বছরজুড়ে লাগামহীন ছিল নিত্যপণ্যের বাজার
শাওন রহমান : গেল বছরে এমন কোনো নিত্যপণ্য নেই যার দাম বাড়েনি। বিশেষ করে চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, তেল কিনতে গিয়ে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস ওঠে। সব মিলে বছরের প্রায় সময়জুড়েই বাজার ছিল অস্থির। আর আলু ও ডিম দেশের বাজারে ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামের রেকর্ড গড়ে। আবার দাম বাড়িয়ে বাজারে পাওয়া যায়নি সয়াবিন তেলও।
গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলেও নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি ছিল না বছরজুড়েই। সরকার পরিবর্তনের আগে-পরে বাড়তি দামের উত্তাপে হাত পুড়ছে ক্রেতাদের। দাম কমানোর উদ্যোগ হিসেবে শুল্ক কমালেও আগের মতোই সিন্ডিকেটের থাবায় ছিল বাজার। এদিকে, জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়লেও বাড়েনি মজুরি। তাই সাধারণ মানুষের কষ্ট ছিল বছরজুড়েই। বেশি দামের কারণে প্রতিনিয়তই প্রতারিত হতে হয়েছে ভোক্তাদের।
বছরের শুরু থেকেই খাদ্যে ছিল উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বেড়েছে বছরের শেষেও। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, এপ্রিলে দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছালেও বছরের শেষে এটি দাঁড়ায় ১৪ শতাংশের কাছাকাছি। কোনো কাজে আসেনি সরকারের নানা আশ্বাস। এতে নাভিশ্বাস অবস্থা ছিল ভোক্তাদের। জুলাইয়ে ছাত্র আন্দোলন এবং রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আগস্ট-সেপ্টেম্বরের বন্যা ও অতিবৃষ্টির প্রভাবে বাজারে অস্বাভাবিক হারে বাড়ে শাকসবজির দাম, কাঁচামরিচের দামও ছিল চড়া।
যদিও বছর শেষে শীত মৌসুমে দাম কিছুটা কমে। বছরের শুরু থেকেই লাগামহীন ছিল আলুর বাজার। মাঝামাঝিতে দাম কিছুটা কমলেও অক্টোবরে আবারও বাড়ে। দাম নিয়ন্ত্রণে আমদানি শুল্ক পুরোপুরি তুলে নেয় এনবিআর। এছাড়া টিসিবি’র খোলা ট্রাকে বিক্রির পরও আলুর কেজি ৮০ টাকা উঠে নতুন ইতিহাস তৈরি করে। বছরজুড়ে অস্থির ছিল মুরগির ডিমের বাজার।
আরও পড়ুনপ্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিম কিনতে হয় প্রায় ২০০ টাকায়। বিদেশ থেকে আমদানি, অভিযান ও দাম বেঁধে দিলেও নিয়ন্ত্রণে আসেনি, তাতেই হয়ে যায় নতুন দামের রেকর্ড। আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতেই হিমশিম খেতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করার পর থেকে বাজারে অস্থিরতা ছিল ভয়াবহ। মে মাসে রফতানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর কিছুটা দাম কমলেও জুন-জুলাইতে আবারও দাম বাড়ে।
নভেম্বরের শেষে পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকার ওপরে থাকলেও আমদানির সুবিধায় কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে। সারা বছর ভোজ্যতেলের বাজার স্থিতিশীল থাকলেও নভেম্বরের শুরুতে বেড়ে যায় খোলা তেলের দাম। বাজার থেকে উধাও বোতলজাত তেলও। পরে ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে লিটারে ৮ টাকা বাড়ানো হলেও সংকট কাটেনি, স্বাভাবিক হয়নি সরবরাহ।
বছরজুড়ে যেভাবে বেড়েছে জীবনযাত্রার ব্যয়, সেভাবে বাড়েনি মজুরি। বাজারে গিয়ে তাই আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসেব মেলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে নিম্ন থেকে উচ্চ-মধ্যবিত্তকে।
মন্তব্য করুন