ডেঙ্গু পরিস্থিতি
বর্ষা মৌসুম ও পরবর্তী সময়ে এডিস মশার উৎপাত বেড়ে যায়। রাজধানীসহ সারাদেশে বাড়ে ডেঙ্গু সংক্রমণের আতঙ্ক। গত বছরের তুলনায় এবার পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হলেও মৃত্যু থেমে নেই। মশা নিধনেও তেমন কার্যকর উদ্যোগ নেই। গত সপ্তাহে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত শুক্রবার প্রাণ হারিয়েছেন আরও পাঁচজন। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে ৩৪২ জনের মৃত্যু হলো।
নভেম্বরে সাধারণত এডিস মশাবাহিত এ রোগের প্রকোপ কমে আসে। কিন্তু এবার এর ব্যতিক্রম। এ ব্যতিক্রম শংকা জানাচ্ছে জনস্বাস্থ্যবিদদের। যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত জার্নাল অব মেডিকেল এন্টোমলজিতে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ডেঙ্গুর রোগতাত্ত্বিক রেখা বা সংক্রমণের মাসিক বৃদ্ধির গতিপথ ঠিক থাকছে না। জনস্বাস্থ্যবিদ, চিকিৎসক ও কীটতত্ত্ববিদদের কথা, ডেঙ্গুর বৃদ্ধি ঠেকানোর জন্য কার্যকর ব্যবস্থার যথেষ্ট ঘাটতি আছে। আবার চিকিৎসা ব্যবস্থাও ঢেলে সাজানো হয়নি।
পত্র-পত্রিকার খবরে প্রকাশ, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে ৪০৬ জন ঢাকা মহানগরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন। এর বাইরে (সিটি করপোরেশন বাদে) ঢাকা বিভাগে ১৪৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫০ জন, বরিশাল বিভাগে ছয়জন, খুলনা বিভাগে ৪৩ জন, রাজশাহী বিভাগে নয়জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ২০ জন, রংপুর বিভাগে একজন ও সিলেট বিভাগে তিনজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত দেশের হাসপাতালগুলোতে ৪ হাজার ৩২৬ জন চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। উল্লেখ্য, গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১৭০৫ জন মৃত্যুবরণ করেন।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন। সংক্রামক রোগের বিস্তৃতি অনুসরণ করার একটি পদ্ধতি হচ্ছে মাসিক গ্রোথ ফ্যাক্টর বা বৃদ্ধির হার নির্ধারণ করা। এর মাধ্যমে জানা যায়, আগের মাসের তুলনায় বর্তমান মাসে বা বর্তমান মাসের তুলনায় পরবর্তী মাসে কী পরিমাণ মানুষ আক্রান্ত হবে বা মারা যাবে। গত ২৩ বছরের উপাত্ত অনুসারে বাংলাদেশে আক্রান্ত ডেঙ্গু রোগীর মাঝে মৃত্যুর সংখ্যা গড়ে শূন্য দশমিক ৪৫ থেকে শূন্য দশমিক ৫৩।
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের তীব্রতা অনুভূত হচ্ছে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে। এ পরিবর্তনে আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা বৃদ্ধি করছে। যার ফলে এডিস মশার উপদ্রব দেখা দিচ্ছে এবং ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাবও বাড়ছে। এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে ডেঙ্গু ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। সিঙ্গাপুর, শ্রীলংকা, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, চীন ও ভিয়েতনামে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের কথা জানা গেছে।
আরও পড়ুনমশার বংশবিস্তার ঠেকাতে ঘরের আশে পাশে পানি জমা পাত্র পরিষ্কার রাখতে হবে। মশারি বা কয়েল ব্যবহার করা হলেও ডেঙ্গুর ঝুঁকি কমানো সম্ভব। কিন্তুু এই প্রশ্ন ওঠা সঙ্গত যে, ঘরোয়া পাত্রে আর কয়টা মশা জন্মে? রাজধানীতে যে ড্রেন ও এদো জলাশয় রয়েছে, সেগুলোই তো বিভিন্ন প্রকার মশার মূল প্রজনন স্থল। এগুলোতে যদি মশার প্রজনন কমানো যেত, তা হলে আক্রান্ত নাগরিকদের বেদনা ও ব্যয়, এমনকি মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হতো না।
একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক জরুরি কর্তব্যগুলো যথাসময়ে পালিত না হলে সংকট ঘনীভূত হয়। জনসচেতনতা বৃদ্ধির দায়িত্ব নিতে হবে। সরকারি ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে। পাড়া-মহল্লায় জোরদার প্রচার এখনো দৃশ্যমান হয়। এ ক্ষেত্রে সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও এগিয়ে আসতে পারে। সবাই মিলে সতর্ক ও দায়িত্বশীল হলে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ রাখা, এমনকি নির্মূলও সম্ভব হতে পারে।
ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। বেশি করে পানি পান করুন। এ কথাগুলো প্রাথমিক কথা। যা সাধারণ মানুষই দিতে পারে। কিন্তু যারা এতদসংক্রান্ত বিষয়ে বড় ভূমিকা পালন করে থাকেন তাদের কার্যকরণে ঢিলেমি থাকে। আমরা আশা করব, দ্রুত সময়ের মধ্যে ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করা হোক। নইলে নগর থেকে শহর, শহর থেকে গ্রামের মানুষ আক্রান্ত হলে তা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নাও হতে পারে। তাই, অন্যরা যদি ডেঙ্গুকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে, তাহলে আমরাও পারব।
মন্তব্য করুন