কোকোপিট চারায় সবজি চাষে লাভবান হচ্ছেন জয়পুরহাটের কৃষক
জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধি : নারকেলের খোসা থেকে উৎপন্ন প্রাকৃতিক উপাদান ‘কোকোপিট’। মাটির বিকল্প হিসেবে চারা চাষে ব্যবহার করে নিরাপদ ও কীটনাশকমুক্ত সবজি উৎপাদন ব্যাপক লাভবান হচ্ছেন জয়পুরহাটের কৃষকরা। মাটির স্পর্শ ছাড়াই উৎপাদিত এ চারায় কীটনাশক ও সার কম লাগে। মাটির তুলনায় বেশি পানি ধরে রাখে এবং চারা দ্রুত বাড়তে সাহায্য করে। চারা সতেজ ও সবল থাকে। সবজির আকার এবং গুণমানও ভাল থাকে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে জেলায় ৮ হাজার ৯৮৫ হেক্টর জমিতে সবজির চাষ হয়। সে অনুযায়ী জেলায় মানসম্মত সবজির চারার ব্যাপক চাহিদা থাকলেও সরবরাহ নেই। লাভ বেশি পেয়ে কৃষকরা স্থানীয়ভাবে সংগ্রহের পাশাপাশি অন্য জেলা থেকেও কোকোপিটের চারা সংগ্রহ করে সবজি চাষেই এখন বেশি ঝুঁকছেন।
তাদেরই একজন সফল কৃষক মোশারফ হোসেন। বাড়ি জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার আয়মা গোপীনাথপুর গ্রামে। আগে প্রচলিত পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন করলেও সফলতার মুখ দেখেননি। কিন্তু গত দুই বছর থেকে কোকোপিটে চারা উৎপাদন করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। নিজস্ব ৪০ শতক জমিতে পৃথক দুটি সেড নির্মাণ করেছেন। যার প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়েছেন ‘মুন্না নার্সারী’।
কোকোপিট দিয়ে চারা তৈরির এ উদ্যোগে তাকে সার্বিকভাবে সহযোগীতা করেন জয়পুরহাটের একটি বেসরকারি সংস্থা। গত বছর খুব একটা ভালো করতে না পারলেও এবার পুরোপুরি সফল হয়েছেন মোশারফ। এবার চারা তৈরি করেছেন উন্নত জাতের, বাধাকপি, ফুলকপি, কাঁচা মরিচ ও টমেটোর। এরই মধ্যে ৮ থেকে সাড়ে ৮ লাখ টাকার বিভিন্ন ফসলের চারা বিক্রি হয়েছে। এখনও তার সেডে প্রায় ২ লাখ চারা তৈরি আছে।
আয়মা গ্রামের কৃষক শাহিনুর রহমান বলেন, মাত্র ২০ শতক জমিতে কোকোপিটের বাধা কপির চারা রোপন করেছিলেন। মাত্র ৫৫ দিনের মাথায় সেই কপি তিনি মাঠ থেকেই বিক্রি করে খরচ ছাড়াই ৬৫ হাজার টাকা লাভ করেছেন। কৃষক মাসুদ রানা বলেন, ৯ মাসে ২৫ শতক জমিতে কোকোপিটের চারা রোপন করে ১ লক্ষ ৫৩ হাজার টাকার বিভিন্ন জাতের সবজি বিক্রি করেছি।
আরও পড়ুনঅথচ কৃষিতে আগে এত লাভ কখনও করতে পারিনি। একই এলাকার কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, আগে মাটিতে বীজ ফলানো হতো। তখন অনেক চারার শেকড় ছিঁড়ে যেত। ফলন ভালো হতো না। কিন্তু কোকোপিটের চারা কখনও নষ্ট হয় না। জমিতে একভাবে বেড়ে ওঠে। ২৫ শতক জমিতে কোকোপিটের ৫৫টি লাউ গাছের চারা কিনে রোপন করে ৫২ হাজার টাকার লাউ বিক্রির কথা তিনি জানান।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মজিবুর রহমান বলেন, জেলায় প্রায় ৯ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হচ্ছে। কোকোপিটের চারায় বীজের অপচয় রোধ হয়। সকল চারা সমভাবে বেড়ে ওঠে।
চারাগুলো যখন মূল জমিতে রোপন করা হয়,তখন ট্রান্স প্লান্টিং ইনজুরিতে আক্রান্ত হয় না। ফলে প্রতিটি চারা সুস্থ্যভাবে বড় হতে পারে। এতে কৃষকরা ফলন বেশি পেয়ে থাকেন। এ ছাড়া রাসায়নিক সারের ব্যবহারও খুবই কম হয়। কোকোপিটের চারায় উৎপাদিত সবজি নিরাপদ।
মন্তব্য করুন