গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবার মান কোন পথে
স্বাস্থ্যসেবা একটি মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে অন্যতম। দেশের সূচনালগ্ন থেকে গ্রামীণ অঞ্চল শহর অঞ্চলের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে। অনুন্নত গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষার গুণগত মানের সীমাবদ্ধতা, স্বাস্থ্যসেবা সহ নানা প্রতিকূলতা গ্রামীণ অঞ্চল কে শহর অঞ্চলের তুলনায় পিছিয়ে রেখেছে।
বর্তমানে গ্রামীণ অঞ্চলের সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম সঠিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত। সঠিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য গ্রামীণ অঞ্চলে নেই পর্যাপ্ত সরকারি হাসপাতাল। গ্রামীণ পর্যায়ে যে সকল সরকারি হাসপাতাল রয়েছে বেশির ভাগের নেই উন্নত চিকিৎসা সামগ্রী, শহর অঞ্চলের মতো চিকিৎসা প্রদানের সক্ষমতা। ফলে জরুরি অবস্থায় গ্রামীণ মানুষদের শেষ ভরসাস্থল শহর অঞ্চলের হাসপাতালগুলো।
গ্রামীণ অঞ্চলের এই দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কে পুঁজি করে বর্তমানে গ্রামীণ পর্যায়ে গড়ে উঠছে বিভিন্ন মানহীন ক্লিনিক, বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। গ্রামীণ সাধারণ মানুষদের স্বাস্থ্য বিষয়ে অজ্ঞতাকে পুঁজি করে গড়ে ওঠা এইসকল বিভিন্ন মানহীন ক্লিনিক, বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার কে কেন্দ্র করে বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি ঘটছে অকাল মৃত্যুর মতো ঘটনা।
স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে শহরের তুলনায় গ্রামীণ মানুষদের মধ্যে জ্ঞানের স্বল্পতা থাকায় বেসরকারি ক্লিনিক ব্যবসায়ীদের টার্গেটে পরিণত হয়েছে দেশের গ্রামীণ স্বাস্থ্য খাত। গড়ে ওঠা বেশিরভাগ ক্লিনিকে সেবা দানে নেই দক্ষ ডাক্তার, নার্স ও আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা। মানহীন এই সকল ক্লিনিক ও বেসরকারি হাসপাতালে মিলছে না মানসম্মত চিকিৎসা সেবা ফলে বাড়ছে মানুষের মাঝে অসন্তোষ।
মানহীন এইসকল ক্লিনিক, বেসরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা নিতে এসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছেন গর্ভবতী মহিলারা। এইসব ক্লিনিকে অদক্ষ ডাক্তার ও নার্স সেবা দানের ফলে প্রায় সময় অকাল মৃত্যুর শিকার হতে হচ্ছে গর্ভবতী মায়েদের। কোনো কোনো ক্ষেত্রে গর্ভবতী মায়েরা অকাল মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে ফিরলেও অকাল মৃত্যুর শিকার হতে হচ্ছে নবজাতক শিশুদের।
এছাড়া প্রযুক্তিগত অনুন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রদানের কারণে বিভিন্ন টেস্ট পরিক্ষায় ভুয়া রিপোর্টের মতো মারাত্মক জটিলতা তৈরি হচ্ছে। সঠিক রিপোর্ট না পাওয়ায় দেওয়া হচ্ছে ভুল চিকিৎসা যা পরবর্তীতে মারাত্মক কোনো জটিল রোগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
অনেক বেসরকারি ক্লিনিক রয়েছে সেখানে দক্ষ ডাক্তার ও নার্স না থাকার পরেও অপারেশনের মতো মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। যা অনেক সময় মৃত্যুর কারণ হয়ে দাড়াচ্ছে। ফলে অকাল মৃত্যুতে অনেক পরিবার তার পরিবার উপার্জিত ব্যক্তি কে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। দেশের মিডিয়া অঙ্গনে এই সকল অকাল মৃত্যুর সংবাদ প্রায় সময় পাওয়া গেলেও বেশিরভাগ মৃত্যুর সংবাদ বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে অপ্রকাশিত অবস্থায় থেকে যাচ্ছে।
