সংগীতসাধক কবি হাছন রাজার জন্মদিন আজ
মফস্বল ডেস্ক: আজ মরমি কবি ও সংগীতসাধক হাসন রাজার ১৭০তম জন্মদিন। ১৮৫৪ সালের ২১ ডিসেম্বর (৭ পৌষ ১২৬১ বঙ্গাব্দ) সুনামগঞ্জের লক্ষণশ্রী পরগণার তেঘরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এই মহান শিল্পী। জমিদার পরিবারের সন্তান হলেও তিনি হয়ে উঠেছিলেন মানবতাবাদী এক কবি, যার সুর ও সৃষ্টিকর্ম আজও মানুষের হৃদয়ে গেঁথে রয়েছে।হাসন রাজার জীবনের নানা দিকেই রয়েছে গভীর বৈচিত্র্য। জমিদার পরিবারের সন্তান হওয়ায় তিনি কৈশোরে বিশাল জমিদারির দায়িত্ব নেন। সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, রামপাশা, লক্ষণশ্রী এবং সিলেটের একাংশ জুড়ে তার জমিদারি বিস্তৃত ছিল। কিন্তু একসময় তিনি বিত্ত-বৈভব আর ক্ষমতার মোহ ছেড়ে এক আধ্যাত্মিক জীবনের দিকে ধাবিত হন। তিনি বুঝতে পারেন, স্রষ্টার অনুসন্ধান বাহিরে নয়, নিজের ভেতরেই।
হাসন রাজা তার গানের মাধ্যমে মানুষের মনের গভীরে স্থান করে নিয়েছেন। ‘আঁখি মুঞ্জিয়া দেখ রূপ রে’, ‘আমি না লইলাম আল্লাজির নাম রে’, ‘লোকে বলে ঘরবাড়ি ভালানা আমার’, ‘গুড্ডি উড়াইল মোরে’—এমন অসংখ্য গান মানুষের মুখে মুখে ফেরে। ১৯০৭ সালে তার ২০৬টি গানের একটি সংকলন ‘হাসন উদাস’ প্রকাশিত হয়। এছাড়াও তার গান বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও হাসন রাজার গানের প্রশংসা করেছেন। ১৯২৫ সালে কলকাতায় এবং ১৯৩৩ সালে লন্ডনে প্রদত্ত বক্তৃতায় রবীন্দ্রনাথ তার গান নিয়ে আলোচনা করেন। এটি প্রমাণ করে, হাসন রাজার সৃষ্টিকর্ম আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও সমাদৃত।
একসময় বিত্তশালী এই জমিদার নিজের সম্পদ জনকল্যাণে দান করেন এবং স্রষ্টার সাধনায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। তার গানে যেমন আধ্যাত্মিক ভাব ফুটে ওঠে, তেমনি মানবতার প্রতি তার গভীর ভালোবাসা প্রতিফলিত হয়। সব ধর্ম ও জাতির বিভেদ অতিক্রম করে তিনি গেয়েছেন মাটি ও মানুষের গান।
১৯২২ সালের ৬ ডিসেম্বর এ মরমি কবি মৃত্যুবরণ করেন। তাকে সুনামগঞ্জের লক্ষণশ্রীতে মায়ের কবরের পাশে সমাহিত করা হয়। মৃত্যুর আগে তিনি নিজেই তার কবর প্রস্তুত করেছিলেন।
আরও পড়ুনকবির জন্মদিনে তার জন্মভিটায় প্রতিষ্ঠিত ‘হাসন রাজা মিউজিয়াম’ একটি পূর্ণাঙ্গ জাদুঘরে রূপান্তরের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মী, পর্যটক ও ভক্তরা। একইসঙ্গে তার গান নিয়ে হাছন উৎসব, গানের বিকৃতি রোধেও কার্যকর উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানান।
মন্তব্য করুন