দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই
একটি দেশের সামগ্রিক সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে যদি প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দুর্নীতি বড় ধরনের কারণ হয়, তবে তা কতটা উদ্বেগের বলার অপেক্ষা রাখে না। পতিত শেখ হাসিনার গত ১৫ বছরের স্বৈর শাসনামলে দেশের নাগরিকদের সরকারি ও বেসরকারি সেবা পেতে ১ লাখ ৪৬ হাজার ২৫২টি কোটি টাকা ঘুস দিতে হয়েছে। এর মধ্যে ২০২৩ সালে এক বছরে ঘুস লেনদেন হয়েছে ১০ হাজার ৯০২ কোটি টাকা, যা ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের বাজেটের ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ ও জিডিপির শূন্য দশমিক ২২ শতাংশ।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে ‘সেবা খাতে দুর্নীতি: জাতীয় খানা জরিপ ২০২৩ বলে প্রকাশ করা হয়।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এই জরিপের প্রধান উদ্দেশ্য সরকার, নীতি নির্ধারক, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও অন্যান্য অংশীজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা, যেন তারা জরিপের ফল ও তার ওপর ভিত্তি করে টিআইবি প্রণীত সুপারিশ বিবেচনায় নিয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
আমরা বলতে চাই, যখন দুর্নীতি এমন সব ভয়ংকর চিত্র উঠে আসে তখন তা আমলে নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। পতিত আওয়ামী সরকারের পনের বছর দুর্নীতিই ছিল ব্যবসায় উন্নতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা -এই বিষয়টিকে সামনে রেখে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করা অপরিহার্য। কেননা, এটা অনুধাবন করা জরুরি যে, ব্যবসার উন্নতির সঙ্গে দেশের সামগ্রিক উন্নতির বিষয়টি জড়িত।
ফলে বিগত আওয়ামী সরকার দ্বারা লুন্ঠিত দেশের অর্থনীতিকে নতুন করে বাঁচিয়ে তুলতে হলে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং দুর্নীতির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করা টাকা দেশে ফেরাতে হবে। বিশেষ করে সরকারি অফিসগুলোয় দুর্নীতির অবস্থান এতটাই পাকাপোক্ত হয়েছিল যে দেশের জনগণের কল্যাণ ও ভাগ্যোন্নয়নের পথে তা প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
আরও পড়ুনসরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বেতন ও সুযোগ-সুবিধা গত এক দেড়দশকে অতিমাত্রায় বাড়ানো হলেও দুর্নীতিবাজদের অভ্যাসে তা ইতিবাচক কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি। যে কারণে বিগত সরকারের নেতা-কর্মি, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি বিপুল বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়ে পড়ে। তাদের পাচার করা টাকায় যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশে বহু ‘বেগমপাড়া’ গড়ে ওঠে।
দুর্নীতির টাকায় গড়ে ওঠা এসব ‘বেগমপাড়া’ বা দ্বিতীয় আবাসভূমিতে দুর্নীতিবাজ বাংলাদেশিরা তাদের পরিবার রেখে সে পাসপোর্ট গ্রহণ করে আবার বাংলাদেশে এসে সরকারি চাকরি বা ব্যবসা-বাণিজ্যে লিপ্ত হয়। তাইতো ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর জাতি দেখল পতিত আওয়ামী সরকারের অধিকাংশ মন্ত্রী, নেতা-কর্মি, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি দলীয় ব্যবসায়ীরা বিদেশে পালিয়েছে। অসুবিধা নেই।
সেসব দেশে তাদের অবৈধ উপায়ে অর্জিত বিপুল পরিমাণ অর্থ সম্পদ গচ্ছিত রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আখতারুজ্জামানের পুত্র সাইফুজ্জামানের বিদেশে এ পর্যন্ত সাড়ে ছয়শত বাড়ির সন্ধান পাওয়া গেছে বলে পত্র-পত্রিকায় খবর উঠে এসেছে।
দেশের মানুষ এবং দেশকে বাঁচাতে হলে এসব দুর্নীতিবাজদের কঠোর শাস্তি এবং বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা জরুরি। আমরা আশাবাদী অন্তর্বর্তী সরকার এ ব্যাপারে যথেষ্ট মনোযোগী এবং তারা এ ক্ষেত্রে সংস্কারে বিশেষভাবে মনোনিবেশ করেছেন।
মন্তব্য করুন