শুল্ক কমিয়ে আমদানি বাড়ালেও কমেনি আলুর দাম
স্টাফ রিপোর্টার : সাধারণ মানুষের সবজির মধ্যে অন্যতম হলো আলু। অথচ গত কয়েক বছর ধরে সবজিটির বাড়তি দাম ভোক্তাদের সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছে। গত এক বছরে সবজিটির দাম বেড়েছে ৩৩ শতাংশের বেশি।
এ অবস্থায় সম্প্রতি আলুর আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ করার পাশাপাশি ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। শুল্ক তুলে নেয়ার পরেও দামতো কমেইনি, উল্টো একদিনের ব্যবধানে বগুড়ার বাজারে কেজিতে বেড়েছে ৫ টাকা পর্যন্ত। অথচ হিলি কাস্টমস’র তথ্য মতে গত তিন দিনে ভারতীয় ৫২ ট্রাকে ১ হাজার ৩৭৫ মেট্রিকটন আলু আমদানি হয়েছে এই স্থলবন্দর দিয়ে।
আলু চাষি, ব্যবসায়ী এবং হিমাগার মালিকরা জানান, গত মৌসুমে আলু উত্তোলনের সময় সবজিটির কেজি ছিল ১৮-২০ টাকা। আলু হাট থেকে কিনে হিমাগারে সংরক্ষণ পর্যন্ত পৌঁছাতে কেজি প্রতি আরও দু’তিন টাকা বেড়ে যায়। আর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসেব মতে, গত মৌসুমে জেলায় প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ পড়েছে ১৪ টাকা ১০ পয়সা।
সংরক্ষিত আলু কৃষক, ব্যবসায়ী বা হিমাগার মালিকরা যদি ৩০-৩৫ টাকা কেজিতেও বিক্রি করেন তাহলে তাদের ভালোই লাভ থাকার কথা। তারপরেও বছরজুড়েই আলুর বাড়তি বা দ্বিগুণ দামে ভোক্তাদের স্বস্তি ছিল না। আলুর নতুন মৌসুম শুরুর আগে এক দিনের ব্যবধানে বগুড়ার বাজারে আলুর কেজিতে বেড়েছে ৫ টাকা পর্যন্ত।
আজ মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) বগুড়ার বাজারগুলোতে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু দাম বেড়ে ৬৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়, যা গত সোমবার ছিল ৬০ টাকা কেজি। দাম বাড়ায় পাইকারি ও খুচরা উভয় পর্যায়েই সবজিটির দাম প্রায় একই। এছাড়াও স্টিক ও পাকড়ি আলুর দাম কমবেশি হলেও বর্তমানে তা একই দামে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে জেলার কৃষি বিপণন কার্যালয় আজ মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) আলুর দর জানিয়েছে ৬২-৬৪ টাকা।
আরও পড়ুনতবে এই দামে শহরের পাইকারি রাজা বাজার ছাড়া কোথাও আলু পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্টরা দৈনিক করতোয়া’কে জানিয়েছেন, দেশে যে পরিমাণ আলু উৎপাদন হয়, তা চাহিদার তুলনায় বেশি। এছাড়া উৎপাদন খরচও অনেক কম। আলুর বাজারে একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে। তারা বেশি মুনাফা করায় খুচরা বাজারে আলুর দাম কমছে না, ফলে ভোগান্তিতে পড়ছেন নিম্ন থেকে মধ্য আয়ের মানুষ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে আলুর বার্ষিক চাহিদা ৮০ লাখ মেট্রিকটন। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে আলু উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ মেট্রিকটন। অর্থাৎ গত অর্থবছরে দেশে চাহিদার চেয়ে ৩০ লাখ মেট্রিকটন বেশি আলু উৎপাদন হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, উৎপাদনের পর ১০ থেকে ১৫ শতাংশ আলু নষ্ট হলেও যে পরিমাণ আলু উদ্বৃত্ত থাকছে তা দিয়ে সহজেই চাহিদা মেটানো সম্ভব।
সেই সঙ্গে দামও এত বেশি হওয়ার কথা নয়। কাজেই আলুর বাজারে একটা শক্তিশালী সিন্ডিকেট কাজ করছে। তারাই বিগত কয়েক বছর ধরে আলুর বাজার অস্থির করে রেখেছে। আলুর দাম বাড়ার ব্যাপারে বগুড়ার সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মমতা হক বলেন, আলুর বাজার তারা নিয়মিত মনিটরিং করছেন। মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে তেমন কোন নির্দেশনা এখন পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। আলুর দর নির্ধারণ বা নতুন কোন নির্দেশনা এলে সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
মন্তব্য করুন