কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের ৪০টি মডেল ঘর নির্মাণ সম্পন্ন
বগুড়ার ১২শ’ স্বল্প ও মাঝারি চাষী এবার বিনা খরচে অহিমায়িত ঘরে আলু সংরক্ষণ করতে যাচ্ছেন
স্টাফ রিপোর্টার : চলতি মৌসুমে বগুড়ার ক্ষুদ্র ও মাঝারি ১২শ’ আলু চাষী তাদের উৎপাদিত ১২শ’ মেট্রিক টন আলু বিনা খরচে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর নির্মিত অহিমায়িত সংরক্ষণাগারে সংরক্ষণ করতে যাচ্ছেন। জেলার ৭টি উপজেলায় ৪০টি মডেল ঘরে বস্তা ছাড়াই ওই পরিমাণ আলু সংরক্ষণ করা যাবে। এসব সংরক্ষণাগারে ৩ থেকে ৪ মাস পর্যন্ত সংক্ষণকৃত আলু ভাল অবস্থায় থাকে।
খরচ ছাড়াই আলু সংরক্ষণ করার সুযোগ পাওয়ায় এবার একদিকে যেমন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ১২শ’ আলু চাষীর আর্থিক সাশ্রয় হবে। অন্যদিকে সংরক্ষণ অভাবে জমি থেকেই স্বল্প মূল্যে আলু বিক্রি করতে হবে না এবং আলুর লভ্যাংশ বেশি পেয়ে অনেকটা উপকৃত হবেন। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বগুড়া জেলা কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য জানাগেছে।
বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা ইউনিয়নের মাঝবাড়ি গ্রামের আলু চাষী মো: শাকিল হোসেন বলেন, সরকারি খরচে মডেল আলু সংরক্ষণাগার নির্মাণ করে দেয়ায় তারা বিনা খরচে আলু সংরক্ষণ করতে পারবেন। ফলে ক্ষুদ্র আলু চাষীদের হিমাগারের বিড়ম্বনার হাত থেকে রক্ষা পাবেন। তাছাড়া প্রায়ই বিভিন্ন স্থান থেকে আলু চাষীরা এসব মডেল ঘর দেখে যাচ্ছেন। তারা বলেন এরকম সংরক্ষণাগার নির্মাণ করলে অন্তত ১২ থেকে ১৫ বছর তাদেরকে আর আলু সংরক্ষণে ভোগান্তি পোহাতে হবে না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়া জেলা কার্যালয় সূত্র জানায়, বগুড়া জেলায় প্রতি বছর প্রায় ১২ লাখ মেট্রিক টন বিভিন্ন জাতের আলু উৎপাদন হয়ে থাকে। এরমধ্যে গত ২০২৩-২০২৪ মৌসুমে ১১ লাখ ৯৩ হাজার ৯শ’ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়। আর চলতি মৌসুমে আবাদ করা ৫৫ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১১ লাখ ৯৯ হাজার ৯শ’ মেট্রিক টন।
জেলায় বছরে চাহিদা রয়েছে ৩ লক্ষাধিক মেট্রিক টন। বাঁকী আলুর মধ্যে সংরক্ষণের জন্য জেলার ৪২টি হিমাগারে ধারণ ক্ষমতা রয়েছে মাত্র ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৬শ’ মেট্রিক টন। আর বিশাল পরিমাণ আলু সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় সেই আলু চলে যায় বগুড়াসহ বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীদের হাতে। আলু উত্তোলনের সময় দাম অনেকটা পড়ে যায়।
তাছাড়া সংরক্ষণের অভাবে এবং আর্থিক সঙ্কট মোকাবিলা করতে গিয়ে অনেক চাষীই তাদের উৎপাদিত আলু কমদামে বিক্রি করে ক্ষতির মুখে পড়েন। এ সময় আলু চলে যায় মধ্যস্বত্বভোগি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ও হিমাগার মালিকদের হাতে। প্রতি বছর তারা কৃত্রিম আলুর সঙ্কট তৈরি ও বাজারে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে দাম বাড়িয়ে দিয়ে হাতিয়ে নেয় কোটি কোটি টাকা। সাধারণ মানুষ এ সময় বেশি দামে আলু ক্রয় করে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বগুড়া কার্যালয় সূত্র জানায়, চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হওয়া, আলু সংরক্ষনে হিমাগারে উচ্চ মূল্য ব্যায় থেকে রক্ষা, বসতবাড়িতে আলু রাখার জায়গার অভাব এবং নগদ অর্থের প্রয়োজনে আলু চাষীরা প্রতি বছর কম দামে আলু বিক্রি করতে বাধ্য হন। এ অবস্থা উত্তরণের জন্য আলুর উপযুক্ত সংরক্ষণ, প্রক্রিয়া করণ, বহুমুখী ব্যবহার ও বিপণন ব্যবস্থার উন্নয়ন কর্মসূচি হাতে নেয় সরকার।
আরও পড়ুনতারই ধারাবাহিকতায় আলুর বহুমুখী ব্যবহার সংক্ষণ, বিপণন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে অধিক আলু উৎপাদনকারি ১৬টি জেলায় বসতবাড়িতে স্বল্প খরচে ৪৫০টি অহিমায়িত সংরক্ষণাগার মডেল ঘর নির্মাণ এবং আলু চাষীদের উদ্বুদ্ধকরণ, আলু সংরক্ষণ কৌশল প্রদর্শন ও সম্প্রসারনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। উক্ত প্রকল্পের আওতায় গত ২০২৩-২৪ মৌসুমে বগুড়ার ৭টি উপজেলায় ৪০টি মডেল ঘর নির্মাণ করা হয়।
বাঁশ, কাঠ, টিন, সিমেন্টের পিলার, কর্কশীট ও অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহার করে স্বল্প খরচে নির্মিত এসব মডেল ঘরে ৩০ মেট্রিক টন পর্যন্ত আলু সংরক্ষণ করা যাবে। এক্ষেত্রে প্রতিটি মডেল ঘর কেন্দ্রিক ৩০ জন করে স্বল্প ও মাঝারি ধরণের আলু উৎপাদনকারিদের সমন্বয়ে দল গঠন করা হয়েছে।
দলের সদস্যরা ঐ মডেল ঘরে আলু বিনা খরচে তাদের আলু সংরক্ষণ করতে পারবেন। ফলে এসব আলু চাষীরা প্রতি বস্তা হিমাগার ভাড়া ৩৮০ টাকা, লোড আনলোড খরচ ১শ’ টাকা ও ভ্যান ভাড়াসহ লেবার খরচ ৫০ টাকা অর্থাৎ বস্তা প্রতি প্রায় ৫শ’ টাকা ব্যয় থেকে রক্ষা পাবেন।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বগুড়ার কর্মকর্তা মমতা হক বলেন, অধিক আলু উৎপাদনকারি জেলা গুলোতে স্বল্প ও মাঝারি ধরণের আলু উৎপাদনকারি চাষীদের জন্য সরকারি খরচে অহিমায়িত মডেল ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বগুড়ার ৭টি আলু উৎপাদনকারি উপজেলায় ৪০টি মডেল ঘর নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।
তাছাড়া আরও ২৭টি মডেল ঘর নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তাছাড়া স্বল্প খরচে আলু সংরক্ষনের জন্য এসব মডেল ঘর দেখে নিজ খরচে নির্মাণ করতে বেশি উৎপাদনকারি চাষীরা এগিয়ে আসবেন। এতে হিমাগারের উপর নির্ভরতা কমিয়ে নিজেরাই আলু সংরক্ষণ করতে পারবেন।
মন্তব্য করুন