ঢাকা-দিল্লির সম্পর্কোন্নয়ন
বাংলাদেশের জনগণকে গুরুত্ব দিয়ে এবং জনগণকে নিয়ে এ দেশের সঙ্গে ইতিবাচক ও গঠনমূলক সম্পর্ক চায় ভারত। এই লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করবে ভারত সরকার- এই তথ্য জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রী। বিভিন্ন কারণে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে যে মেঘ জমেছে তা সরাতে চায় ভারত। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে ভারত সরকারের এ বার্তা পৌঁছে দেন দেশটির পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রী।
এ মেঘ সরানোর বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করা হয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও। বলা হয়েছে, স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দুই দেশ এক যোগে কাজ করবে। একই সঙ্গে ভারতে বসে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিবৃতি বক্তব্য দিয়ে যে উত্তেজনা ছড়াচ্ছেন, তা যে অন্তর্বর্তী সরকার চায় না, সে বিষয়েও বাংলাদেশের উদ্বেগ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কূটনীতিকদের একটি ডেলিগেশন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, মানবাধিকার পরিস্থিতি ও শ্রম অধিকার নিয়ে জানতে চেয়েছে। দুটি বৈঠকই গত সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথমে ইইউ ডেলিগেশন ও পরে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে যমুনার সামনে ব্রিফ করেন অন্তর্বর্তী সরকারের বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের বৈঠক প্রসঙ্গে রিজওয়ান হাসান বলেন, বারবার তারা (ভারত সরকার) বলেছে, তারা বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় যে সম্পর্ক এটি এগিয়ে নিতে এবং আরও জোরদার করতে আগ্রহী। পররাষ্ট্র সচিব জানিয়েছেন, জুলাই-আগস্টে (বাংলাদেশে) যে বিপ্লব হয়েছে, সেটি তারা (ভারত সরকার) মনিটর করেছেন, তারা দেখেছেন এবং তারা এ বিষয়ে অবগত।
ভারতে যে অপপ্রচার চালানো হয়েছে, সে বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উদ্বেগ জানানো হয়েছে এমনটি জানিয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী যিনি ওখানে (দিল্লি) আশ্রয় নিয়েছেন, সেখান থেকে কথাবার্তা বলছেন, এ কথাবার্তার মাধ্যমে এক ধরনের উত্তেজনা তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের উদ্বেগ স্পষ্টভাবে ভারতকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরিবেশ উপদেষ্টা আরও বলেন, ভারতে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ইমেজ প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বলেও পররাষ্ট্র সচিবকে জানানো হয়েছে।
পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দিন এ বিষয়ে বলেন, এক ধরনের বোঝাপড়ার অভাব আছে। আজকে উনি (ভারতের পররাষ্ট্র সচিব) এখানে আসার পর আমার প্রত্যাশা বোঝাপড়ার অভাবটা কমবে। তিনি বলেন, বিশ্বাসের একটি ঘাটতি আছে। আজকের বৈঠক ওই ঘাটতি মেটানোর জন্য এগিয়ে যাওয়ার একটি পদক্ষেপ। আর রাজনৈতিক বার্তা হচ্ছে-এই পথটি অনুসরণ করে এর পরবর্তী স্তরে আলাপ-আলোচনা করে সেটি আশা করব।
আরও পড়ুনবৈঠকে অংশ নেওয়ার জন্য ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি গত সোমবার সকালে ঢাকা আসেন। বিকালে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো: তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতি দেন এবং পরে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দিন। প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে এটিই ভারতের উর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তার প্রথম ঢাকা সফর।
বাংলাদেশের তরফে অনেক বারই বলা হয়েছে ভারতকে ৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতি মেনে নিয়েই এটি দ্রুত উপলব্ধি করলে তা উভয় দেশের জনগণের জন্যই মঙ্গল বয়ে আনবে বলে আমরা মনে করি। কোনো রাজনৈতিক দলের কারণে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক বিনষ্ট হবে-এটা কূটনৈতিক শিষ্টাচারের বাইরের কথা। প্রতিবেশী দেশ আর রাজনৈতিক দল দুটো ভিন্ন জিনিস। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সঙ্গে দুই দেশের সম্পর্ক কেন নষ্ট হবে -এটা ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে বুঝতে হবে।
একটি রাষ্ট্রে সরকার আসবে, সরকার যাবে, কিন্তু জনগণ সব সময় থাকবে। সম্পর্ক হবে ওই রাষ্ট্রের জনগণ এবং তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কিন্তু ভারত করেছে উল্টো কাজটি। জনগণ বাদ দিয়ে একটি দালাল রাজনৈতিক দলকে তাদের দাসে পরিণত করেছে। এর ফল ভুগতে হবে ভারতকেই। বাংলাদেশের জনগণ এতে ভারতের প্রতি ক্ষুব্ধ হবে। বৈরিতা বাড়বে।
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের অপপ্রচার বন্ধ করতে হবে। পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সমতার ভিত্তিতে উভয় দেশের মধ্যে বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। একটি নির্দিষ্ট দল নয়, বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের জনগণের সাথে ভারতকে বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে চিরটাকাল - এর কোনো বিকল্প নেই।
মন্তব্য করুন