বগুড়ায় কৃষি উদ্যোক্তাদের আশার আলো দেখাচ্ছে বিশ্বের দামী ফুল লিলিয়ামের সফল উৎপাদন
হাফিজা বিনা : বগুড়ায় প্রথমবারের মত ফুল চাষে আশার আলো দেখাচ্ছে শীত প্রধান দেশ নেদারল্যান্ডের অন্যতম ও আকর্ষণীয় ফুল লিলিয়াম। জেলার শাজাহানপুর উপজেলার সুজাবাদ গ্রীন নার্সারীতে শোভাপাচ্ছে হলুদ রঙের এই দৃষ্টিনন্দন ফুল।
এর মধ্যে দিয়ে বগুড়ায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা ফুল চাষে নতুন সংযোজন হতে যাচ্ছে ভিনদেশী এই লিলিয়াম ফুল। বিশ্বে কাট ফ্লাওয়ার বাণিজ্যে শীর্ষ ১০টি ফুলের মধ্যে চতুর্থ অবস্থানে আছে ফুলটি। নার্সারীটিতে নতুন প্রজাতির এই ফুল দেখতে অনেকেই আসছেন। উদ্যোক্তারা আশা করছেন লিলিয়াম ফুল চাষ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে সেইসাথে নতুন প্রজন্ম বা ফুলপ্রেমীদের জন্যও শুভবার্তা বয়ে আনবে।
লিলিয়াম লিলিয়েসি পরিবারভূক্ত একটি বর্ষজীবী কন্দজ ফুল। হলুদ, সাদা, লাল, গোলাপী এবং বেগুনী রঙে লিলিয়াম পাওয়া যায়। ঠান্ডা আবহাওয়ায় পলিনেট হাউসের মধ্যে বাল্ব বা কন্দ থেকে এ ফুল চাষ করা হয়। সুনিস্কাশিত এবং জৈবসার সমৃদ্ধ বেলে দোআঁশ মাটি লিলিয়াম চাষের জন্য উপযোগী।
শীত প্রধান দেশগুলোতে কন্দ বপনের ৯০ দিনের মধ্যে ফুল সংগ্রহের উপযোগী হলেও বগুড়ায় ৫৫ দিনের মধ্যেই এই ফুল সংগ্রহের উপযোগী হয়েছে। বাংলাদেশে ২০১৫ সাল থেকে লিলিয়ামের চাষের ওপর গবেষণা শুরু করে। সম্প্রতি দেশের বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান লাল তীর বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পরিক্ষামূলকভাবে নার্সারী ও কৃষক পর্যায়ে লিলিয়াম ফুল চাষের জন্য প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করেছে। ইতোমধ্যে তা সফলও হয়েছে।
গ্রীন নার্সারী প্রধান নির্বাহী রেজোয়ানুল ইসলাম করতোয়া’কে জানান, বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান লাল তীর লিমিটেডের সহযোগিতায় নেদারল্যান্ডের থেকে নিয়ে আসা ২শ’ কন্দ নিয়ে পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করি। মাত্র ৫৫ দিনে হারভেস্টে চলে আসে। এতে আমরা খুশি। অল্প সময়ের মধ্যে লাভজনক ফুলের চাষ আগামীতে বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ করা হবে। এটা খুব দামি ফুল।
আরও পড়ুনবাজারে চাহিদাও ব্যাপক। নতুন প্রজন্ম বা ফুলপ্রেমীদের বিশেষ দিনের এবং বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য এই ফুল অনেকের কাছেই লোভনীয় হয়ে উঠবে সন্দেহ নেই। এরই মধ্যে দেশের বাজারে বিদেশী অনেক ফুলের বাজার তৈরি হয়েছে। সেক্ষেত্রে অত্যন্ত কম খরচে এই ফুলের সফল চাষের পর আশা করা যাচ্ছে খুব শীঘ্রই দেশের মাটিতে চাষ করা কন্দ থেকেই বিভিন্ন জায়গায় লিলিয়াম ফুলের চাষ এবং নতুন বাজার সৃষ্টি হবে।
ইতোমধ্যে অনেক কৃষক আসছেন, দেখছেন খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। দেশে যদি এই ফুলের চাষ হয় তবে দেশের ফুলচাষীরা লাভবান হবেন তাতে সন্দেহ নেই। বগুড়া মালতীনগরের গৃহবধূ খাদিজাতুল কোবরা রীতু বলেন, আমরা ইউটিউবে বিশ্বের দামী লিলিয়াম ফুল দেখেছিলাম। বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পারলাম বগুড়ায় এইফুলটি চাষ হয়েছে তাই নিজের চোখে দেখতে এসেছি। প্রথমবারের মতো এই ফুল দেখে অনেকে উচ্ছ্বসিত হয়েছি। খুব ভাল লাগলো। অনেকগুলো ছবি তুললাম।
লাল তীর সীড লিমিটেড বগুড়ার সিনিয়র ম্যানেজার (পিডিএস) মো. জহুরুল ইসলাম করতোয়া’কে জানান, আমরা চেষ্টা করছি বিদেশিদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কৃষকদের সবজিসহ নানা কৃষি পণ্য উৎপাদনে এগিয়ে নিতে। সম্প্রতি লেদারল্যান্ডস থেকে লিলিয়াম ফুলের বাল্ব (কন্দ) এনে চাষিদের দেওয়া হয়েছে। অল্প দিনের মধ্যে ভালো উৎপাদন হওয়ায় বিদেশি জাতের লিলিয়াম ফুল চাষে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আশাকরি এই ফুলের উৎপাদন বাড়লে আগামীতে বাংলাদেশ থেকে এই ফুল রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করবে।
শাজাহানপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আমিনা খাতুন বলেন, লিলিয়াম ফুল বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। লিলিয়াম ফুলের বর্ণ-বৈচিত্র্য ও সুগন্ধের কারণে দেশেও চাহিদা রয়েছে। বিদেশী ফুল আমদানী করতে অনেক খরচ করতে হয়।
সেক্ষেত্রে দেশেই এই বিদেশী ফুল চাষ হলে দেশের টাকা বাঁচবে এবং নতুন নতুন কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি হবে। পরীক্ষামূলকভাবে এই ফুল চাষে সফল হওয়ার পর যদি কোন কৃষক এই ফুল চাষে আগ্রহী হয় তবে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন