সিরাজগঞ্জ উল্লাপাড়ার শুঁটকি মাছের চাতালে মজুরি বৈষম্যের শিকার নারী শ্রমিকরা
উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি : উল্লাপাড়ার চলনবিল এলাকায় শুটকি মাছের চাতালে কাজ করা নারী শ্রমিকদের মজুরি পুরুষ শ্রমিকদের তুলনায় অর্ধেক কম। উপজেলার লাহিড়ী মোহনপুর, বড় পাঙ্গাসী, উধুনিয়া ও বাঙ্গালা ইউনিয়ন চলনবিল এলাকায় অবস্থিত।
প্রতিবছর এসব ইউনিয়নের অন্ততঃ ৪০ জন মাছ ব্যবসায়ী তাদের এলাকায় একাধিক চাতাল তৈরি করে শুটকি মাছ উৎপাদন ও বিক্রি করে থাকেন। অক্টোবর মাস থেকে মার্চ পর্যন্ত শুটকি মাছ উৎপাদনের মৌসুম। চলনবিল থেকে পুঁটি, চাপিলা, বোয়াল, বেলে ও দাড়কিনাসহ নানা প্রজাতির দেশীয় মাছ শিকার করে এগুলোকে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রোদে শুকিয়ে শুটকি করা হয়।
চলনবিল অঞ্চলের এসব দেশীয় শুটকি মাছের চাহিদা গোটা দেশজুড়ে। এই শুটকি মাছ উৎপাদন প্রক্রিয়ায় পুরুষদের তুলনায় নারী শ্রমিকরাই বেশি কাজ করে থাকেন। মাছ কাটা, পরিস্কার করা, ধোয়া এবং মাছগুলো রোদে শুকানোর কাজ করে থাকেন নারী শ্রমিকরা।
সরেজমিনে চলনবিল অঞ্চলের বড়পাঙ্গাসী গ্রামে শুটকির চাতালে গিয়ে কথা স্থানীয় বাসিন্দা জয়ন্তী দাসের সাথে। জয়ন্তী বলেন, সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা তাদের সংসার ফেলে চাতালে কাজ করে থাকেন। অথচ তাদের মজুরি দেওয়া হয় ২শ’ টাকা। পাশাপাশি তাদের কাজে আসার অনেক পরে পুরুষ শ্রমিকরা কাজ করতে আসেন। কিন্তু তাদের দৈনিক মজুরি দেওয়া হয় ৪শ’ টাকা।
বড় পাঙ্গাসী গ্রামের চাতাল মালিক বায়েজিত হোসেনের সাথে এ ব্যাপারে কথা বললে, তিনি নারী শ্রমিকদের কম মজুরির কথা স্বীকার করে বলেন, বিগত কয়েক বছরে ধরে চলন বিলে দেশি প্রজাতির মাছ খুবই কমে গেছে। ইতোপূর্বে তারা প্রতিজন চাতাল মালিক ন্যূনতম ২০ থেকে ২৫ মেট্রিক টন করে শুটকি উৎপাদন ও বিপণন করেছেন।
আরও পড়ুনকিন্তু ২/৩ বছর ধরে তাদের উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। তিনি জানান, এ অঞ্চলে বরাবরই নারী শ্রমিকদের মজুরি কম ছিল। তারা সেই ধারাবাহিকতেই মজুরি দিয়ে আসছেন। নারী শ্রমিকদের দাবি পূরণে তারা আন্তরিক। কিন্তু শুটকির উৎপাদন কমে যাওয়ায় আপাতত মজুরি বাড়াতে পারছেন না। তবে তাদের শুটকি উৎপাদন বাড়লে অবশ্যই নারী শ্রমিকদেরকে যথাযথ মূল্যয়ান করবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এ ব্যাপারে উল্লাপাড়া সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান জানান, চলনবিলের উল্লাপাড়া উপজেলা অংশে প্রতিবছর ৭শ’ মেট্রিকটন শুটকি মাছ উৎপাদিত হয়ে থাকে। এসব মাছ উল্লাপাড়া থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়।
এই শুটকি উৎপাদন প্রক্রিয়ার সাথে অনেক মৌসুমী শ্রমিক অংশ নিয়ে কিছু আয় করার সুযোগ পান। তবে এবছর বিলে মাছ কম থাকায় এই উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। নারী শ্রমিকদের মজুরি কম দেওয়ার বিষয়টি তিনি অবহিত। এদের মজুরি বৃদ্ধির ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য বিভাগ থেকে চাতাল মালিকদের সাথে কথা বলার ব্যবস্থা নেবেন তিনি।
মন্তব্য করুন