বগুড়ার শাজাহানপুর হাসপাতালে রোগীদের নিম্নমানের পথ্য সরবরাহ
নাসিমা সুলতানা ছুটু/ সাজেদুর রহমান সবুজ : বগুড়ার শাজাহানপুরের ৩১ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তিকৃত রোগীদের নিম্নমানের পথ্য সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি ওই হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদের হাসপাতাল থেকে ঠিকমত বিছানার চাদর ও বালিশের কভারও সরবরাহ করা হয় না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশেষ করে সকালের নাস্তায় ডিম ও কলার সাথে দুর্গন্ধ যুক্ত পাউরুটি দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা।
শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পঁয়ষট্টি বছর বয়স্ক শাজাহান আলী গত ২৯ ডিসেম্বর ভর্তি হয়েছেন ওই হাসপাতালে। খরনা ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের বাসিন্দা শাজাহান আলী গত ৮দিন ধরে হাসপাতালে ভর্র্তি থেকে তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালের চিকিৎসার নিয়ে তার কোন অভিযোগ না থাকলেও হাসপাতাল থেকে সরবরাহকৃত খাবারের মানসহ অন্যান্য বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে। শাজাহান জানান, সকালের নাস্তায় দুর্গন্ধযুক্ত বাসি পাউরুটি দেওয়া হচ্ছিল।
এছাড়া দুপুরে ও রাতে যে খাবার দেওয়া হয় সেটির মানও তেমন ভালো নয়। একই রকম অভিযোগ করেন আলাউদ্দিন (৬০) নামে অপর এক রোগী। তীতপুর গ্রামের আলাউদ্দিন বুড়ির ডালের কাটাবিদ্ধ পা’ নিয়ে ৫দিন আগে হাসপাতালে ভর্তি হন।
দুইদিন আগে অপারেশন করে তার পায়ের কাটা বের করা হয়েছে। আলাউদ্দিন জানান, হাসপাতালে দুইদিন আগেও বাশি শক্ত পাউরুটি তার সঙ্গে চিনি, ডিম দেওয়া হতো। তবে দুইদিন থেকে সকালের নাস্তায় দুইপিস পাউরুটি, একটি কলা এবং একটি সেদ্ধ ডিম দেওয়া হচ্ছে। তবে দুপুরের ও রাতের খাবারে সিলভার কার্প মাছের ঝোল এবং সবজি দেওয়া হচ্ছে। তবে খাবারের মান তেমন ভালো না।
নিম্নমানের পথ্য নিয়ে দুইদিন আগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষর সাথে পথ্য সরবরাহকারী ঠিকাদারের প্রতিনিধির বাকবিতন্ডা হয়। এরপর থেকে রোগীরা সরকার নির্ধারিত বিশেষ করে সকালের নাস্তায় ঠিকমত পথ্য পাচ্ছেন। পথ্য সরবরাকারী ভারপ্রাপ্ত ঠিকাদার শহিদুল আক্তার বাবু বলেন, শাজাহানপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পথ্য সরবরাহকারী ঠিকাদার ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা রফিনেওয়াজ খাঁন রবিন। তার কাছ থেকে বাকিতে পথ্য নিয়ে হাসপাতালে দিতেন।
৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর রবিন গা ঢাকা দেন। এমতাবস্থায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুরোধে তিনি পথ্য সরবরাহ করছেন। বাবু আরও বলেন, সব জিনিসের দাম বাড়লেও হাসপাতালের ভর্তিকৃত রোগীদের পথ্যের জন্য বাজেট বাড়ানো হয়নি। তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুরোধে এক প্রকার ভুর্তকি দিয়েই তিনি খাবার সরবরাহ করছেন।
আরও পড়ুননাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই হাসপাতালে কর্মরত এক স্টাফ জানান, দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালের রোগীদের নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। সকালের নাস্তায় আগে মাঝারি সাইজের একটি পাউরুটি, সঙ্গে ডিম ও কলা দেওয়া হতো। এছাড়া দুপুরের খাবারে একদিন মাছ তো একদিন মুরগির মাংস দেওয়ার নিয়ম। কিন্তু বেশ কিছুদিন থেকে সকালে বাশি শক্ত পাউরুটি, চিনি এবং একটি ডিম অথবা কলা দেওয়া হয়। কখনও কখনও পাউরুটির বদলে সকালের নাস্তায় চিড়া দেওয়া হয়।
অথচ চিড়া শুধু ডায়রিয়া রোগীদের দেওয়ার নিয়ম। দুপুরে এবং রাতে একদিন মাছ দিলে পরের দিন মুরগির মাংস দেওয়ার নিয়ম থাকলেও বেশ কিছুদিন থেকে শুধু সিলভার কার্প মাছ দেওয়া হচ্ছে। আলুর দাম বেড়ে যাওয়ায় দীর্ঘদিন থেকে সবজিতে আলু বাদ দিয়ে যে সবজি সস্তা শুধু সেটিই দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান। এছাড়া রোগীদের ঠিকমত বিছানার চাদর ও বালিশের কভারও সরবরাহ করা হয় না বলে তিনি বলেন।
এই বিষয়ে ওই হাসপাতালের পথ্য ইনচার্জ আতিয়া নাছরিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, একজন রোগীর প্রতিদিন বরাদ্দ ১৭৫ টাকা। এই টাকার মধ্যে তাকে তিনবেলার খাবার দেওয়া হয়। মাঝে দুই একদিন খাবার নিয়ে একটু ঝামেলা হয়েছিল। আমরা ঠিকাদারকে নিষেধ করার পর সেটি ঠিক হয়ে গেছে। এই ব্যাপারে ওই হাসপাতালের প্রধান সহকারী সাইফুল ইসলাম জানান, নিম্নমানের খাবার সরবরাহের বিষয়টি ঠিক নয় তবে হাসপাতালের বেডশীটগুলো ধোয়ার জন্য ধোপার কাছে ছিলো।
কুয়াশার কারণে ধোপার দিতে একটু দেরি হয়েছে। এখন ঠিক হয়ে গেছে। শাজাহানপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মোতারব হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়গুলো সম্পর্কে তার জানা নেই। তিনি জেনে ব্যবস্থা নেবেন।
মন্তব্য করুন