দায়িত্ব নিয়েই যে সাত কাজ করতে চান ট্রাম্প
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দ্বিতীয় বারেরমত যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় ফিরলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০২০ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে পরাজয়ের পরে এবার ব্যাপক সমর্থন নিয়ে নাটকীয়ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। নির্বাচনী প্রচারণায় নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। এবার সেগুলো পূরণ করার পালা।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি’র একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের পর দিন বুধবার (৬ নভেম্বর) ট্রাম্প বলেন, ‘আমি একটি সাধারণ লক্ষ্য নিয়ে দেশ পরিচালনা করব। আর সেটি হলো-যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, সেগুলো পূরণ করা।’ নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে যে সাতটি কাজ ট্রাম্প করতে চান সেগুলো নিয়ে বিস্তারিত জানা যাক।
অবৈধ অভিবাসী
নির্বাচনী প্রচারেণায় অভিবাসী ইস্যুতে নিজের অবস্থান বারবার পরিষ্কার করেছেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি অবৈধ অভিবাসীকে মার্কিন ভূখণ্ড থেকে বিতাড়িত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এমনকি মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণের থেমে থাকা কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার প্রথম মেয়াদে এই প্রাচীর তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সহজ কাজ নয়। এটি করতে গেলে বিশাল আইনগত ও লজিস্টিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। এমনকি এটি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির গতিও কমিয়ে দিতে পারে বলে সতর্ক করেছেন তারা।
অর্থনীতি
যুক্তরাষ্ট্রের এবারের নির্বাচনে অন্যতম বিষয় ছিলো অর্থনীতি। ইতোমধ্যেই দেশের মূল্যস্ফীতি থামানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প। এছাড়া কর কমানোর প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন ট্রাম্প। বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বিদেশি পণ্যের ওপর নতুন করে অন্তত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে চান তিনি। তবে চীনা পণ্যের ক্ষেত্রে এই অতিরিক্ত শুল্কের পরিমাণ করতে চান ৬০ শতাংশ। এতে হিতে-বিপরীত হয়ে পণ্যের দাম আরও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
জলবায়ু নীতি
২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর পরিবেশ সুরক্ষাসংক্রান্ত নানা আইন বাতিল করেন ট্রাম্প। তখন প্রথম দেশ হিসেবে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি শিল্পকে সহায়তার লক্ষ্যে ট্রাম্প এবারও জলবায়ু নীতিতে কাটছাঁটের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এছাড়া, দেশে জীবাশ্ম জ্বালানির উত্তোলনও বাড়াতে চান তিনি।
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ
নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্পকে বারবার বলতে শোনা গেছে, ‘ক্ষমতায় এলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই যুদ্ধ শেষ’ করতে পারেন তিনি। তবে তিনি কীভাবে এটি করতে পারেন সে নিয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি। অনেকেই মনে করছেন, তার এই পদক্ষেপ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকেই বরং উৎসাহ দেবে। ইউক্রেনীয়দের ভয়, এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে ইউক্রেন তার ভূখণ্ড হারাতে পারে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের শত শত কোটি ডলার দেওয়ারও কড়া সমালোচনা করেছেন ট্রাম্প। এদিকে, নিজেকে ট্রাম্প ইসরায়েলের একজন কড়া সমর্থক হিসেবে ঘোষণা করেছেন। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকারকে এই যুদ্ধ থামানোর আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। লেবাননের যুদ্ধ থামানোর পক্ষেও ট্রাম্প।
গর্ভপাত
এবারের নির্বাচনী প্রচারণায় গর্ভপাতের ইস্যুটিও গুরুত্ব পেয়েছে। রিপাবলিকানদের একটি অংশের আগ্রহের কথা বিবেচনা করে ডেমোক্র্যাটিক কমলা হ্যারিসের সঙ্গে ট্রাম্পও বলেছিলেন, ক্ষমতায় এলে গর্ভপাতের অধিকার রদসংক্রান্ত আইনে স্বাক্ষর করবেন না। ২০২২ সালে গর্ভপাতের সাংবিধানিক অধিকারকে খারিজ করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের রক্ষণশীল বিচারপতিদের অধিকাংশ ওই রায়ের পক্ষে ছিলেন।
৬ জানুয়ারির দাঙ্গাকারীদের ক্ষমা
২০২০ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে পরাজয় মেনে নিতে পারেননি ট্রাম্প। নির্বাচনের ফলাফল পাল্টানোর দাবিতে তার সমর্থকরা ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালায়। এতে কয়েকজন নিহত হন। তখন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সমর্থকদের উসকানি দেওয়ার অভিযোগ আনা হয় এবং তার সমর্থকদের অনেককে দাঙ্গার অভিযোগে রাজনৈতিক বন্দী করা হয়। ক্ষমতায় গেলে তাদের কয়েকজনকে ‘মুক্তি’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ট্রাম্প।
স্পেশাল কাউন্সেল জ্যাক স্মিথকে চাকরিচ্যুত করা
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দুটি ফৌজদারি মামলার তদন্ত করছেন মার্কিন স্পেশাল কাউন্সেল জ্যাক স্মিথ। ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল ভবনে দাঙ্গায় উসকানি দেওয়া ও সরকারি গোপন নথি সরানোর অভিযোগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা দুটি দায়ের করা হয়েছিল। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ট্রাম্প। ক্ষমতায় এলে জ্যাককে চাকরিচ্যুত করার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তিনি। অক্টোবরে একটি রেডিও সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমি দুই সেকেন্ডেই তাকে চাকরিচ্যুত করতে পারি।’
মন্তব্য করুন