অনলাইন প্রতারণা থেকে সাবধান
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে কখনও কখনও এদেশে নাইজেরিয়া, ঘানা, উগান্ডা প্রভৃতি আফ্রিকান দেশের নাগরিকরা ধরা পড়ে। এর আগেও আমরা দেখেছি চার বিদেশি (নাইজেরিয়া ও ঘানা) নাগরিককে আটক করেছিল পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অর্গানাইজড ক্রাইমের একটি টিম। আটককৃতরা খেলোয়াড় ও স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে আসেন আটবছর আগে। মাত্র ৩০ দিনের ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে আসেন তারা। আর অবস্থান করেন প্রায় ৮বছর। এই দীর্ঘ সময় তারা বাংলাদেশে অবস্থান করে ফেসবুকে বিভিন্ন প্রতারণা চালিয়ে যেতে থাকেন। ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও এত বছর তারা কী করে বাংলাদেশে অবস্থান করছিলেন এটাই বড় প্রশ্ন।
এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে এটা জানা গেছে যে, প্রতারকচক্র সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে -যা সামগ্রিকভাবেই উদ্বেগজনক পরিস্থিতিকে স্পষ্ট করে। উল্লেখ্য যে, ঘরে বসেই আয় করুন মাসে লাখ লাখ টাকা- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন লোভনীয় বিজ্ঞাপন অহরহ চোখে পড়ে। যেগুলো আসলে প্রতারণার ফাঁদ। এভাবে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া প্রতারক চক্রের ছয় সদস্য পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে বলে খবরে উঠে এসেছে। সম্প্রতি ঢাকার উত্তরা-পূর্ব থানাধীন ৬ নম্বর সেক্টর এলাকায় অভিযান চালায়। আর এ সময় গ্রেফতার হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘরে বসেই লাখ লাখ টাকা রোজগারের প্রলোভন দেখানো প্রতারক চক্র।
স্মর্তব্য, আমাদের যুবক, ডেসটিনি কিংবা ই-ভ্যালির মতো ঘটনা সংবাদ মাধ্যমের কল্যাণে আলোচিত হলেও কিছু মানুষ বারবার একই পথে হাঁটেন। পুড়ে যাবে জেনেও পতঙ্গ যেমন আগুনে ঝাঁপ দেয়, তেমনই বিনাশ্রমে অর্থ লাভের লোভে মানুষ ঋণ করে হলেও এসব জায়গায় বিনিয়োগ করেন। এর আগে (সবই সাবেক আওয়ামী লীগের আমলে) অ্যাপভিত্তিক অন লাইন ট্রেডিং গ্রুপ মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ (এমটিএফই) এর প্রতারণায় দেশের লাখ লাখ মানুষ পথে বসেছে। চক্রটি বাংলাদেশিদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। প্রতারিতদের বেশির ভাগই তরুণ এবং বিভিন্ন কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
শিক্ষক, ডাক্তার, আইনজীবী সাংবাদিকসহ অন্যান্য পেশার মানুষও জড়িয়ে পড়েছিল। গত বছরের এপ্রিলে কুমিল্লার মুরাদনগরে এ অ্যাপের লোভনীয় ফাঁদে পড়ে অর্ধশতাধিক যুবকের এক কোটি টাকা খোয়া যাওয়ার খবর প্রকাশিত হয়। এরপর রাজশাহীতেও একইভাবে হাজারো মানুষের সর্বস্বান্ত হওয়া, এমনকি এই অ্যাপের ফাঁদে কুয়েত প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতারিত হওয়ার খবরও প্রকাশিত হয়েছে। যারা সচেতন হয়েছেন, তারা প্রতারণার ফাঁদে পড়েনি। কিন্তু যারা লোভ ত্যাগ করতে পারেননি তারা প্রতারণার ফাঁদে পড়েন। এ ছাড়াও ফিশিং লিংক তৈরি করে অপরাধীরা টার্গেট করা নারীদের ফেসবুক মেসেঞ্জারে পাঠায়। ওই লিংকে ক্লিক করলে ফেসবুক ইন্টারফেস আসে। ভিকটিমরা লিংকে প্রবেশ করার জন্য তাদের ফেসবুক আইডি এবং পাসওয়ার্ড দেয়। তখন অপরাধীর কাছে ভিকটিমদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের আইডি ও পাসওয়ার্ড চলে যায়। পরে ওই আইডিতে প্রবেশ করে ভিকটিমের আইডির পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে। এরপর সে ওই ফেসবুক আইডি থেকে ভিকটিমের নিকটাত্মীয়দের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে টাকা নেয়। এ ছাড়া ভিকটিমের কাছে টাকা দাবি করে। টাকা দিলে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ফেরত দিত তারা। অন্যথায় তা দখলে রাখত।
আরও পড়ুনআবার সাইবার অপরাধের মাধ্যমে মানুষকে ব্ল্যাকমেলের মাধ্যমে টার্গেট নারী-পুরুষের সম্ভ্রম হানি শুধু নয়, হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে অর্থবিত্ত। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের আনাচে-কানাচে সক্রিয় অনেক সাইবার অপরাধী চক্র। সাধারণ নারীরা ব্ল্যাকমেলের শিকার হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। উচ্চ বিত্ত শ্রেণির ছেলেদেরও টার্গেট করে ব্ল্যাকমেল করছে সুসংবদ্ধ অপরাধীরা। তাদের কেউ কেউ মডেলিং, র্যাম্পিং য়ের নামে ছড়াচ্ছে প্রতারণার জাল। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অথবা খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও তৈরি করা হচ্ছে। পরে ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়া বা সবাইকে জানিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আদায় করা হচ্ছে বিপুল অর্থ। এই জাল থেকে বেরোতে না পেরে অনেকে বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে আত্মহত্যার পথ।
ইন্টারনেটে পরিচয়ের মাধ্যমে প্রথমে বন্ধুত্ব, প্রেম আর বিয়ের প্রতিশ্রুতি। তারপর দৈহিক সম্পর্ক পাতিয়ে গোপনে অন্তরঙ্গ ছবি বা ভিডিও তৈরি করে বেছে নেওয়া হচ্ছে ব্ল্যাকমেলের পথ। দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ যেহেতু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউবে সক্রিয় সেহেতু ও মাধ্যমকেই কাজে লাগাচ্ছে একশ্রেণির প্রতারক।
এসব প্রতারণার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে যাতে এরা বেরিয়ে যেতে না পারে সেদিকেও বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। সাইবার অপরাধ দমনে ব্ল্যাকমেলের ভুক্তভোগীদের সাহস নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি ব্ল্যাকমেলের শিকার হওয়ার ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে।
মন্তব্য করুন