ব্রহ্মপুত্রে অবৈধ ড্রেজারের মাধ্যমে বালি উত্তোলন
কুড়িগ্রামের চিলমারীতে হাজার হাজার গ্রামসহ ফসলি জমি চলে যাচ্ছে নদীগর্ভে
চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি : চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে অবৈধভাবে চলছে বালি উত্তোলন। বছরে প্রায় ৮ কোটি টাকার বালি চলে যাচ্ছে সিন্ডিকেটের পকেটে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বছরের পর বছর বালি লুটের সাথে সাথে বেড়েই চলছে অবৈধ ড্রেজারের সংখ্যা।
নিয়ম নীতিকে তোয়াক্কা না করেই ব্রহ্মপুত্রের চিলমারীর শতাধিক পয়েন্টে অবৈধ ড্রেজারের মাধ্যমে বালি উত্তোলনের ফলে নদীর দিক পরিবর্তন হয়ে একাধিক স্রোত তৈরি হয়ে গ্রামসহ হাজার হাজার একর জমি চলে যাচ্ছে নদীগর্ভে। প্রশাসনের নাকের ডগায় বছরের পর বছর বালি লুটের মহাউৎসব চললেও অজ্ঞাত কারণে প্রশাসন দেখেও যেন দেখছে না।
মাঝে-মধ্যে লোক দেখানো অভিযান চালিয়ে দায়িত্ব সেরে নিচ্ছেন দায়িত্বরতরা। সেই সুযোগে বালুখেকোরা লুটে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকার বালি, অজ্ঞাত কারণে সঠিক পদক্ষেপ নিচ্ছে না প্রশাসন। কতিপয় বালি ব্যবসায়ী চিলমারীর স্থানীয় উন্নয়নের নামে বালি উত্তোলনের কথা বললেও বছরে লাখ লাখ ঘনফুট বা সিএফটি বালি চিলমারীর বাইরে বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
জানা গেছে, কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার মধ্যদিয়ে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র থেকে বছরের পর বছর অবৈধ ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের উৎসব শুরু করে একটি সিন্ডিকেট। পরে একটিতে তৎকালীন সরকারের আমলে নামধারী দলীয় নেতারা জড়িয়ে পড়েন এবং ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে চালান বালি বিক্রি ও উত্তোলনের উৎসব।
ধীরে ধীরে ২/১টি ড্রেজার থেকে অর্ধশতাধিক অবৈধ ড্রেজার নেমে পড়ে ব্রহ্মপুত্রের বুকে। শুরু হয় বালি উত্তোলন ও বিক্রির মহাউৎসব। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কিছুদিন বন্ধ থাকলেও পূর্বের বালু ব্যবসায়ীদের সাথে মিলে আরেকটি মহল নেমে পড়েছে এবং বিভিন্ন ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে আবারো অবৈধভাবে বালু উত্তোলনসহ চালিয়ে যাচ্ছে বালু ব্যবসা। অর্ধশতাধিক ড্রেজার ব্রহ্মপুত্রের বুকে চালায় তান্ডব।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন পয়েন্টে শ্যালো মেশিন ছাড়াও ব্রহ্মপুত্রের বুকের বিভিন্ন স্থানে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি। ফকিরেরহাট এলাকার মনজু বলেন, একে তো অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে তার সাথে নদী ভাঙনরোধে রাখা ব্লক দিয়ে বালু খেকোরা নিজেদের ব্যবসার জন্য রাস্তা তৈরি করেছে।
আরও পড়ুনআর বাঁধের সড়কও শেষ করছে। তাই আমি ৯৯৯ ফোন করি। কিন্তু কোন ফল না পেয়ে চিলমারী থানায়ও জানাই। এতে কোন ফল হয় না। বকুল নামে আর এক ব্যক্তি জানান, এই বালু খেকোদের এতো শক্তি তারা তো দিনরাত বালু তোলে আর বিক্রি করে এদিকে ভাঙন রোধের পিচিং দেবে যাচ্ছে, কেউ দেখে না।
সূত্র মোতাবেক প্রতি মাসে প্রায় ৫০ থেকে ৮০ লাখ টাকার বালি বিক্রি হয় চিলমারী বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে। আর প্রতি ঘনফুট বা সিএফটি বালি বিক্রি হচ্ছে ৮ থেকে ১০ টাকা, যদিও তা তুলতে সিএফটি প্রতি ২ থেকে ৪টাকা খরচ পড়ছে। প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার বালু বিক্রি হলেও সরকারের রাজস্ব ভান্ডার একেবারেই শূন্য থাকছে।
চিলমারী ইউনিয়নের বাসীন্দারা জানান, ড্রেজারের মাধ্যমে বালি উত্তোলন করায় গত বছর বর্ষার সময় শত শত বাড়িঘরসহ হাজার হাজার একর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। অভিযোগ করেও লাভ হয়নি। বালু বিক্রির সাথে দলীয় কেউ জড়িত নেই বলে জানান উপজেলা বিএনপি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু হানিফা।
মুঠোফোনে চিলমারী বন্দর থানার কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আইসি ইমতিয়াজ কবির জানান, আমাদের জনবল কম এবং যানবাহন না থাকায় সব স্থানে অভিযান চালানো সম্ভব হচ্ছে না। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সবুজ কুমার বসাক বলেন, বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আমরা বালুমহালের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছি, আশা করি তা দ্রুত বাস্তবায়ন হবে।
মন্তব্য করুন