের নরম অংশে ঘা হতে পারে। উক্ত ভাঙ্গা দাঁতের কোন চিকিৎসা না করা পর্যন্ত ঘা ভাল হয় না। সাময়িক ভাবে ঘা সুস্থ মনে হলেও বা ব্যথা মুক্ত মনে হলেও এই অবস্থা দীর্ঘদিন যাবত চলতে থাকলে মারাত্মক ক্যান্সার রোগে রূপান্তর হতে পারে।
কেউ ভাঙা দাঁত না তুলে সংরক্ষণ করতে চাইলে তার সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা রয়েছে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে একটা ভাঙ্গা দাঁতকে ম্যাটালিক/পারসেলিন ক্রাউন বা ক্যাপ বসিয়ে সম্পূর্ণ কার্যক্ষম সুস্থ-সুন্দর দাঁতে পরিণত করাও সম্ভব। অবশ্য এটি ব্যয় বহুল চিকিৎসা। যারা এই চিকিৎসায় যেতে অপারগ তারা ভাঙা দাঁত মুখে না রেখে ফেলে নেয়াই নিরাপদ। সামান্য অবহেলা থেকে বৃহৎ সমস্যা সৃষ্টি হোক এটি কারো কাম্য নয়। তাই যথা সময়ে সঠিক চিকিৎসা করে নিজেকে রক্ষা করাই উত্তম।
ডাঃমোঃ সাবিবর মোস্তাক রহমান (ডুরেন)
বি. ডি. এস (ডি ইউ)
ওরাল এ্যন্ড ডেন্টাল সার্জন
সারা ডেন্টাল কেয়ার
সাতানিবাড়ি, শেরপুর রোড, বগুড়া।
মন্তব্য করুন