পৃথিবী মানুষের গ্রহ নয় !
যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. এলিস সিলভার দাবি করেছেন, মানুষই এলিয়েন বা ভিনগ্রহের প্রাণী। তার চাঞ্চল্যকর মতবাদ রীতিমতো ঝড় তুলেছে বিজ্ঞানপ্রেমীদের মনে।
ড. এলিস তার ‘হিউম্যান আর নট ফ্রম আর্থ : এ সায়েন্টিফিক ইভালুয়েশন অব দ্য এভিডেন্স’ বইয়ে রীতিমতো যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করতে চেয়েছেন, ‘মানুষ পৃথিবীর জীব নয়’; অর্থাৎ অন্য জীবদের মতো মানুষের সৃষ্টি পৃথিবীতে হয়নি। কয়েক লাখ বছর আগে অন্য গ্রহ থেকে মানুষকে পৃথিবীতে ছেড়ে যাওয়া হয়েছিল।
ড. এলিসের মতে, মানুষের ত্রুটিপূর্ণ শরীরই বুঝিয়ে দেয়, পৃথিবী মানুষের গ্রহ নয়। তার প্রশ্ন, পৃথিবীর অন্যান্য উন্নত প্রাণীর সঙ্গে মানুষের শরীরের এত পার্থক্য কেন? তিনি বলেন, পৃথিবীতে মানুষ ছাড়া সব প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী পরিবেশ থেকেই সরাসরি তাদের প্রয়োজন মিটিয়ে নেয়। উদ্ভিদ তার গায়ে এসে পড়া সূর্যালোক, বাতাসের কার্বন ডাই-অক্সাইড আর মাটি থেকে পানি নিয়ে নিজের খাবার তৈরি করে। বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীরা সরাসরি উদ্ভিদ খেয়ে বা অনান্য প্রাণীকে খেয়ে পৃথিবীতে বেঁচে থাকে। কিন্তু সরাসরি পরিবেশ থেকে নেওয়া খাবার হজম করতে পারে না একমাত্র মানুষই। তাই সে অন্যভাবে তার খাদ্যের প্রয়োজন মেটায়।
মানুষ যদি পৃথিবীরই প্রাণী হতো, তাহলে সে বাকি প্রাণীদের মতোই পরিবেশ থেকে পাওয়া খাবার সরাসরি খেয়ে হজম করতে পারত।
ড. এলিসের মতে, পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ ব্যাক পেইন রোগে ভোগে। কারণ, মানুষ পৃথিবীর অন্যান্য প্রাণীর মতো চার পায়ে হাঁটে না। ফলে হাঁটাচলা ও বিভিন্ন কাজে মাধ্যাকর্ষণের সাহায্য পায় না। তার প্রশ্ন, পৃথিবীর বাকি প্রাণীদের কি ঘাড়ে, পিঠে, কোমরে ব্যথা হয়! মানুষের এই ‘ব্যাক পেইন’ রোগটিই প্রমাণ করে, মানুষের দেহ অন্য কোনো গ্রহে বসবাসের উপযুক্ত হয়ে সৃষ্টি হয়েছিল। যে গ্রহের মাধ্যাকর্ষণ ছিল পৃথিবীর তুলনায় অনেক কম।
আরও পড়ুন
তিনি বলছেন, মানুষই হলো পৃথিবীর সবচেয়ে খাপছাড়া জীব এবং পৃথিবীর জলবায়ুতে টিকে থাকার পক্ষে সবচেয়ে অনুপযুক্ত। কারণ পৃথিবীর বাকি সব প্রাণী সারা জীবন খোলা আকাশের নিচে, প্রখর রৌদ্র, তুমুল ঝড়-বৃষ্টি, প্রচণ্ড ঠান্ডা সহ্য করে বেঁচে থাকতে পারে। মানুষই শুধু পৃথিবীর বাকি সব প্রাণীর মতো বৃষ্টিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভিজতে পারে না। কয়েক ঘণ্টার বেশি সূর্যের প্রখর রৌদ্রে থাকলে একমাত্র মানুষেরই ‘সান স্ট্রোক’ হয়। সূর্যের আলোয় মানুষেরই শুধু চোখ ধাঁধিয়ে যায়, অন্য প্রাণীর তা হয় না। কারণ সূর্যরশ্মি মানুষের পক্ষে উপযুক্ত নয় এবং মানুষ থাকত কোনো নরম আলোয় ভরা গ্রহে।
মানুষের ঘুম নিয়ে গবেষণা করে গবেষকরা বলছেন পৃথিবীতে দিন ২৪ ঘণ্টার, কিন্তু আমাদের বডি ক্লক (দেহের অভ্যন্তরীণ ঘড়ি) বলছে, আমাদের দিন হওয়া উচিত ছিল ২৫ ঘণ্টার। ড. এলিস বলছেন, বডি ক্লকের সঙ্গে গ্রহের ঘড়ির মিল না থাকাই প্রমাণ করে মানুষ এমন কোনো গ্রহ থেকে এসেছে যাদের ২৫ ঘণ্টায় একদিন হতো।
ড. এলিস আরও প্রশ্ন করেছেন, মানবশিশুর জন্মপ্রক্রিয়া পৃথিবীর অন্য প্রাণীদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। একটি মানবশিশু জন্মের সময় তার মাথার আকার অস্বাভাবিকভাবে বড় থাকে। এ কারণে স্বাভাবিকভাবে জন্ম দিতে গিয়ে অনেক মায়ের মৃত্যু হয়। পৃথিবীর অন্য কোনো প্রাণীর সঙ্গে এমনটি ঘটে না। এ ছাড়াও আরও কিছু প্রশ্ন তিনি রেখেছেন সবার সামনে। যেমন-মানবশিশু জন্মের পরই পৃথিবীর উন্নত প্রাণীর শাবকদের মতো হাঁটতে শেখে না কেন? মানুষের দেহে কেন ২২৩টি অতিরিক্ত জিন আছে? পৃথিবীতে থাকা কিছু দীর্ঘজীবী প্রাণী, যেমন আফ্রিকার হাতি, অ্যালডাবরা ও গ্যালাপাগোস কচ্ছপ, বো-হেড তিমি, গ্রেটার ফ্লেমিঙ্গো, গ্রিন-উইং ম্যাকাওদের চোখেও কি চল্লিশের পর চালশে (হাইপার মেট্রোপিয়া) পড়ে? বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের শ্রবণশক্তি কমে যায় কেন?
ড. এলিস মনে করেন, এ পৃথিবীটা আসলে একটি মহাজাগতিক কয়েদখানা। যেখানে মানুষকে ছেড়ে যাওয়া হয়েছে। মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই হিংস্র ও নিজেদের মধ্যে বিবাদে জড়িয়ে যায়। সম্ভবত মানুষকে এই পৃথিবীতে ছেড়ে যাওয়া হয়েছে যাতে তারা নিজেদেরকে শুধরে নিতে পারে।
মন্তব্য করুন