ভিডিও বুধবার, ০১ জানুয়ারি ২০২৫

থেমে নেই সড়কে মৃত্যু ঘটনা

থেমে নেই সড়কে মৃত্যু ঘটনা। প্রতীকী ছবি

একের পর এক সড়কে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছেই। শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, সড়ক নিয়ে নানা পরিকল্পনা, দুর্ঘটনার জন্য নতুন শাস্তির বিধান, চালক ও নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টাসহ বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের পরও কোনো কিছুই যেন রোধ করতে পারছে না সড়ক দুর্ঘটনা। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, সড়ক পথে যেন মানুষের নিরাপত্তা বলে কিছুই নেই। প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে অত্যন্ত নির্মমভাবে। গতকাল পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেছে।

বগুড়ায় শনিবার ট্রেনে কাটা পড়ে এবং গাবতলী ও কাহালু উপজেলায় পৃথক দুর্ঘটনায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া সারাদেশে বিভিন্ন স্থানে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগের দিন ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজায় বাসের ধাক্কায় নিহত হয়েছেন নছিমনের চার শ্রমিক, কুমিল্লার দাউদকান্দিতে মহাসড়কে বাইক থেকে ছিটকে এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে, খুলনার ডুমুরিয়ায় ট্রাকের ধাক্কায় পিষ্ট হয়ে নিহত হয়েছেন এক গৃহবধূ এবং দিনমজুরের। পার্বতীপুরে পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় এক যুবক ও যুবতী নিহতের ঘটনা ঘটেছে।

বিভিন্ন জরিপ ও গবেষণা থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ৬৫ জন এবং প্রতি বছর গড়ে ২৪ হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়। প্রতি বছর ৩ লক্ষাধিক মানুষ আহত এবং প্রতিবন্ধী হয় প্রায় ৮০ হাজার মানুষ। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ বছরে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬০ হাজার ৯৮০টি, যাতে ১ লক্ষ ৫ হাজার ৩৩৮ জন নিহত এবং ১ লক্ষ ৪৯ হাজার ৮৪৭ জন আহত হয়েছে। এ সকল পরিসংখ্যান সড়কের বেহাল পরিস্থিতির কথাই আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়।

দেশের আনাচে-কানাচে নির্মিত নতুন নতুন রাস্তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মোটর যান। সেই সঙ্গে বাড়ছে জনসংখ্যা। যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি চালকের সংখ্যাও বাড়ছে। কিন্তু কারা যানবাহনের স্টিয়ারিং ধরছে সে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হেলপার কিশোরটিও চালক হয়ে উঠছে। শুধু গাড়ি চালানো শিখলেই তাকে চালক বলা যাবে না। ট্রাফিক আইন ও সিগন্যাল, সড়কের সংকেতগুলো সম্পর্কেও একজন চালকের সম্যক জ্ঞান থাকতে হবে। অভিযোগ আছে, টাকার বিনিময়ে প্রশিক্ষণবিহীন অনেকের হাতেই লাইসেন্স ধরিয়ে দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন

বিভিন্ন কারণেই সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটে। চালকদের বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালানোর পাশাপাশি বিপজ্জনক ওভারটেকিং, রাস্তাঘাট নির্মাণে ত্রুটি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, গাড়ি চালানো অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোনের ব্যবহার এসব কারণেই দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। আবার যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতাও অনেক দুর্ঘটনার কারণ। এ বিষয়গুলো নিয়ে এখনই না ভাবলে, সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে না। আমরা মনে করি, সড়ক-মহাসড়কে ট্রাফিক শৃঙ্খলা বাড়ানো কোনো অসম্ভব কাজ নয়। এ জন্য বেপরোয়া যান চালানো বন্ধের উদ্যোগ নিতে হবে। লাইসেন্সবিহীন চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন যেন রাস্তায় নামতে  না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, সড়ক দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এখন মনে হয়, যেন মানুষের জীবন কত তুচ্ছ। দুর্ঘটনায় ঝরে যাচ্ছে একেকটি তরতাজা প্রাণ। কোমলমতি শিশুরাও রক্ষা পাচ্ছে না। সঙ্গত কারণেই সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া অপরিহার্য বলেই প্রতীয়মান হয়। এ কথাও মনে রাখতে হবে, যোগ্য ও দক্ষ লোকেরাই যেন গাড়ি চালানোর লাইসেন্স পায় তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব বিআরটিএর। যদি যোগ্য লোককে লাইসেন্স দেয়া হয়, তা হলে সড়ক দুর্ঘটনা কমে আসবে এমন আশা করা অযৌক্তিক নয়।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, দক্ষ চালক নিশ্চিত করার পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনা যেসব কারণে ঘটছে সেগুলোকে সামনে রেখে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। গাড়ির ফিটনেস, সড়ক-মহাসড়কের পরিস্থিতি, যত্রতত্র ওভার টেকিংসহ সামগ্রিক বিষয়গুলোকে আমলে নিয়েই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারহীনতার সংস্কৃতির অবসান ঘটাতে হবে। কড়া হাতে সব নিয়ন্ত্রণ করলে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ অনেকটা সম্ভব। ঝুঁকিপূর্ণ সব চালক ও গাড়ি উচ্ছেদ করা গেলে, সড়কে প্রয়োজনীয় সংস্কার নিশ্চিত হলে, আইনের প্রয়োগ কঠোর হলে সড়কে নৈরাজ্য কমে আসবে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উত্তরাঞ্চলে নানা আয়োজনে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

নওগাঁর আত্রাইয়ে ভ্যানচোর আটক

বগুড়ার শেরপুরে ইলেকট্রিক সামগ্রীর দোকানে আগুন

বগুড়া বারের তিন আইনজীবীর মৃত্যুতে ফুলকোর্ট রেভোরেন্স

নাটোরের বড়াইগ্রামে থার্টিফাস্ট পালনকালে ছাদ থেকে পড়ে স্কুলছাত্রের মৃত্যু

গাজীপুরে নিখোঁজের দুই দিন পর শিশুর লাশ উদ্ধার