সবজির বাজারে স্বস্তি
গত জুলাই ও আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে দেশের নিত্য পণ্যের বাজার ব্যবস্থা স্বাভাবিক গতিতে ফিরতে শুরু করেছে। শীতের পূর্ণ মৌসুম চলছে। বাজারে শীতকালীন সবজির দামও কম। বেশির ভাগ সবজি এখন ৫০ টাকার ভেতরেই পাওয়া যাচ্ছে। অনেক কাল পর বাজারে স্বস্তির দেখা মিলেছে।
শাক-সবজির দাম এখন ক্রেতার নাগালে এসেছে। আমনের ভরা মৌসুমেও বাজারে বাড়ছে চালের দাম। তবে শীতের সবজির সরবরাহ বাড়ায় কমে এসেছে দাম। এতে স্বস্তি বোধ করছেন ক্রেতারা। রাজধানীর রামপুরা বাজারে গত এক সপ্তাহে বস্তা প্রতি চালের দাম ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তাতে খুচরা পর্যায়ে চালের দাম কেজিতে ২ টাকা থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
এর মধ্যে মোটা চালের দাম ২ টাকা বেড়ে ৬০ থেকে ৬৪ টাকায় উঠেছে। স্বর্ণা ও পাইজাম জাতের চাল এ আমন মৌসুমে উঠলেও এসব চালের দাম সামান্য বেড়েছে। চালকল মালিকদের দাবি, ধানের দাম বাড়ায় তারা চালের দাম বাড়িয়েছেন। দেশের বিভিন্ন এলাকায় ধান প্রতি মণ দেড় হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ধানের দাম বাড়ায় চালের দাম বেড়ে গেছে। বাজারে মিনিকেট চাল ৭২-৭৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। প্রতি কেজি নাজিরশাইল জাতের চালের দাম উঠেছে ৮০ টাকা পর্যন্ত। লিটারে ৮ টাকা বাড়িয়ে সয়াবিন তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করেছে সরকার।
এখন বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ও পাড়া মহল্লার দোকানের অধিকাংশে বাজার পরিস্থিতি নিম্নমুখী লক্ষ্য করা গেছে। দীর্ঘদিন অস্থিতিশীল থাকা পেঁয়াজের বাজারে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। পেঁয়াজের দর বেশ কমেছে। এক-দেড় মাস আগে দেশি মানের পেঁয়াজের কেজি ছিল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। এখন এর অর্ধেক দামেও পেঁয়াজ কিনতে পারা যাচ্ছে। এ ছাড়া দেশি হাইব্রিড পেঁয়াজের কেজিতে ৩০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা আর আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা দরে।
দেশি নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে। দাম কমেছে আলুরও। নতুন আলুর দাম ১২০ টাকা থেকে কমে ৬০ টাকায় নেমে এসেছে। এ ধরনের নতুন আলুর আধিক্যের কারণে পুরনো আলুর দামও কেজি প্রতি ১০ টাকা কমে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে শীতের সবজির সরবরাহ বেড়েছে। ফলে কমতে শুরু করেছে সব ধরনের সবজির দর। গড়ে সবজির কেজি কেনা যাচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে। তাছাড়া ডিমের দামও স্থিতিশীল রয়েছে।
আরও পড়ুনফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা প্রতি ডজন। সপ্তাহ ব্যবধানে সব ধরনের সবজি কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। রাজধানীর দুই বাজার শেওড়া পাড়া ও তালতলা বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। এসব বাজারে শিম কেজিতে ২০ টাকা কমে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ফুলকপি প্রতিটি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০ টাকা, লাউ ৪০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাকা টমেটো কেজিতে ২০ টাকা কমে ১০০ টাকা, গাঁজর ৭০ থেকে ৮০ টাকা, মুলা ৩০ টাকা, খিরা ৬০ টাকা ও শসা ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেজিতে ২০ টাকা কমে নতুন আলু ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বেগুন ৫০ টাকা, করলা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, পটোল ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৭০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, কচুর লতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ঝিঙ্গা এবং কাঁচা মরিচ ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
তবে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে ব্রয়লার সহ সবধরনের মুরগির বাজারে। কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা করে বেড়েছে মুরগির দাম। শুক্রবার প্রতি কেজি ব্রয়লার ২০০-২১০ টাকা, লেয়ার ২৯০-৩০০ টাকা, সোনালি ২৯০-৩০০ এবং দেশি ৫৫০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ অবস্থায় সবজির দাম নিয়ে স্বস্তির কথা জানিয়েছেন। এদিকে বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে পর্যাপ্ত শীতের সবজি আসতে থাকায় দাম কমেছে। আগামীতে আরও কমতে পারে বলে আশা তাদের।
অন্তর্বর্তী সরকারকে বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর মনিটরিংয়ে দেখা যাচ্ছে। অবৈধ বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পাশাপাশি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো এ ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। এটা আপামর জনসাধারণের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা। আশা করছি, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার অবৈধ বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে।
মন্তব্য করুন