প্রবাসী আয় বেড়েছে
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে বড় ধরনের উল্লম্ফন হয়েছে। সম্প্রতি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই বাড়ছে রেমিট্যান্স। যেন রেমিট্যান্সের পালে হাওয়া লেগেছে-যা ইতিবাচক। খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রবাসীরা আগের থেকে বেশি রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর তদারকির কারণে অযৌক্তিক আমদানি বন্ধ হয়েছে।
রপ্তানি আয় এবং রেমিট্যান্স ডলার দিয়েই আমদানি দায় পরিশোধ সম্ভব হচ্ছে। তাই পুনরায় রিজার্ভ গঠনে আশার আলো দেখা যাচ্ছে। চলতি মাসের প্রথম ১৪ দিনে দেশে এসেছে ১৩৮ কোটি ১৩ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স। এই হিসাবে প্রতিদিন গড়ে দেশে এসেছে ৯ কোটি ৮৭ লাখ ডলার রেমিট্যান্স। গত রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
এতে বলা হয়, চলতি ডিসেম্বর মাসের প্রথম ১৪ দিনে দেশে এসেছে ১৩৮ কোটি ১৩ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স। আর গত নভেম্বর ও অক্টোবরের একই সময়ে এসেছিল যথাক্রমে ১০৯ কোটি ৭৬ লাখ ও ১১২ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। অক্টোবর ও নভেম্বরের তুলনায় ডিসেম্বরের প্রথম দুই সপ্তাহে বেড়েছে রেমিট্যান্স প্রবাহ।
এর আগে, গত জুন মাসে ২৫৩ কোটি ৮৬ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসার পর চলতি অর্থ বছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে প্রবাসী আয় এসেছিল প্রায় ১৯১ কোটি মার্কিন ডলার, যা গত ১০ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম আয় ছিল। তবে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। এর ধারাবাহিকতায় গত আগস্টে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
এ ছাড়া গত সেপ্টেম্বরে দেশে এসেছে চলতি অর্থ বছরের সর্বোচ্চ ২৪০ কোটি ৪৭ লাখ ৯০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স। অক্টোবরে এসেছে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার। আর সবশেষ নভেম্বরে এসেছে ২১৯ কোটি ৯৫ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স।
আরও পড়ুনলক্ষ্যণীয় যে, রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিতে কতটা অবদান রাখে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেলে তা যেমন উদ্বেগের, তেমনি যখন রেমিট্যান্স বাড়ছে বলে জানা যাচ্ছে, তখন এই অগ্রগতি ধরে রাখাসহ সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিশ্চিত করা জরুরি। এ ছাড়া বলার অপেক্ষা রাখে না, দক্ষ শ্রমিক বাড়লে বিশ্বে দেশের সুনাম বৃদ্ধি পাবে এবং নতুন নতুন শ্রম বাজার তৈরি হবে। ফলে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির দিকেও নজর দিতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।
রেমিট্যান্স আসার পেছনে বৈষম্য বিরোধী সচেতনতা কাজ করছে। আবার বৈধপথে ডলারের মূল্য বৃদ্ধিতে হুন্ডি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন তারা। এতে রেমিট্যান্স আসার গতি বাড়ছে। গত দুই বছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যাপকভাবে কমে যাওয়া নিয়ে আলোচনা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর রিজার্ভ বাড়বে বলে আশ্বাস দেন।
তার বাস্তব প্রতিফল আমরা দেখতে পাচ্ছি। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, দীর্ঘ সময় ধরে অস্থির দেশের ডলার বাজার। বিপুল অর্থ পাচার আর সিন্ডিকেটের কারণে ডলারের সংকট কাটছিল না। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হয়েছে। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে আশানুরূপ প্রবৃদ্ধির ফলে রিজার্ভের পতন ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। বিশ্ব ব্যাংক, এডিবিসহ বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে নতুন করে ঋণ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তাই স্বল্পসময়ের ব্যবধানে ডলার বাজারে স্বস্তি ফিরে আসবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
প্রবাসীদের এ উৎসাহ ধরে রাখতে হলে সরকারকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। দেশ যদি সঠিক পথে পরিচালিত হয়, তাহলে প্রবাসীরা বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে আরও বেশি অনুপ্রাণিত হবেন। দেশ আবারও বিপদে গেলে প্রবাসীরা হতাশ হবেন। অন্তর্বর্তী সরকার বিমান বন্দরে প্রবাসীদের জন্য সেবার মান বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। প্রবাসীরা যদি তাদের প্রাপ্য মর্যাদাটুকু পান, তাহলে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। বৈধপথে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স যেন পাঠায় সেটিকে সামনে রেখেও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
মন্তব্য করুন