জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির আহবান
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে দেশে গত কয়েক দিনে ঘটে যাওয়া ঘটনায় দলের পক্ষ থেকে উদ্বেগের কথা জানিয়েছে বিএনপি। দেশের শান্তি বিনষ্টকারী শক্তিকে প্রতিহত করতে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় ঐক্য গঠনে নেওয়ার জন্য দলটির প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহবান জানিয়েছে। গত বুধবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলটির পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল।
সন্ধ্যা ৬টা থেকে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত দেড় ঘন্টার বৈঠক শেষে যমুনার সামনে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম বলেন, বৈঠকে প্রধানত জাতীয় ঐক্য নিয়ে কথা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা দেশের সবাইকে শান্ত থাকার আহবান জানিয়েছেন, তিনি শান্তির বার্তা দিয়েছেন। ছাত্র-জনতা, শ্রমিকসহ রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি শান্তির বার্তা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা: হিন্দু-মুসলিম সহ জাতিধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে- সে কথা বলেছেন।
বৈঠক শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বলেছি, সবচেয়ে জরুরি নির্বাচনকেন্দ্রিক সংস্কারগুলো, এগুলো দ্রুত সম্পন্ন করে যতদ্রুত সম্ভব নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা অত্যন্ত জরুরি। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, গত কয়েক দিনের কর্মকান্ড নিয়ে আমাদের দলের পক্ষ থেকে যে উদ্বেগ, সেটি প্রধান উপদেষ্টাকে জানাতে এসেছি।
আমরা আশা করি, প্রধান উপদেষ্টা এই বিষয় দ্রুত শান্তিপূর্ণ ভাবে সমাধানের ব্যবস্থা করবেন। দেশে যাতে এমন কোনো অবস্থার সৃষ্টি না হয়, যাতে বিভাজন সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, এখন সেটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, তা হলো জাতীয় ঐক্য। আমাদের সামনে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য বিশেষ করে যারা বাংলাদেশে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায় অথবা স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করতে চায়, তাদের প্রতিহত ও প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের অবশ্যই জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। এই কথাগুলো আমরা বলে এসেছি।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ফসল হিসেবে সাড়ে তিন মাস আগে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা অর্পণ করে এ সরকার তাদের দায়িত্ব সম্পন্ন করবে এমনটিই আশা করে দেশবাসী। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থির করে তুলতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে নানা মহল।
আরও পড়ুনসর্বশেষ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির নামে চট্টগ্রামের আদালতে একজন আইনজীবী হত্যা। হত্যাকারীর ভূমিকায় রয়েছেন ভিন্ন ধর্মাবলম্বীর কতিপয় দুর্বৃত্ত। এ নিয়ে সারাদেশ এখন উত্তাল। এখানেও দেশি-বিদেশি চক্রের মদদ রয়েছে। রয়েছে পালিয়ে যাওয়া পতিত সরকারের চক্রান্ত। এর আগে রাজধানীতে ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
আর এতে ঢাকার সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকা রীতিমতো রণক্ষেত্রে পরিণত হয় বলে খবরে উঠে এসেছে। সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহতও হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়েছে পুলিশ। এমনকি সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হয়। একই দিন রাজধানীর দয়ালগঞ্জ মোড়ে ব্যাটারি চালিত রিকশা চালকরা রাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করলে পুরান ঢাকার বিস্তীর্ণ এলাকা যানজটে জিম্মি হয়ে পড়ে। জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকে গার্মেন্টসহ শিল্প-কলকারখানায় চলছে অস্থিরতা। পরিণতিতে শ্রমিকদের বেতন দিতে পারছে না অনেক প্রতিষ্ঠানের মালিক কর্তৃপক্ষ।
ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ জটিল হয়ে পড়ায় অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। শক্তভাবে এসব সমস্যা সামাল দিতে না পারলে দেশে গণতন্ত্র ও সুশাসন ফিরিয়ে আনার যে মিশনে অন্তর্বর্তী সরকার নিজেদের জড়িত করেছে, তা ক্রমান্বয়ে অনিশ্চিত হয়ে উঠবে। যদিও উচ্চ আদালতের আদেশ মোতাবেক ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকদের আপাতত সংকট মিটে গেলেও সতর্ক থাকতে হবে- নতুন নতুন দাবি নিয়ে ফ্যাসিবাদের দোসররা মাঠে নামার নানা ফন্দি-ফিকির করেই যাবে।
আমরা বলতে চাই, সামগ্রিকভাবে যে অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে, নানা কারণে জনভোগান্তি বাড়ছে তা আমলে নিতে হবে। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ, সংঘাত ও সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে যানজট, অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি কাম্য হতে পারে না। সংস্কার, সুশাসন, সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থেই অন্তর্বর্তী সরকারকে সব বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে হবে।
মন্তব্য করুন