বগুড়ায় উৎপাদন খরচের তুলনায় চারগুণবেশি দামে ভোক্তার হাতে সবজি
শাওন রহমান : উত্তরাঞ্চলের শস্য উৎপাদনের অন্যতম জেলা বগুড়া। এ জেলার শিবগঞ্জ, শাজাহানপুর, গাবতলী ও সদর উপজেলায় উল্লেখ্যযোগ্য পরিমাণ সবজি উৎপাদন হয়। এসব সবজি জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানসহ বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।
শস্য উৎপাদনের এমন সম্ভাবনাময় জেলাতেও সবজির দামে স্বস্তি নেই। প্রতিবছর এ জেলায় সবজি উৎপাদনের জমি বাড়লেও লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে তার দামও। গত বছর বগুড়ার স্থানীয় হাট-বাজারগুলোতে যে দামে শীতকালীন সবজি বিক্রি হয়, এবার তা প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। আবার কোন কোন সবজি দ্বিগুণ দামকেও ছাড়িয়ে গেছে।
গত বছর বগুড়ার বাজারগুলোতে এসময় বেগুন, কপি, শিম, বরবটি, করলা প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা করে বিক্রি হলেও এবার তা বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকায় এবং কোন কোন সবজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা পর্যন্ত। অথচ জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, বগুড়ায় সবজির উৎপাদন খরচ গত বছরের তুলনায় কেজিতে বেড়েছে দুই থেকে তিন টাকা।
আর সাধারণ ভোক্তার হাতে এই সবজি আসছে উৎপাদন খরচের চেয়ে প্রায় চারগুণ বেশি দামে। গত বছর বগুড়ায় শীতকালীন সবজির উৎপাদন খরচ ছিল ১৩ থেকে ১৪ টাকা আর এবছর সেই খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ থেকে ১৭ টাকা।
২০২২ সালে বগুড়ার উৎপাদিত সবজির গড় দাম ২০ টাকা কেজি নির্ধারণ করে কৃষি বিভাগ, গত বছর যা ধরা হয় ৩৫ টাকা আর এবছর ধরা হয়েছে ৪০ টাকা। বগুড়ায় গত বছর ১৩ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ হয়, চলতি মৌসুমে যা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে ১৩ হাজার হেক্টর।
চলতি মৌসুমে উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ সবজির বাজার মহাস্থান হাটে প্রচুর সবজি সরবরাহ থাকলেও দামও আকাশচুম্বী। আর পাইকারি পর্যায়ে কৃষক যে দামে সবজি বিক্রি করছেন তার চেয়ে চার থেকে পাঁচগুণ দামে তা সাধারণ ভোক্তার হাতে আসছে।
গতকাল বগুড়ার মহাস্থান বাজারে প্রতি কেজি বেগুন পাইকারিতে ৪৫/৫০ টাকায় বিক্রি হলেও সাধারণ ভোক্তা অর্থাৎ খুচরা পর্যায়ে তা ৬০/৮০ টাকায় বিক্রি হয়। এছাড়াও ফুলকপি পাইকারি প্রতি কেজি ৩৫/৪০ টাকা, খুচরাতে ৫০/৬০ টাকা।
আরও পড়ুনকরলা পাইকারিতে ৬৫/৭০, খুচরাতে ৮০/১২০ টাকা, মুলা পাইকারিতে ২৫ টাকা আর খুচরা পর্যায়ে ৩০/৪০ টাকা, শিম পাইকারিতে ৮০/৯০ টাকা খুচরাতে ১২০ টাকা, বরবটি পাইকারিতে ৩৫/৪০ খুচরা প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৭০ টাকা। এছাড়াও অন্যান্য সবজিও পাইকারি তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ দামেই বেচাকেনা হচ্ছে।
সবজি ব্যবসায়ী রতন মিয়া বলছেন, মহাস্থানসহ স্থানীয় হাট-বাজারগুলোতে প্রতি দিনই সবজির সরবরাহ বাড়ছে, তবে সরবরাহ বাড়লেও দাম কমার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, বিগত বছরগুলোতে শীতকালীন সবজি উৎপাদনের শুরুর দিকে দাম বেশি থাকে আর পরে আস্তে আস্তে কমে আসে, তবে এবার তা খুব সহজে হচ্ছে না। তবে দাম কমবে বলে মনে করছেন এই ব্যবসায়ী।
খুচরা সবজি বিক্রেতা শহিদুল ইসলাম বলেন, বাজারে সবজির সরবরাহ বাড়লেও দাম কমছে না। গত তিন থেকে চার সপ্তাহ ধরে প্রায় একই দামে বেশিরভাগ সবজি বিক্রি হচ্ছে, অথচ স্থানীয় হাট-বাজারগুলোতে সরবরাহ আগের চেয়ে বেড়েছে। তিনি বলেন, সবজির বর্তমান দাম বিগত যেকোন বছরের তুলনায় বেশি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়ার উপ-পরিচালক মতলুবর রহমান বলেন, শীতকালীন সবজির দাম মৌসুমে শুরুতে বেশি থাকলেও ভরা মৌসুমে কিছুটা কমে আসে। তবে এবারের চিত্রটা কিছুটা ভিন্ন। বগুড়ায় শীতকালীন সবজি উৎপাদন খরচ গত বছরের তুলনায় খুব বেশি পার্থক্য না থাকলেও দামের পার্থক্য বিস্তর।
অথচ সরকার সবজির উৎপাদন খরচ কমাতে কীটনাশকের ওপর থেকেও শুল্ক প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তারপরেও বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবছর বগুড়ার বাজারগুলোতে সবজির দাম অনেক বেশি।
মন্তব্য করুন