প্রথমবারের মতো ছাপানো হচ্ছে দশম শ্রেণির বই
এবার হচ্ছে না বই উৎসব, প্রাথমিকের সব মিললেও মাধ্যমিকে দেরি
নাসিমা সুলতানা ছুটু : বছরের শুরুতে বই উৎসব না হলেও নানা সঙ্কটের মাঝেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া হবে বলে চেষ্টা করছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। তবে বছরের প্রথম দিনই প্রাথমিকের সকল শিক্ষার্থী এবং দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা শতভাগ বই পাবে বলেও জানিয়েছেন এনসিটিবি’র কর্মকর্তারা।
বছরের প্রথম দিন সকল শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যের নতুন বই তুলে দেওয়া উপলক্ষ্যে স্কুলে, স্কুলে আয়োজন করা হয় বই উৎসবের। এবারও বছরের প্রথম দিনই শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন পাঠ্যবই তুলে দিতে কাজ করছে এনসিটিবি। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতিতে বই ছাপার কাজে অনেকটা পিছিয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
বিগত বছরগুলোতে প্রাক-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণির বই ছাপানো হলেও এবারই প্রথম ছাপানো হচ্ছে দশম শ্রেণির বই। ২০১২ সালের কারিকুলাম অনুযায়ী দশম শ্রেণির বই ছাপানো হচ্ছে। এবার যারা নবম থেকে দশম শ্রেণিতে উন্নীত হবে তাদের দশম শ্রেণির বই দেওয়া হবে। দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে ২০২৬ সালে যারা এসএসসি পরীক্ষা অংশ নেবে। এছাড়া অন্যান্য শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকেও বেশকিছু পরিবর্তন হচ্ছে বলে জানিয়েছে এনসিটিবি।
জানা গেছে, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের জন্য দেশে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বইয়ের চাহিদা অনুযায়ী ৪০ কোটি ১৬ লাখ বই ছাপানোর কাজ করছে সরকার। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিকের বইয়ের সংখ্যা ১২ কোটি ৮ লাখ ৬৭ হাজার ৭৫২টি। মাধ্যমিক পর্যায়ের অর্থাৎ ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য এবার ২৮ কোটি ৬ লাখ ২২ হাজার ৩৩৭টি বই ছাপানো হচ্ছে।
এদিকে বগুড়ার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলায় ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বইয়ের চাহিদা রয়েছে ৭০ লাখ ৫৩ হাজার ২৩৯টি। এরমধ্যে প্রাথমিকে ১৮ লাখ ৯০ হাজার এবং মাধ্যমিকসহ ইবতেদায়ি, দাখিল, ইংরেজি ভার্সন এবং কারিগরি মিলে বইয়ের চাহিদা রয়েছে ৫১ লাখ ৬৩ হাজার ২৩৯টি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রেজোয়ান হোসেন বলেন, এখনও শতভাগ বই পাওয়া যায়নি। তবে ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে শতভাগ বই পাওয়া যাবে বলে তিনি আশা করেন। বিগত বছরগুলোর মতো এবারও বই উৎসবের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে এমন কোন নির্দেশনা আসেনি।
আরও পড়ুনজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. হজরত আলী বলেন, গত বছর মাধ্যমিকসহ ইবতেদায়ি, দাখিল, ইংরেজি ভার্সন এবং কারিগরি মিলে বইয়ের চাহিদা ছিল ৪৭ লাখ এবার চাহিদা রয়েছে প্রায় ৫২ লাখ বইয়ের। ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে চাহিদার ৫০ ভাগ বই পাওয়া যাবে, বাকি বই ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে পাওয়া যাবে বলে তিনি আশা করেন।
তবে পরিবর্তীত পরিস্থিতির কারণে শতভাগ বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া না গেলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে দেওয়া যাবে বলে তিনি জানান। এনসিটিবি’র সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) অধ্যাপক ড. রিয়াদ চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নতুন বছরের শুরুতে প্রাথমিকের সব বই শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে যাবে। তবে মাধ্যমিকের একটু দেরিও হতে পারে।
বিগত সরকারের বই উৎসব হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা যারা এখন কাজ করছি, তাদের অনেকে সেপ্টেম্বরের শেষে, অনেকে আবার অক্টোবরে দায়িত্বে এসেছি। অথচ প্রতিবছর এপ্রিল-মে মাস থেকে বইয়ের পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত ও টেন্ডারের কাজ শুরু হয়। এবার তা শুরু করতে হয়েছে বলা চলে অক্টোবরে। তাছাড়া শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন এসেছে, পাঠ্যবই পরিমার্জন-সংশোধন করতে হয়েছে।
টেন্ডার বাতিল করে পুনরায় টেন্ডার দিতে হয়েছে। দেরি হওয়াটা খুবই সঙ্গত। তবে এটুকু আমি বলতে পারি, ধারণার চেয়ে কম সময়ের মধ্যে আমরা শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে পারবো। এনসিটিবি’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রাথমিকে বই জানুয়ারির শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে যাবে।
এছাড়া জানুযারির শুরুতে দশম শ্রেণির সকল শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছে দেওয়া হবে। ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ৯০ ভাগ বই ছাপানোর কাজ শেষ হবে বলে আমরা আশা করছি। আর জানুয়ারি মাসের মধ্যেই সব বই আমরা শিক্ষার্থীদের হাতে দিতে পারবো বলে বিশ্বাস করি। তিনি আরও বলেন, এবার বই উৎসব হবে না। উৎসবের চেয়ে বড় কথা শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছানো।
মন্তব্য করুন