অবৈধ পথে সোনা চোরাচালান
প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোন না কোন বিমান বন্দর কিংবা স্থলবন্দরে সোনা চোরাচালানের ঘটনা ঘটছে। প্রতি সপ্তাহে একাধিক অবৈধ সোনার চালান দেশে আসার সংবাদ উদ্বেগজনক। মূলত অবৈধ মুলাফা লোভের কারণেই অবৈধ পথে দেশে সোনার চালান আসছে।
পত্রপত্রিকার খবরে প্রকাশ, ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে মালয়েশিয়া থেকে আসা পাঁচ যাত্রীর কাছ থেকে প্রায় ৭ কেজি সোনা জব্দ করছে ঢাকা কাস্টমস হাউসের একটি দল। এসব সোনার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা বলে জানিয়েছে কাস্টমস হাউস। গত মঙ্গলবার বিমানবন্দর কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার মো. আল আমিন জানিয়েছেন, এ ঘটনায় ৫ জনকে আটক করা হয়েছে।
তারা হলেন রুবেল হোসেন (২২), দুলাল আহম্মেদ (৩৫), সামিউল ইসলাম (৩৩), সবুজ আলী (২৪) ও সাগর মিয়া (২৭)। কাস্টমস হাউস জানিয়েছে, মালয়েশিয়া থেকে আসা এয়ার এশিয়ার একটি ফ্লাইট সোমবার রাত আটটায় বিমানবন্দরে নামে। এরপর সাড়ে ৩ টার দিকে বাটিক এয়ারের আরেকটি ফ্লাইট ও বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
এরপর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দুটি উড়োজাহাজের পাঁচ সন্দেহভাজন যাত্রীর আনা মালপত্রের সঙ্গে কম্বলে প্যাঁচানো ওয়েল্ডিং মেশিন চিহ্নিত করা হয়। তারপর স্ক্যান করে প্রতিটি ওয়েল্ডিং মেশিনের কয়েলের ভিতরে মোট পাঁচটি সোনার চাকতি, দুটি সোনার টুকরা ও ১০০ গ্রাম স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়। জব্দ করা এসব সোনার ওজন প্রায় ৭ কেজি।
পাচারের উদ্দেশ্যে সোনা গলিয়ে বানানো হয়েছে বেল্টের বকলেস। তার ওপর দেওয়া হয়েছে রুপার আবরণ। সেই বেল্ট পরিহিত অবস্থায় গত মঙ্গলবার খুলনা সচিবুনিয়া মোড়ে গ্রেপ্তার হয় বাবুল ধর (৩৮) ও নয়ন মানিক (২৬) নামে দুই পাচারকারী। গ্রেপ্তাররা ইমাম পরিবহনের একটি বাসে চট্টগ্রাম থেকে সাতক্ষীরা যাচ্ছিল।
এছাড়া দুইদিন পর ফের সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানের সিটের নিচ থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় প্রায় সোয়া এক কোটি টাকা মূল্যের সোনার চালান জব্দ করেছে শুল্ক গোয়েন্দারা। শুক্রবার সকালে দুবাই থেকে আসা বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট বিজি-২৪৮ এর সিটের নিচ থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পলিথিনে রাখা সোনার চালানটি জব্দ করা হয়।
এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর দুবাই থেকে ছেড়ে আসা বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটের অভ্যন্তরে পরিত্যক্ত অবস্থায় ১১ পিস সোনার বার জব্দ করা হয়। যার ওজন ছিল এক কেজি ২৮৩ গ্রাম এবং বাজার মূল্য ছিল আনুমানিক এক কোটি ৩৭ লাখ ৫২ হাজার টাকা।
আরও পড়ুনগত কয়েকবছরে শুল্ক গোয়েন্দারা অবৈধ পথে আসা কয়েক হাজার কেজি সোনা উদ্ধার করেছে। এছাড়া পুলিশ, র্যাব ও অন্যান্য বাহিনীও বিভিন্ন সময় সোনা জব্দ করেছে। জানা গেছে, চোরাচালানকৃত সোনার বেশির ভাগ বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারতের সোনা ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দেয়া হয়।
এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে দেশি-বিদেশি সিন্ডিকেট। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হচ্ছে সোনা পাচারের ট্রানজিট রুট। দীর্ঘদিন ধরেই এ বিমানবন্দরে একটি শক্তিশালী চক্র লাগেজ ব্যবসার আড়ালে সোনা, রুপা, মাদক ও মুদ্রাসহ নানা রকম মালামাল পাচার করছে।
অভিযোগ রয়েছে, বিগত পনের বছরে সোনা চোরাচালানকারী চক্র আরও শক্তিশালী হয়েছে কারণ সে সময়ের ক্ষমতাশীলরাই এ সোনা চোরাচালানের আন্তর্জাতিক সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত ছিল। এখন তাদের প্রেতাত্মারা বিমানবন্দরে এ অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে।
বিমানবন্দরে সোনাসহ অন্যান্য বস্তু চোরাচালানের নেপথ্যে সক্রিয় রয়েছে দেশি-বিদেশি সিন্ডিকেট ও প্রভাবশালী চক্র। এই প্রভাবশালী চক্র হলো বিগত পনের বছরের পতিত ক্ষমতাশীল সরকারের রাঘব-বোয়ালরা। তারাই ছিল সিন্ডিকেটের হোতা, নেপথ্যের গডফাদার। এদের সমূলে উৎখাত করা দরকার। একজন অপরাধীর অবস্থান যাই হোক না কেন-তার দ্বারা সমাজ কলুষিত হয়, রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
কাজেই অপরাধীর যথাযথ শাস্তি হওয়া উচিত। পাশাপাশি সোনা চোরাচালান বন্ধে দেশের জুয়েলারি ব্যবসার দিকেও তীক্ষ নজর রাখা দরকার। আপন জুয়েলার্স থেকে ১৫ মণ সোনা উদ্ধারের ঘটনা দেশের অভ্যন্তরে এই ব্যবসার ওপর তীক্ষ নজর রাখার তাগিদ সৃষ্টি করেছে। চোরাকারবারীদের প্রতি কঠোর হওয়ার বিষয়টিও প্রাসঙ্গিকতার দাবিদার।
মন্তব্য করুন