বাংলার বাঘিনীদের সাফ জয়ের ইতিহাস
বাংলার বাঘিনীরা সাফ ফুটবলের শিরোপা অক্ষুন্ন রেখেছে। ২০২২ সালে স্বাগতিক নেপালকে হারিয়েই বাংলাদেশের মেয়েরা প্রথমবারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব পেয়েছিল। আবারও সেই একই প্রতিপক্ষ এবং একই ভেন্যুতে সাবিনা খাতুনের দল সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের টানা দ্বিতীয় শিরোপা জিতলো। দশরথ স্টেডিয়ামে স্বাগতিক দর্শকদের স্তব্ধ করে দিয়ে সাফের ফাইনালে তারা নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়েছে।
সাবিনাদের হাত ধরেই আমাদের সাফল্য এসেছে। অথচ সাফল্য আনলেও এসব মেয়েদের বেতন বকেয়া থাকার খবর এসেছে গণমাধ্যমে। বিষয়টি মর্মাহত করে। যেখানে পুরুষ ফুটবলে কোনো সাফল্য নেই উল্টো গচ্ছা সেখানে তাদের সব ঠিকঠাক থাকলেও মেয়েদের বেলায় অষ্টরম্ভা! এই বৈষম্য দূর করতে হবে। মেয়ে বলে তারা আলোর বাইরে থাকবে? ফুটবলে আমাদের ছেলেদের সাফল্য বলতে কিছুই নেই।
সবে বোর্ডে পরিবর্তন হলো। দেখা যাক। তবে মেয়েরা বরাবরের মতোই উচ্ছল, উজ্জ্বল এবং দুর্দান্ত। সারা বিশ্বেই ফুটবল জনপ্রিয় খেলা হলেও আমাদের দেশে ফুটবল তার জৌলুস হারিয়েছে। মাঝে মধ্যে হঠাৎ দু’একটা মুহূর্তে সেই আনন্দ ফিরে পাই। দেশের মুখ উজ্জল করা কিছু অসাধারণ মেয়ে। যে মেয়েরা দেশের গৌরব বাড়িয়ে দিয়েছিল।
এএফসি বাছাই পর্বে মেয়েদের বিজয় থেকে শুরু করে ফুটবলে মেয়েদের অর্জন আমাদের গর্বিত করেছে। তা এতদিন পর আবার সেই কথা মনে করা কেন? কারণ হলো মেয়েদের ফুটবল ঘিরেই আমরা উল্লাসে মেতেছি আবার।
বাংলাদেশকে বিশ্বের সামনে মাথা উঁচু করেছে। পুরো স্টেডিয়ামের হাজার হাজার দর্শকের উপস্থিতিই ফুটবলের জনপ্রিয়তা প্রমাণ করে। বছরের শেষ মুহূর্তে খেলাধূলায় এ এক অন্য পাওয়া। বাংলাদেশের মেয়েরা এই আসরে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন। এদের হাত ধরেই আমাদের দেশে আজ উচ্ছ্বাসের বেগ। খেলাটা ফুটবল। আমাদের দেশের একসময়কার তুমূল জনপ্রিয় খেলা যা ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে গেছে।
অথচ সারা বিশ্বে এই দৃশ্য ভিন্ন। বেশীরভাগ দেশেই এই খেলাটাই জনপ্রিয়। ফুটবলারদের তারকাদুত্যিতেই সারা বিশ্বের মানুষ প্রভাবিত হচ্ছে। এই আমাদের দেশেই বিশ্বকাপ বা কোপা আমেরিকা বা ইউরো কাপ খেলার আগে সারা দেশ এক জ্বরে কাঁপতে থাকে। আবার বাছাই পর্বের খেলাতেও মনোযোগ থাকে। এটাকে নাকি বলে বিশ্বকাপ জ্বর।
বাড়িতে, বাড়িতে উড়ে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, ইংল্যান্ড সহ অন্য দেশের পতাকা। গালে, মুখে সেই দেশের পতাকা চিত্র আঁকিয়ে রাস্তায় দৌড়ে বেড়াই। একসময় ম্যারাডোনা-পেলে নিয়ে বিতর্ক ছিল সারা বিশ্বে। এখন মেসি না নেইমার সেই তর্কে দিনরাত কেটে যায়। কোথাও কোথাও তো বাড়াবাড়িই হয়ে যায়। তাহলে আমাদের দেশের মানুষ কিন্তু এক কথায় ফুটবল ভক্ত।
সেই বহু বছর আগে থেকে। বর্তমান সময়ের আমাদের দেশের জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেট যখন গ্রামে গঞ্জে পৌছেনি তখন থেকে। ওই যে বললাম খেলাটা ফুটবল। ফুটবল খেলার এখন আর সেই গৌরব নেই। নেই সেই সোনালি অতীত। আবাহনী মোহামেডানের খেলা মানেই কান সজাগ রেডিওতে। ফুটবল নিয়ে উন্মাদনা। এখন তো ক্রিকেটের সময়। চারদিকে শুধু ক্রিকেট আর ক্রিকেট।
আরও পড়ুনদেশের ফুটবল খেলাটা আজ জৌলুসহীন। হারের বৃত্ততে বন্দি হয়েই কাটিয়ে দিচ্ছে সময়। বিদেশী কোচরা আসছে আমাদের দেশের খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ দিতে। তবে খেলায় খুব বেশী উন্নতি ফুটবল প্রেমীদের চোখে পড়ছে না। আমার কাছে যেন মনে হলো এইতো আমাদের ভবিষ্যৎ ফুটবল এগিয়ে নেওয়ার সারথীরা। হোক না মেয়ে। ওরাই তো করে দেখালো। ওরাই বাংলাদেশের স্বপ্ন হয়ে মাঠে নেমেছে। ওদের চোখে আমি ভয় দেখিনি। দেখেছি প্রতিপক্ষকে ভেঙে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়।
ওরাই দুচোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে অন্য দেশের মেয়েদের সাথে লড়াই করেছে। ওরাই আমাদের অনুপ্রেরণা। আমাদের মেয়েরা প্রমাণ করেছে অন্য দেশের মেয়েদের থেকে আমাদের দেশ পিছিয়ে নেই। শক্তি তো প্রমাণ হলো মাঠে। তাতে বাংলাদেশের মেয়েরা বিজয়ী। সেই সাথে বিজয়ী সারা দেশ। এভাবে যখন মেয়েরা আমাদের গর্ব করার সুযোগ করে দেয় তখন সেই বিষয়টা নিয়ে আমাদের আগ্রহ বাড়তে থাকে।
কোনো খেলা এগিয়ে নিতে একেবারে প্রান্তিক অঞ্চল থেকে খেলোয়াড় তুলে আনা প্রয়োজন। তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। আমাদের দেশেও ফুটবল প্রতিভা রয়েছে। তাছাড়া ফুটবলে আমাদের সোনালি অতীত রয়েছে। স্বনামধন্য খেলোয়াড় রয়েছে।
খুঁজে বের করতে হবে আমাদের সমস্যাগুলো। কেন কিছু ম্যাচ জয়ের কাছাকাছি গিয়েও হারতে হয়। কেন আমরা ফুটবলের সোনালি অতীত ফিরিয়ে আনতে পারছি না। আশা করি নারী ও পুরুষ উভয় ফুটবল দলই একদিন বিশ্বজয় করবে। পরিশেষে বাংলার বাঘিনীদের অভিনন্দন।
অলোক আচার্য
লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট
01737-044946
মন্তব্য করুন