যেভাবে শিশু কল্পনাকে হত্যা করেছিল তার প্রতিবেশী চাচা নুরজামাল
পাবনা প্রতিনিধি : ৯ বছরের শিশু কল্পনাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছিল তার প্রতিবেশী চাচা নুরুজ্জামান মল্লিক ওরফে নুরজামাল (১৭)। কিন্তু ধর্ষণ চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে শিশুটিকে শ্বাসরোধে হত্যা করে সে। গত দুপুরে পাবনা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) রেজিনূর রহমান।
শিশু কল্পনা হত্যার সাতদিনের মাথায় হত্যার রহস্য উদঘাটন ও জড়িত প্রধান অভিযুক্ত নুরুজ্জামান মল্লিক ওরফে নুরজামালকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত শুক্রবার রাতে চাটমোহর উপজেলার নিজ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শিশু কল্পনা হত্যায় নিজের সম্পৃক্ততা স্বীকার করেছে নুরজামাল।
গ্রেপ্তারকৃত নুরুজ্জামান মল্লিক ওরফে নুরজামাল চাটমোহর উপজেলার চর-মথুরাপুর গ্রামের আনিছুর রহমান মল্লিক এর ছেলে। নিহত কল্পনা খাতুন একই উপজেলার চর-মথুরাপুর গ্রামের মৃত তাজের খাঁ এর মেয়ে। নুরুজ্জামান নিহতের প্রতিবেশী চাচা।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজিনূর রহমান জানান, নিহত শিশু কল্পনা খাতুন (৯) গ্রেপ্তারকৃত নুরজামালের প্রতিবেশী ভাতিজি। তাদের বাড়িও পাশাপাশি। গত ১৩ ডিসেম্বর শুক্রবার রাতে পার্শ্ববর্তী ভাঙ্গুড়া থানাধীন দহপাড়া খানকা শরিফে ইসলামী জালসা ছিল। নুরুজ্জামান মল্লিক ওরফে নুরজামাল জালসায় গিয়ে ঘোরাঘুরির এক পর্যায়ে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে জালসার পার্শ্ববর্তী স্কুলমাঠে গিয়ে ৫০ টাকার গাঁজা কিনে সেবন করে।
গাঁজা সেবন করার পরে শরীর খারাপ লাগায় সে বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। বাড়ি ফেরার পথে স্কুলমাঠের কোনায় নাগরদোলার পাশে কল্পনাকে বসে থাকতে দেখে নুরজামাল। তাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার কথা বলে দু’জন পায়ে হেঁটে রওনা হয়। কিন্তু নুরুজ্জামান মল্লিক ওরফে নুরজামাল বাড়ির রাস্তায় না গিয়ে কল্পনাকে ধর্ষণের উদ্দেশ্যে চাটমোহর উপজেলার পৈলানপুর গ্রামে চাকলারদিয়ার বিলের মধ্যে একটি লিচু বাগানে নিয়ে যায়। এ সময় শিশু কল্পনা তাকে বাড়িতে না নিয়ে কোথায় নিয়ে এসেছে, তাড়াতাড়ি বাড়ি নিয়ে চলো বলে কান্নাকাটি শুরু করে।
আরও পড়ুনতখন লোকজন জেনে যাবে এমন ভয়ে কল্পনা খাতুন এর গলা চেপে ধরে নুরজামাল। এতে শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে কল্পনা। তখন তার পরনের পায়জামা খুলে গলায় ফাঁস দিয়ে আবারো শ্বাসরোধে মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যায় অভিযুক্ত নুরজামাল। মেয়েকে খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে নুরজামালের সাথে দেখা হলে কল্পনার খোঁজ জানতে চান তার মা। কিন্তু নুরজামাল জানায় সে কল্পনাকে দেখেনি।
পরদিন শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে লিচু বাগান থেকে শিশু কল্পনার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় কল্পনার মা তাসলিমা বেওয়া বাদি হয়ে ১৪ ডিসেম্বর চাটমোহর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে অনুসন্ধান শেষে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে অভিযুক্ত নুরুজ্জামান মল্লিক ওরফে নুর জামালকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজিনূর রহমান বলেন, গ্রেপ্তারকৃত নুরজামালকে গতকাল শনিবার আদালতে সোপর্দ করা হয়। বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় হত্যায় নিজের জড়িত থাকার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে সে।
মন্তব্য করুন