শিল্পখাতে জ্বালানি সংকট
গ্যাস সংকট ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য দেশে প্রায় ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম উৎপাদন হচ্ছে। বিতরণ কোম্পানিগুলো বলছে, চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুৎও মিলছে না। বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটে শিল্পখাতে বিপর্যয় নেমেছে। গত কয়েক মাসে কয়েকশ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। রপ্তানি আয় কমেছে। বিনিয়োগ থমকে আছে। কর্মসংস্থান বাড়ছে না।
এসব মন্তব্য ব্যবসায়ীদের। তারা আরও বলছেন, শিল্প খাত না বাঁচলে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি থেমে যাবে। তাই শিল্পের গ্যাস-বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে জোরালো উদ্যোগ নিতে হবে। তবে সরকার বলছে, তারা শিল্পের জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় বিশেষ জোর দিয়েছে। শিল্পাঞ্চলগুলোতে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে। দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে অনুসন্ধানে জোর দেওয়া হয়েছে।
সরকারি সংস্থা বলছে, গ্যাস সংকটের পেছনে দেশীয় উৎপাদন কমে যাওয়া একটা কারণ। পাশাপাশি এলএনজি আমদানির পরিমাণও কমেছে। খুব নিকট ভবিষ্যতে এই সংকট থেকে উত্তরণের পথও দেখতে পাচ্ছে না তারা। ক্রমবর্ধমান চাহিদার বিপরীতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরকারের একটি খসড়া পরিকল্পনার কথা জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
এটা সত্য, রাজধানীর অনেক এলাকায় প্রতি শীতেই গ্যাসের চাপ কম থাকে। গ্যাসের চাপ কম থাকায় ঢাকার আশে পাশের শিল্পাঞ্চলের জেনারেটর, বয়লার অচল রয়েছে, ফলে উৎপাদনও বন্ধ রাখার কথা জানাচ্ছেন শিল্প মালিকরা। গ্যাস সংকটে অনেক শিল্প কারখানার উৎপাদন কমেছে তিনভাগের এক ভাগে। গ্যাস সংকটের কারণে অনেকের জ্বালানি চাহিদার ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ডিজেল ব্যবহার করতে হয়, যাতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়।
সম্প্রতি রাজধানীতে দেশের শিল্প খাতে জ্বালানি সংকট সমাধানের পথ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব মন্তব্য করেন। সেমিনারে বলা হয়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকটে পোশাক খাতে ৩০-৩৫ শতাংশ উৎপাদন কমেছে। স্টিল কারখানায় উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে ২৫-৩০ শতাংশ। সিরামিক কারখানায় উৎপাদন অর্ধেকে নেমেছে। ডিজেল ব্যবহার ও শ্রমিকদের বাড়তি কাজের জন্য খরচ বেড়ে গেছে। পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন ক্ষুদ্র শিল্প সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাদের ডিজেল জেনারেটর চালানো সম্ভব নয়।
ফলে প্রায় ৪০ শতাংশ ক্ষুদ্র শিল্প বন্ধের পথে। জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির বলেন, গত ১৫ বছরে বিগত সরকারের মন্ত্রী এবং সরকারের সঙ্গে থাকা নির্দিষ্ট ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর সঙ্গে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের চুক্তিগুলো হয়েছে। এতে এই খাতে সুস্থ ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতাকে ব্যাহত করেছে।
এটি দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। সেই অবস্থার পরিবর্তন হবে। তিনি বলেন, সরকারের সঙ্গে সখ্য করে আর ব্যবসা হবে না। যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে এই খাতে কাজ করার সুযোগ পাবেন ভালো ব্যবসায়ীরা।
আরও পড়ুনএতে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা হবে এবং দেশের অর্থনীতিরও প্রবৃদ্ধি হবে। এখন থেকে রাজনৈতিক বিবেচনায় কিংবা দলীয় সম্পর্কের ভিত্তিতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি খাতে কোনো চুক্তি করা হবে না। তিনি বলেন, পাইপ লাইন না থাকায় ওই গ্যাস ঢাকায় বা শিল্প এলাকায় আনা যাচ্ছে না।
সিএনজি ফরম্যাটে এই গ্যাস ঢাকায় আনা গেলে শিল্পে সংকট কিছুটা হলেও কমবে। আগে সরকারের ওপর মহল থেকে শিল্প খাতকে বঞ্চিত করে বিদ্যুত বেশি গ্যাস দিতে বলা হতো।
এখন পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। এখন শিল্পে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ভোলা থেকে গ্যাস আনার টেন্ডার আহবান করা হবে। এ ছাড়া ৯ ডিসেম্বর অফশোর বিডিং টেন্ডার খোলা হবে। আগামী বছরের শুরুতেই বিশ্বের নামকরা জ্বালানি কোম্পানির সাথে অফশোরের গ্যাস নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর হবে বলে আশা করছে জ্বালানি মন্ত্রণালয়।
নিরাপদ জ্বালানি হিসেবে গৃহস্থালি, পরিবহণ ব্যবস্থা, শিল্পকারখানা, সারকারখানা এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে এর ব্যাপক ব্যবহারই গ্যাসের এ চাহিদা বৃদ্ধির কারণ। যেহেতু বাংলাদেশের জ্বালানি খাত মূলত প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপরই নির্ভরশীল।
কাজেই গ্যাস ক্ষেত্র থেকে উৎপাদন বৃদ্ধি নতুন গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার এবং বিকল্প জ্বালানির ব্যবহার নিশ্চিত করা না গেলে বাংলাদেশকে কঠিন জ্বালানি সংকটে পড়তে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পিত ও কার্যকর উদ্যোগই কেবল পারে এ সংকটের সমাধান দিতে।
মন্তব্য করুন