এছাড়া এসব বেসরকারি ক্লিনিকে রোগী ভর্তির ব্যাপারে চালু রয়েছে বিভিন্ন কমিশন ব্যবস্থা।একজন রোগীকে ভর্তি করালে সেই রোগীর বিভিন্ন টেস্ট পরীক্ষা বাবদ যে টাকা হাসপাতালে ব্যয় হয় তার একটি অংশ কমিশন বাবদ দেওয়া হয় দালাল শ্রেণির লোকদের।
ফলে টাকার লোভে স্বাস্থ্যসেবা সঠিকভাবে নিশ্চিত না হলেও দালাল শ্রেণির লোকেরা বিভিন্ন প্রলোভনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে নিম্নমানের ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা নিতে নিয়ে আসে। যার ফলে দিন দিন রোগীর স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে মধ্যস্থলে লাভবান হচ্ছে মানহীন বিভিন্ন ক্লিনিক ও দালান শ্রেণির মানুষগুলো।
আরও পড়ুনগড়ে ওঠা বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে প্রচারণার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে দেশের সুনামধন্য বিভিন্ন পর্যায়ের চিকিৎসকদের নাম। পাশাপাশি চিকিৎসা প্রদানে নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ। ফলে সাধারণ দরিদ্র মানুষদের কাছে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করে চিকিৎসা সেবা নেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাধারণত চিকিৎসা সেবায় সরকারিভাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক প্রদত্ত বিভিন্ন নীতিমালা থাকলেও এইসকল ক্লিনিক, বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে তা সম্পূর্ণভাবে মানা হচ্ছে না। গড়ে ওঠা বেশির ভাগ মানহীন বেসরকারি ক্লিনিক এর অনুমোদনে রয়েছে টাকা দিয়ে অবৈধভাবে লাইসেন্স নবায়ন বিতর্ক। তাছাড়া দেশব্যাপী এমন অনেক বেসরকারি অনুমোদনহীন ক্লিনিক রয়েছে যারা এখনো আইনের চোখে ফাঁকি দিয়ে তাদের নিম্নমানের সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় অভিযোগের ভিত্তিতে দেশব্যাপী অবৈধ বেসরকারি ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করলেও থেমে নেই অবৈধ ক্লিনিক, বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের গড়ে ওঠা। আইনের চোখ কে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে বিভিন্ন অবৈধ পথ অবলম্বনের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠছে বিভিন্ন অবৈধ মানহীন বেসরকারি ক্লিনিক।
মানহীন সকল বেসরকারি ক্লিনিক বন্ধে এবং সঠিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে প্রয়োজন নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা এবং দোষীদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা। মানুষের জীবন নিয়ে ব্যবসা করা দোষীদের এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে যাতে করে তাঁরা আইনের কোনো ফাঁকফোকর ব্যবহার করতে না পারে।
গ্রামীণ পর্যায়ে সঠিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সকলের মনোযোগ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। গ্রামীণ নিম্নমানের স্বাস্থ্যসেবায় যেন অকালে মরতে না হয় কোনো মানুষকে। কোনো শিশুকে যেন জন্মের পর তার মাকে হারিয়ে এতিমের মতো বড় হতে না হয়।
সাধারণ গ্রামীণ মানুষদের চাওয়া স্বাস্থ্যসেবায় দীর্ঘদিন ধরে অবহেলার শিকার গ্রামীণ পর্যায়ের নিম্নমানের স্বাস্থ্যসেবা নিরসন হোক। সঠিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের মাধ্যমে গ্রামীণ মানুষদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত হোক।
মো: মুজাহিদুল ইসলাম
লেখক : শিক্ষাথী, ইতিহাস বিভাগ, রাজশাহী কলেজ
০১৭৭৩-৯৬৩১৭৮
মন্তব্য করুন