শান্তি-সম্প্রীতি বজায় রাখুন
চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের হত্যার ঘটনায় ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে উত্তাল সারা দেশ। এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন, আলেম সমাজ, বিশ্ববিদ্যালয়- কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থী ও আইনজীবীরা হত্যার বিচার ও ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। এ হত্যার ঘটনায় বুধবার চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৩৩ জনকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী।
এ ছাড়া ইসকনকে আন্তর্জাতিক উগ্রপন্থী সংগঠন হিসেবে দাবি করে সংগঠনটি নিষিদ্ধ এবং আইনজীবী হত্যার বিচার চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় ও পুলিশ মহাপরিদর্শক বরাবর আইনি নোটিশও দেওয়া হয়েছে। চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারে ভারতের উদ্বেগ প্রকাশের পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে সেই উদ্বেগের কড়া জবাব দেয়া হয়। মঙ্গলবারের সংঘর্ষের ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় তিনটি মামলা হয়েছে।
একটি হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। চট্টগ্রাম শহরে দুইবার এবং নিজ গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় আরও দুইবার জানাজার পর পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে। শহরের জানাজায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা, সরকারের উপদেষ্টা, চট্টগ্রাম নগরীর মেয়র, আইনজীবী, বিচারক সহ হাজারো মানুষ অংশ নেন। জানাজায় উপস্থিত সাধারণ মানুষ হত্যাকারীদের গ্রেফতার, দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও ইসকন নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন। এদিকে এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় দায়ের করা তিনটি মামলায় ৭৬ জনের নাম উল্লেখসহ আরও ১ হাজার ৪০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
এদিকে চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকান্ডে ১৩ জন শনাক্ত হয়েছে। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে পরে তাদের মধ্য থেকে সাতজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, সিলভার রঙের হেলমেট, কমলা রঙের টি-শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা রামদা হাতে এক যুবক এবং লাল হেলমেট, নীল রঙের টিÑশার্ট ও জিন্স পরা বঁটি হাতে আরেক যুবক আইনজীবী আলিফকে কোপাচ্ছে। হত্যাকান্ডের হোতা হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশের বিভিন্ন তদন্ত সংস্থা। অপরাধীদের ধরতে পুলিশ ব্যাপক অভিযান চালাচ্ছে।
সারাদেশে বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশগুলিতে বক্তারা বলেন, আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবীকে নির্মমভাবে হত্যা দেশের ইতিহাসে নজির বিহীন।
একটি গোষ্ঠী দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে সনাতনীদের উস্কানি দিচ্ছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহবায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, ‘আমরা ভুলে যাইনি এই সংস্থা কীভাবে গত ১৬ বছর আওয়ামী লীগের সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতায় বেড়ে উঠেছে। জঙ্গি সংগঠন হিসাবে স্বৈরাচারের সঙ্গী হয়ে ভারতের প্রেসক্রিপশনে বাংলাদেশে অশান্তি সৃষ্টি করছে। অন্যদিকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, ‘আমরা ১৬ বছরের খুনি হাসিনাকে দেশছাড়া করেছি। ছোটোখাটো কিছু জঙ্গিকে দেশছাড়া করা আমাদের জন্য হাতের ময়লা’। চট্টগ্রাম নগরীর টাইগার পাশ মোড়ে বুধবার আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকান্ডের ঘটনায় আয়োজিত শোক সমাবেশে তারা একথা বলেন।
আরও পড়ুনবাংলাদেশ চিরকালই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধরে রেখেছে। মাঝে মধ্যে এ সম্প্রীতির ফাটল ধরেছে কতিপয় গোষ্ঠীর রাজনৈতিক অভিলাশের কারণে। এ দেশের লালিত সাংস্কৃতিক সংমিশ্রণ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথাই প্রকাশ করে আসছে। সমাজ ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বাস্তবতার কারণেই এ দেশে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার অপচ্ছায়া খুব স্বাচ্ছন্দ্যে ডানা মেলতে পারেনি কখনো, পারবেও না।
পতিত দেশি-বিদেশি চক্র স্রেফ রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে বিশেষ করে ধর্মীয় একটি সম্প্রদায়কে উস্কানি দিয়ে মাঠে নামাতে চায়। তাদের ব্যবহার করে আবারও হারানো ক্ষমতার মসনদে বসতে চায়। সচেতন মানুষকে এ ফাঁদে পা দেওয়া উচিত হবে না। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা দুটি শান্তি প্রিয় ধর্মীয় সম্প্রদায়কে মুখোমুখি দাঁড় করাতে নানা অপচেষ্টা চালাচ্ছে- চট্টগ্রাম আদালতে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকান্ড একটি নমুনা মাত্র।
এ রকম উস্কানি চক্রান্ত আরও আসতে পারে দেশি-বিদেশি চক্রের কাছ থেকে। সাবধান। সবাই সতর্ক থাকুন, শান্তি বজায় রাখুন, দল, মত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সব নাগরিক ঐক্যবদ্ধ থাকুন, চক্রান্তকারীদের নীল নকসা ব্যর্থ করে দিন। দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখুন সবাই মিলে।
মন্তব্য করুন